আকাট ঃ যা কাটা যায় না বা খণ্ডন করা যায় না৷ সংস্কৃতে ‘‘কাটা-র যথার্থ ক্রিয়া হচ্ছে ‘কর্ত্তন’, প্রাকৃতে ‘কট্টন’৷ এই ‘কট্টন’ থেকেই লৌকিক সংস্কৃত ‘অকাট্য’ শব্দ তৈরী হয়েছে৷ ঠিক যেমনভাবে ‘মীন’ শব্দটি, ‘পল্লী’ (‘গ্রাম’ অর্থে) শব্দটি গৃহীত হয়েছে, যেমনভাবে গৃহীত হয়েছে ‘রুজ্জু’, ‘গুৰাক্’ ‘পেরুকম্’ প্রভৃতি৷ সংস্কৃতে মুর্খদের সাধারণতঃ কয়েকটি ভাগে বিভাজিত করা যায়৷ তারা হচ্ছে আকাট মূর্খ ......গণ্ডমূর্খ.........নীরেট মূর্খ...........হস্তীমূর্খ........কেউ কেউ গো-মূর্খও ৰলে থাকেন৷ ‘গণ্ডমূর্খ’ মানে মূর্খতা যার গণ্ডদেশ পর্যন্ত পৌছে গেছে, যে কোন মুহূর্তে মুখ বিবর দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে৷ ‘নীরেট’ মানে যার ভেতরটা ভরাট রয়েছে, যা ফাঁপা নয় অর্থাৎ নীরেট মুর্খ মানে যার মুর্খতা দৃঢ়ভিত্তিক৷ অনেকে ভাবেন, হাতি যত ৰড় জন্তু বুদ্ধিটা তার তত বেশী নয়৷ তাই তারা অনেকে মূর্খকে হস্তীমূর্খ ৰলে থাকেন৷ কিন্তু কথাটা সর্বাংশে সত্য নয়৷ হাতীর কোন কোন গোষ্ঠীর বুদ্ধি কম হলেও সব গোষ্ঠীই অল্পবুদ্ধি নয়৷ বরং কোন কোন গোষ্ঠীর বুদ্ধি যথেষ্ট প্রখর৷ যদিও হাতীরা প্রাচীনকালের ম্যামথ বা ঐরাবতের ৰংশধর তবুও বর্তমান পৃথিবীতে সমস্ত হাতীকে এক শ্রেণীভূক্ত করা যায় না৷ আফ্রিকান হাতীদের উচ্চতা যথেষ্ট কিন্তু তুলনামূলক বিচারে মাথা ছোট, বুদ্ধি কম ও পোষ মানে না৷ ভারতীয় গোষ্ঠীর Indica group) হাতীর একটি শাখা কিন্ত আফ্রিকান হাতীর চেয়ে কিছুটা ছোট, মাথা ৰড়, তার মানে বুদ্ধিতে অতি প্রখর না হলেও মোটামুটি বিচারে বুদ্ধি রাখে৷ এই হাতীই ভারতের অধিকাংশ স্থানে পাওয়া যায়৷ পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ভুটান, নেপাল থেকে শুরু করে দক্ষিণে কেরল পর্যন্ত এই প্রজাতির হাতীর বাস৷ ৰাঙলার ৰাঁকুড়া পুরুলিয়া জেলাতে ও ওড়িষাতেও এরাই থাকে৷ পালামু-র বেতলা নির্ভয়কাননে sanctuary) এরাই আছে৷ আবার কেরলের তেকড়ী নির্ভয়কাননে এই প্রজাতির হাতীর বাস৷’’ এককালে কর্ণাটকেও প্রচুর পরিমাণে এই হাতী পাওয়া যেত--আজও পাওয়া যায়৷ ভারতীয় হাতীর অপর প্রজাতি অর্থাৎ ছাই রঙের কিছুটা ক্ষুদ্রাকৃতি হাতী পাওয়া যায় উত্তর অসম, কাছাড়, মণিপুর ও ত্রিপুরা অঞ্চলে৷ এরা বুদ্ধিতে অত্যন্ত প্রখর, তবে সহজে পোষ মানতে চায় না৷ এককালে ত্রিপুরার অরণ্যে দলে দলে এই হাতী বিচরণ করত৷ ত্রিপুরা-পাঠান ও ত্রিপুরা-মোগলের সংগ্রামে যখন ত্রিপুরারাজ পরাস্ত হতেন তখন তাঁরা দিল্লী দরবারকে এই প্রজাতির হাতী উপঢৌকন দিয়ে সন্ধি করে নিতেন৷ আমরা পোষা হাতী হিসেৰে যাদের দেখি এরা সে হাতী নয়৷ ভারতীয় গোষ্ঠীর তৃতীয় প্রজাতির হাতী হচ্ছে শ্বেত হস্তী৷ আসলে শ্বেত হস্তী বলে কোন হাতি নেই৷ এই ছাই রঙ-এর হাতির মধ্যে একটি উপশাখার রঙ আরও একটু শাদাটে৷ এরা সংখ্যাতেও খুৰ কম৷ এরা খুব পবিত্র জীব রূপে সম্মানিত হয়ে থাকে! তা যাই হোক, কাউকে হস্তীমূর্খ বলা কতটা সঙ্গত তা তোমরাই ভেবে দেখো৷ পশু মাত্রেরই বুদ্ধি মানুষের চেয়ে কম৷ সুতরাং অল্পবুদ্ধি মানুষকে অনেকে পশুর সঙ্গে তুলনা করে থাকেন৷ তাই অল্পবুদ্ধি মানুষকে গো-মুর্খও বলা হয়ে থাকে৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)
Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার