শোষণমুক্ত নতুন বিশ্ব কোন পথে

লেখক
মনোজ দেব

যে প্রশান্ত সরলতা জ্ঞানে সমুজ্জল,

 স্নেহে যাহা রসসিক্ত, সন্তোষে শীতল

 ছিল তাহা ভারতের তপবন তলে

 বস্তু ভারহীন মন সর্ব জলে-স্থলে

 পরিব্যাপ্ত করে দিত উদার কল্যাণ,

 জড়ে জীবে সর্বভূতে অবারিত ধ্যান

 পশিত আত্মীয় রূপে

ভারতবর্ষ যেদিন থেকে তপবনের সেই সাধনা, সেই নিরাসক্ত কর্ম ত্যাগ করে ভোগ সর্বস্ব জীবনের দিকে ছুটে চলেছে সেদিন থেকে তার অধঃপতনের শুরু তার কর্ম এষণাকে গ্রাস করেছে লোভ-লালসা ধর্মের নামে  ভাব-জড়তা ও কুসংস্কারের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে শক্তিদম্ভ স্বার্থ লোভ গ্রাস করেছে জীবনকে বিশ্বমানব বন্ধনের ঐক্যসূত্র ত্যাগ করে বিভেদের বীজ রোপন করে চলেছে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন---ধর্মের যোগ যে সকলের সঙ্গে এই সত্যটিকে নানা ধ্যানের দ্বারা,স্মরণের দ্বারা, কর্মের দ্বারা মনের মধ্যে বদ্ধমূল করে দেওয়া এই বোধ হারিয়ে মানুষ আজ বিপথগামী তাই সমাজের সর্বস্তরে হিংসা বিদ্বেষ অনৈক্য বাসা বেঁধেছে অপরদিকে মরণব্যাধি ও অর্থনৈতিক মহামন্দা সমাজে মহা বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

আনন্দমার্গের উদার অসাম্প্রদায়িক ও বাস্তবধর্মী বৈপ্লবিক জীবনাদর্শ মানব সমাজকে এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে মানুষের সামনে অন্য কোন পথ নাই সব ভেদ বিদ্বেষ হিংসা ভুলে মানুষ আজ আনন্দমার্গের উদার অসম্প্রদায়িক আদর্শকে গ্রহণ করছে আনন্দমার্গ দর্শনের প্রবক্তার ভাষায়আজ জাতীয়তাবাদের জীর্ণ প্রাচীর গুলি খসে খসে পড়তে শুরু করেছে উদারমুক্ত  বন্ধনহীন বিশ্ব-দিগন্তের  অসীমে আজকের নব জাগরিত মানুষ অখণ্ড মানবসমাজে মঙ্গল ঘট স্থাপন করতে চায় পৃথিবীর সব দেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মিলনের রাখি বেঁধে একসাথে, এক সুরে, এক হৃদয়ে বলতে চায়।

জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে

সে জাতির নাম মানুষ জাতি

একই পৃথিবীর স্তন্যে পালিত

একই রবি-শশী মোদের সাথী

এই অভেদের সুর, এই অখণ্ড ঐক্যের  এমন পরিপূর্ণ ঔদার্যের আহবানই মানবাত্মার বাণী--- মনুষ্যত্বের শাশ্বত পরিচয়।

মনুষ্যত্বের এই পরিচয় ও মানবাত্মার অখণ্ড ঐক্যের আহ্বান জানাতেই আনন্দমার্গ ছুটে চলেছে বিশ্বের দেশে দেশে শুধু অখণ্ড ঐক্য আহ্বান জানাতেই আনন্দমার্গ ছুটে চলেছে বিশ্বের দেশে দেশে শুধু অখণ্ড ঐক্য নয়, অর্থনৈতিক মহামন্দা, কোভিড ১৯ মহা সংক্রমণ বিশ্বে যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তা থেকে পরিত্রাণের পথ আনন্দমার্গ দেখাবে।

পুঁজিবাদী আগ্রাসন ও সর্বগ্রাসী শোষণের বিশ্বায়ন এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ

আনন্দমার্গ দর্শনের সামাজিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউট যেমন পুঁজিবাদী আগ্রাসন ও  অর্থনৈতিক মহামন্দা থেকে সমাজ রুখে  দেবে, তেমনি বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে ক্ষুধার অন্ন, পরনের বস্ত্র , শিক্ষার আলো, চিকিৎসার সুব্যবস্থা ও বাসস্থানের উপকরণ আবার আনন্দমার্গের আদর্শ জীবন ধারা সমাজকে, মানুষকে মহাসংক্রমণের ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখবে শোষণের বিশ্বায়ন থেকে মানুষকে মুক্ত করে মানব মনীষার সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বভাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে আনন্দমার্গ আধ্যাত্মিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে গড়ে উঠবে সর্ব শোষণমুক্ত, সর্ব কলুষমুক্ত অখণ্ড মানব সমাজ।

প্রসঙ্গত বলি আমরা বাঙালী সংগঠনের উদ্দেশ্য এটাই তাই তথাকথিত সংকীর্ণ জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক ভাবধারার গঠিত দলগুলির সঙ্গে আমরা বাঙালীর তুলনা  করলে মহাভুল হবে।

ভৌগোলিক দিক থেকে পৃথিবী যেমন কোথাও বরফাচ্ছাদিত মেরু প্রদেশ, কোথাও ধূসর মরুভূমি, কোথাও অশান্ত সমুদ্র, আবার নদী বিধৌত পলি দ্বারা গঠিত উর্বর সমভূমি।

এই ভৌগোলিক বৈচিত্র্য মানুষের ভাষা, কৃষ্টি, সংসৃকতি পোশাক-পরিচ্ছদ, আহার, আচার-আচরণ, স্বভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব ফেলেছে গড়ে উঠেছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট এক একটা জনগোষ্ঠী তাই সামাজিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের সময় এই জনগোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে তবেই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও শোষণমুক্ত মানব সমাজ গঠন সম্ভব হবে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন---

এই বৃহৎ সত্তার মধ্যে একটা ক্ষুদ্র সত্তা আছে, তাকে বলা হয় জাতিক সত্তা  মানুষকে মানুষ তুলবার ভার এই জাতিক সত্তার উপর।

পুঁজিবাদী ও ফ্যাসিস্ট শোষক জনগোষ্ঠী গত বৈশিষ্ট্যগুলি ধবংস করে মানুষকে অমানুষ করে শোষণের  যাঁতাকল চালিয়ে যায় প্রাউটের শোষণমুক্তির সমাজ আন্দোলন সেই শোষক কুকুরের উপযুক্ত মুগুর আমরা বাঙালী তেমনি একটি মুগুর ---যা শুধু বাঙলায়  নয়, বিশ্বের সমস্ত শোষিত নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠীকে এক আদর্শের ছত্রছায়ায় এনে শোষণমুক্ত এক মানব  সমাজ গঠন করবে তাই আমরা বাঙালী কোন বিচ্ছিন্নতা নয়, সংকীর্ণতা নয়, প্রাদেশিকতা নয়, শোষণমুক্ত মানব সমাজ গঠনের, নোতুন বিশ্ব গঠনের প্রথম সোপান আমরা বাঙালী।