‘‘পরিত্রানায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষৃকতাম্৷
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে৷’’
মানবতা যখন এক অত্যন্ত বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে, ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা, বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি অর্থনীতি রাষ্ট্রনীতি-সমাজ জীবনের সর্বস্তরে যখন গ্লানি দেখা দেয়, সর্বস্তরেই অধর্মের প্রার্দুভাব দেখা দেয়, সেই অধর্মের হাত থেকে গ্লানির হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া মানুষের সাধ্যের বাইরে, তখনই পরমপুরুষকে অবতীর্ণ হতে হয় ধরাধামে অধর্মের হাত থেকে অশুভ শক্তির হাত থেকে সমাজকে পরিত্রাণ করতে৷
সমাজের সর্বস্তরে যখন অশুভ শক্তির প্রাদুর্ভাব, ধর্মের গ্লাণি ও অধর্মের অভুৎত্থানে মানুষ যখন অতিষ্ঠ, শাসনে শোষণে জর্জরিত তখনই সেই অশুভ শক্তির হাত থেকে মানুষকে, মানুষের সমাজকে পরিত্রাণ দিতে ১৯২১ সালের বৈশাখী পূর্ণিমার শুভলগ্ণে ধরাধামে অবতীর্ণ হলেন পরমপুরুষ পাঞ্চভৌতিক আধারে আনন্দমূর্ত্তিরূপে৷
তিনি যেমন পাঞ্চভৌতিক আধারে আসেন, আবার সেই আধার ত্যাগ করেও যান৷ তাঁর সেই আধার ত্যাগ করে যাওয়াই মহাপ্রয়াণ৷ ১৯৯০ সালের ২১শে অক্টোবর শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর মহাপ্রয়াণ ঘটে৷ কিন্তু যাওয়ার আগে তিনি মানুষের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন এক অভিনব স্পর্শমণি--- সর্বানূ্যসূ্যত জীবন দর্শন আনন্দমার্গ৷ কবি কল্পিত স্পর্শমণির স্পর্শে যেমন সবকিছু সোণা হয়ে যায়, তেমনি আনন্দমার্গ জীবন দর্শনের যথাযথ প্রয়োগে সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সব সমস্যার ন্যায় সঙ্গত ও যুক্তিমুক্ত সমাধান হবেই৷ কিন্তু এই স্পর্শমণি যার হাত দিয়ে প্রয়োগ হবে তাঁকেও উপযুক্ত আধার হতে হবে৷ তিনি সেই আধারের নাম দিয়ে গেছেন সদবিপ্র৷ সদ্বিপ্রের গুণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন---‘‘যাঁরা আধ্যাত্মিক নীতিবাদ তথা ‘‘যম-নিয়ম’’ পালন করেন আর যাঁরা পরম চৈতন্যসত্তার প্রতি অণুরক্ত তাঁরাই হলেন সদ্বিপ্র৷ মানুষ সদ্বিপ্রকে চিনে নেবে তাঁর আদর্শ আচরণ, নিঃস্বার্থ সেবা, কর্ত্তব্যপরায়ণতা আর নৈতিক দৃঢ়তার মধ্যে দিয়ে৷ এই সদ্বিপ্ররা আনন্দমার্গ জীবনাদর্শকে অণুসরণ করে যে সমাজ গড়ে তুলবেন সেই সমাজই হবে সদ্বিপ্র সমাজ এই সদ্বিপ্র সমাজই মানুষকে সর্বাত্মক প্রগতির পথে নিয়ে যাবে৷
মহাপ্রয়াণ দিবস বিশ্বের প্রতিটি আনন্দমার্গীর কাছে মহাসংকল্প গ্রহণের দিন৷ তাঁর স্পর্শমণির স্পর্শে প্রতিটি আনন্দমার্গী যেমন তাঁর আদর্শ আচরণে, সেবায় কর্ত্তব্যপরায়ণতায়্ নিজেকে খাঁটি সোনায় পরিণত করবে, তাঁর স্পর্শমণি প্রয়োগের অধিকার অর্জন করবে, তেমনি প্রতিটি মানুষকে সর্বাত্মক প্রগতির পথে নিয়ে যাওয়ার মহান কাজে আত্মনিয়োগ করবে৷ এটাই মহাপ্রয়াণ দিবসের মহাসংকল্প৷ তিনিও বলে গেছেন--- ‘‘যুগ পরিবর্ত্তিত হয়ে চলেছে৷ তোমরা সকলেই সর্বান্তঃকরণে সদ্বিপ্র সমাজ গড়তে ঝাঁপিয়ে পড়ো৷ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে থেমে থেকো না বা কোন অবস্থাতেই প্রতিষ্ঠার জন্যে ভীত হয়ো না৷ জয় তোমাদের হবেই হবে৷’’
- Log in to post comments