সুপ্রিমকোর্ট রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের রায় দিয়েছেন৷ আইনের সর্বশেষ রক্ষক সুপ্রিম কোর্ট৷ এখানে কিছু বলার নেই৷ তবে এ কথাটা সত্য যে গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা না করলে আমরা নিজেদের পায়েই কুড়ুল মারব৷
নির্বাচন কমিশন একটি আংশিক স্বাধীন সংস্থা৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের নির্বাচন পরিচালনা করেন রাজ্যের নির্বাচন কমিশন৷
এই কাজ করতে যা যা দরকার রাজ্য সরকার তাঁকে সাহায্য করবেন৷ পঞ্চায়েত নির্র্বচনে মনোনয়ন পত্র জমা করতে দেওয়া নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে তা টিভি ও সংবাদপত্রে এসেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় যাকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল কঠোর হাতে নির্বাচন কমিশনের৷ তিনি নানা কারণে ব্যর্থ হয়েছেন৷ প্রার্থীদের নিরাপত্তা তিনি দিতে পারেননি৷ এর পশ্চাতে কারা ছিল তা খোঁজ করা বা তদন্ত করার দায় আদালতের নয়৷ আদালত ঘটনার বিচার করেন আইনের চশমা পরে, এর বাহিরে যেতে পারেন না৷
রাজ্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বপ্রকার সাহায্য করবেন আইনের নিরীখে ৷ ৭১ বছরের নির্বাচনে রাজ্যে রাজ্যে বিশেষ করে এই পঃবঙ্গে গত শতাব্দীর সাত দশকের মধ্যভাগ থেকে যা যা ঘটনা ঘটে আসছে তা যে খুব গৌরবের তা তো নয়, বরং অতীব দুঃখের ও লজ্জার, যার সাক্ষী এ রাজ্যের কোটি কোটি বয়স্ক নরনারী৷ নামে গণতন্ত্র, বাস্তবে প্রচণ্ড নোংরা দলবাজী৷
তবে ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে বিশেষ করে উত্তর ভারতে একটা বিষয় দেখার ছিল৷ তখন অধিকাংশ শিক্ষিত নাগরিকগণ, বিশেষ করে অকংগ্রেসী ও সেবামূলক সংঘটন আর.এস.এস, আনন্দমার্গ ও অন্যান্য কয়েকটি সংঘটনের ছোট থেকে বড় সবাই মিশা ও ডি.আই.আর- এ, ইন্দিরার ঘোষিত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য জরুরী অবস্থার স্বেচ্ছাচারী আইনের কারণে কারাগারে বন্দী৷ তারপর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের অবসান হয়৷ গণতন্ত্রের শক্তি তাতে প্রমাণিত হয়৷ পশ্চিমবঙ্গে বামেরা শাসনে আসেন৷ রাজ্যে বামেরা সত্য কথা বলতে কি---তারা প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনও দিনই নয়, কিন্তু মই হিসাবে একে অবলম্বন করে শাসনে এসে দীর্ঘ ৩৪ বছর শাসনের নামে অনেক অগণতান্ত্রিক কাজ করে শেষে সেই নির্বাচনে হেরে ক্ষমতার সিংহাসন থেকে চ্যুত নিয়েছেন৷ কে জানে আবার তাদের সুযোগ হবে কি না৷
বামেদের হারিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ও অন্যান্য কিছু দলের জোট সরকার শাসনে আসেন৷ পরে অবশ্য তৃণমূলের সঙ্গ ত্যাগ করে৷কারণ কেন্দ্রে তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করে কংগ্রেস থেকে সরে আসে৷ এরাজ্যে তৃণমূলের দ্রুত উত্থান হয়৷ কংগ্রেস ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে পড়ে৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে কাণ্ড হয়েছে তাতে বিরোধীরা প্রায় ৩৪ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পারে নি ভয়ঙ্কর অগণতান্ত্রিক প্রতিরোধের জন্য৷ এ ব্যাপারে আদালতের বিচারক যে মন্তব্য করেছেন, সেটা স্মরণীয়৷ পশ্চিম বাংলায় হঠাৎ দেখা গেল, তৃণমূলের একজন পান্ডা মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে কেন্দ্রের বিজেপিতে যোগ দেন৷ তিনি বিজেপির মাটি তৈরী করতে এরাজ্যে উঠে পড়ে লাগেন৷ এদিকে কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ বিজেপি কেন্দ্রে একক শক্তিশালী দল৷ সেই দলের মদতে মুকুল তৃণমূলের ঘর ভেঙ্গে বিজেপিকে চাঙ্গা করতে উঠে পড়ে লাগেন৷ তাই দেখা গেল এরাজ্যের শাসক দল পঞ্চায়েত স্তরে বামের মতো পেশী শক্তি প্রয়োগ করে একচ্ছত্র অধিকার নেওয়ার মানসে এমন কাজ করে বসলো যার ফলে আগামী ২০১৯-এর লোক সভা নির্বাচনে শাসকদলের পক্ষে অধিকাংশ আসন কব্জা করাটা সহজতর হয়৷
স্মরণে রাখা দরকার যে, আমাদের স্বাধীনতা আসে জন্মভূমিকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ করে যা অত্যন্ত দুভার্গ্যজনক ঘটনা ও যেটি স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কোনদিন চান নি৷ তবু ষড়যন্ত্রকারী ইংরেজ সরকারের অশুভ ইচ্ছার কাছে কংগ্রেসের নরমপন্থীরা বশ্যতা স্বীকার করে দেশের সর্বনাশ ঘটালো নিছক ব্যষ্টি স্বার্থে!
নেতাজী যার তীব্র বিরোধিতা করেন সিঙ্গাপুর থেকে৷ তাই এদেশের বিশ্বাসঘাতক রাজনৈতিক নেতারা চিরকালই তাঁর বিরোধিতা করে গেছে৷ কুৎসা রটনা করেও তাঁর মর্য্যাদা ও সম্মান দেশের মাটি থেকে তারা উৎখাত করতে পারেনি৷
অত্যন্ত দুঃখের কথা, পাইয়ে দেওয়ার চটকদারী কুটচালে দেশের কঠিন সমস্যাগুলোর সমাধান হবে না৷ দেশ আরো নানা সমস্যায় পড়বে৷ তাই আজ চাই প্রকৃত নিষ্ঠা ও দেশসেবা যার দ্বারা হতভাগ্য জনগণ বাঁচার সুযোগ পায়৷ নোংরা দলীয় বোট রঙ্গে যারা মেতে আছে তাদের স্মরণে রাখা দরকার---তাদের দায়িত্ব হলো এমন কিছু করা যাতে দেশের আর্থিক সমস্যা ও বেকার সমস্যা সমাধান হয়৷ জনগণের আত্ম বিশ্বাস কিভাবে রক্ষা করা যায় বিশেষ করে গণতন্ত্রের প্রতি সেটা দেখা৷ কোন অবস্থাতেই জনগণের বোটাধিকার কেড়ে নেওয়াটা গণতান্ত্রিক সরকারের দেশ সেবার নজির নয়৷ এতে কল্যাণের চেয়ে ক্ষতিটাই বেশী হয়৷ বামেরা হঠেছে শুধু এই একটা কারণে৷ সেবায় শাসকগণের আন্তরিকতাটা জরুরী৷ এবার প্রতিটি নাগরিককে অত্যন্ত সজাগ হতে হবে যাতে তাঁদের বোটদানের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে না পারে ৷ গণতন্ত্রে নাগরিকদের এটাই একমাত্র রাজনৈতিক অধিকার৷ অর্থনৈতিক অধিকার অনেকদূরে কারণ দেশ শাসিত হচ্ছে ধনীর অঙ্গুলি হেলনে৷ সৎ নীতিবাদীদেরই দারুণ অভাব পৃথিবীতে৷ তাই নীতিবাদীরা এক হলে তবেই বিশ্বের মানুষ তথা এ মাটির মানুষ বাঁচবে৷ সেই নীতিবাদীরা কখনই ক্ষমতালোভী হবেন না৷ সেবা ও ত্যাগের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই তাঁদের রাজনীতিতে আসা৷ রাজনীতির মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তাঁদের মূল লক্ষ্য৷
- Log in to post comments