সৎ ও নীতিবাদী নাগরিকগণই আজ দেশকে বাঁচাতে পারেন

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতের শাসন ব্যবস্থা যেভাবে চলছে সেটা দেখে মনে হচ্ছে যদি  এমন দেশের সরকার চলে তা হলে সে সরকারের কোন দরকার আছে বলে মনেই হয় না৷ সব কিছু ভুলে যদি শুধু কল্যাণের দিকটা দেখে বিচার বিশ্লেষণ করা হয় তা হলে বলতেই হয় যে সরকারে যাঁরা থাকবেন আর বিরোধী দলের যাঁরা বর্ত্তমান থাকবেন তাদের সংখ্যা যতই কম আর বেশী হোক না কেন সরকার পক্ষকে তাঁদের বলার সুযোগ দিতেই হয়৷ কারণ সব দিকের বিচার বিশ্লেষণটি করেই দেশের আইন পাশ করাটা যুক্তিযুক্ত৷  আজ যা দেখা যাচ্ছে বিধান সভায় ও লোকসভায় হইচই করে একটা গণ্ডগোল পাকিয়ে মহামান্য সভার মূল্যবান সময় নষ্ট করা হয়৷ যেখানে জন প্রতিনিধি রয়েছেন সেখানে তো সংযম ও একটা গাম্ভীর্য থাকবে৷ এটি দেখেছি ডাঃ বিধান রায়ের শাসনে৷ শ্রী রায়ের বিরোধী আসনে ছিলেন একমাত্র জ্যোতি বসু৷ তিনি তাঁকে অনুরোধ করতেন আলোচনায় বক্তব্য রাখতে৷ শ্রী বসুর বক্তব্য তিনি শুনতেন আর বলতেন জ্যোতি বসুর চেম্বারে এসে কিছু জিজ্ঞাসা আছে সেটা জানতে চান৷ সেদিন এই এক মধুর সম্পর্ক ছিল৷ বিরোধীরা যেমন ফেলছিনা না নন আবার শাসকগণ সংখ্যা গরিষ্ঠতার জন্য সবজান্তা নন৷ সরকার পক্ষ  সংখ্যার জোরে যা নয় তাই করে গণতান্ত্রিক শাসনকে গোল্লায় পাঠাচ্ছেন! মনে রাখতে হবে বিধায়ক  ও লোকসভার সদস্যগণ হলেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী৷ দেশের সেবায় দু’পক্ষই গুরুত্বপূর্ণ৷ কেউ ছোট আর কেউই বড়ো নন৷ সংখ্যা গরিষ্ঠতাই সৎ নয় এটি মহামান্য আদালতের বক্তব্য৷ প্রশাসন এর অর্থ প্রকৃষ্ট শাসন ইতি প্রশাসন৷ অনেক ভেবে চিন্তেই আইন হয়৷ বড়ো দলের স্বার্থ সিদ্ধি করার স্থান  ঐ পবিত্র স্থান  নয়৷ তাই দেখা যায় আন্দোলনে দেশ জের বার ও লোকক্ষয় হচ্ছে! এটা অশুভ লক্ষণ৷ লোক প্রতিনিধিদের সকলকেই সংবিধানকে জানতে হবে৷ আর বিধায়কগণ ও লোকসভার সদস্যদের  কিভাবে আলোচনা করাটা দরকার সেটা সংযত হয়ে ভাবতে হবে৷ তবে সঠিক কাজ হয়৷ টেবিল ভাঙ্গা, ধাক্কা, ধাক্কি করা, আর ওয়েলসে গিয়ে লম্প ঝম্প করাটায় কি  সমর্থন কি করা যায়?

আগে দেখা গেছে  বিধান সভা ও লোকসভায় কতটা সংযম ও জ্ঞানী ব্যষ্টিদের আলোচনা সভা ছিল আর এখন একেবারে  সবশেষ! তাতেই বোঝা যায় দেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে লজ্জার কথা আজ তো দেশ সেবক প্রকৃত নেই৷ নোংরা দলতন্ত্রের দলবাজিতে দেশ ধবংস! আজ গণতন্ত্র জনগণের নয়, কথায় কথায়  ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা আর টাকা দিয়ে লোক ভাঙানো কাজ কোটি কোটি জনগণের কথা না ভেবে দলগুলো কেবল দলের স্বার্থ দেখছে! দেশের চিন্তাশীল প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ নাগরিকই স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা সম্পন্ন দলের প্রতি একেবারে  বিশ্বাস হারিয়ে বসেছেন৷ তাঁরা বোট দিতেই যায় না৷ অনেক প্রবীনরা কাগজ পড়াটাই ছেড়ে দিয়েছেন আর সংবাদ শুনতে তাঁদের এক বিতৃষ্ণা এসে গেছে! সুশাসন তাকে বলে যেখানে দেশের আর্থিক কল্যাণে ও শাসনে সম, দম ভেদ ও দন্ত এই প্রকার বিষয় নিরপেক্ষভাবে মানা হয়,  এখন যতো দিন যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে দলের লোক তিনি যেমনই হোন তিনি সৎ ও নীতিবাদী আর বিরোধী মনোভাবাপন্ন যাঁরা ও তাঁরা যতই ভালো লোক হোন তাঁরা  দুষৃকতি ও অসৎ৷ সেটা গণতন্ত্রে চলে না৷ তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানেই বলা হয় নাগরিককে অবশ্যই অধিকার ও কর্ত্তব্য সম্বন্ধে জানতে হবে বুঝতে হবে৷ দেশে প্রায় ২৫টি রাজ্য ভাগ আছে সেগুলি রাজ্যের শাসনে কাজে কর্মে আবশ্যিক৷ সেটা এই ৭৫ বছরে হয়েছে কী? কোন কোন  রাজ্যে কিছুটা হয়েছে অনেক রাজ্য চুপ৷ কেন্দ্র হিন্দীতেই পাগল, সারা ভারতে জোর করে হিন্দী চালাতে অতি ব্যস্ত৷ ভাষার অবদমনটা তো অসাংবিধানিক৷ এটা- বোঝাবে কাকে? সরকার অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার বদলে কোটি কোটি দরিদ্রকে নানা ভাবে শোষণে, করভারে শেষ করে দিয়ে ধনীদের তৈলমর্দন করা হচ্ছে৷ আজ ও চরম বেকার সমস্যায় দেশ জর্জরিত! চাকরী নেই, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রিত কারখানা গুলি বিক্রি করে বেচারাম হয়ে দেশের লোককে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে বিভ্রান্ত করে চলেছে৷ মিথ্যাচারিতাই হলো তাঁদের দলীয় রাজনীতি! সার্থক গণতন্ত্রে বিরোধীরা হন অতি গুরুত্বপূর্ণ দল৷ তাঁদের অস্বীকার করে তাঁদের ছলে-বলে-কৌশলে কোটি কোটি  টাকা দিয়ে তাঁদের দুর্বল করে ধবংস করাটাই হলো শাসকদলের প্রধান লক্ষ্য৷ এটি এক ভয়ঙ্কর যন্ত্র ভারতের মতো দেশে!

মনে রাখতে হবে দলতন্ত্রটাই হলো বিখ্যাত লেখক এডিশনের মতে -- It is pervicious to the last  degree অর্থাৎ এটি অতি ক্ষতিকারক শেষ পর্যন্ত৷ দলতন্ত্রেরই ধর্ম হলো বিরোধীদের ছলে-বলে-কৌশলে ধবংস করা৷

দলীয় রাজনীতিতে কোন দলই ধোয়া তুলসীপাতা নয়৷ কথায় আছে চোরের মায়ের বড়ো গলা৷ আজ প্রতিদিন যা নক্কার জনক ঘটনা ঘটছে যদি সেটা নিরপেক্ষভাবে সব দলের তদন্ত করা হয় তা হলে কেউই বাদ যাবে না৷ দল চালাতে যে টাকার দরকার আর সেই টাকা যোগাড় হয় অসৎ পথেই৷ তাই বলাই  হয় বর্তমানে যে গণতন্ত্রের নামে দলতন্ত্রটা চলছে সেটা ধনতন্ত্রেরই পৃষ্ঠপোষকতা৷ তাই গরীবকে শোষন করেই এইসব বেঁচে আছে৷ তবে ধরা পড়লেই চোর আর ধরা না পড়লেই দেশ সেবক ও মহান! মোদ্দা কথা ভারতকে রক্ষা করতে আজ প্রয়োজন কিছু সৎনীতিবাদী দেশ সেবক ও সেবিকা যাঁরা  দেশের উন্নয়ণে তিতিক্ষা, ত্যাগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশকে সেবা দেবেন৷

তাই গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী হলো দেশের সচেতন নাগরিকগণ৷ তাঁরাই বোট দানে দুর্জনদের সমুচিত  শাস্তি দেবেন৷ তাই তো অতীতের জাতীয় দলগুলো ধবংস হয়ে গেছে৷ মানুষের সচেতনতাই দেশকে বাঁচাবে৷ ধান্দাবাজরা নয়৷