সত্য চিরকালই সত্য

লেখক
প্রভাত খাঁ

মহাকাব্য বলে তাঁকেই  যেটি কোন মহাকবি জগৎ কল্যাণে লেখেন সেটিই ‘‘সুলললিত বাক্যং ইত্যাহু’’৷ এই বিরাট ভারতবর্ষে লোকশিক্ষার জন্য দুটি মহাকাব্য লিপিবদ্ধ করেন৷ একটি রামায়ণ আর একটি মহাভারত৷ রামায়ণ রচনা করেন মহাকবি বাল্মীকি আর মহাভারত রচনা করেন মহাকবি বেদব্যাস৷ দুটিই প্রাচীন ভারতবর্ষের ভাষা সংসৃকতে লিপিবদ্ধ হয়৷ এই দুটি লোক শিক্ষার কারণেই লিখিত হয়৷ রামায়ণ লিপিবদ্ধ হয় বাল্মীকির দ্বারা, বলা হয় শ্রীরামচন্দ্রের জন্মের বহু বছর পূর্বে৷ তাই শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন মহাকবি সৃষ্টি এক পূত আদর্শ চরিত্র শ্রীরামচন্দ্রের তাঁকে নরচন্দ্রিমা বলা হয়৷ শ্রী রামায়ণ গীত হতো গায়কদের  দ্বারা ভক্তবৃন্দের মধ্যে৷ এটি (শ্রীরামায়ণ) সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন  মহাকবিগণ রচনা করতেন জনগণের মধ্যে লোকগীতির মাধ্যমে লোকশিক্ষা প্রচারের জন্যে৷ আজও সেই রামায়ণ ও মহাভারত সারা ভারতের মহামূল্যবান রাম কাব্য গ্রন্থ বা ধর্ম পুস্তক হিসাবে স্বীকৃত৷ শ্রীরামচন্দ্র আদর্শ পুরুষ হিসাবেই খ্যাত৷ তাঁকে ঈশ্বরের অবতার হিসাবেই এদেশের মানুষ মান্য করে থাকেন৷ তাই শ্রীরাম ভক্তের হৃদয়ে সেই ভগবান স্বরূপ৷ ‘‘রাম নাম’’ হলো পবিত্র নামমন্ত্র৷ এটি ভক্তের হৃদয়ে চিরজাগ্রত৷ রাম শব্দের অর্থই হলো শান্তি৷ আর রাবণ শব্দের অর্থ হলো অশান্তি৷ অযোধ্যা যেখানে কোন লড়াই  বা বিরোধ নেই৷ যেখানে মানুষে মানুষে ভালোবাসা বিরাজ করে৷ যে স্থানে  সর্বদা প্রেম এর বাতাবরণ --- বিরাজ করে৷ তাই ভক্তের  হৃদয়ই হলো ভগবানের মন্দির৷ এটি ভুলে সেই প্রেমময়কে যারা  ইট,পাথরের বিরাট প্রাসাদ গড়ে ধন সম্পদের পাহাড় খরচ করে হৃদয়ের  দেবতাকে  আটকে রাখার  চেষ্টা করে একধরনের আত্মতুষ্টির প্রয়াস ছাড়া কিছুই নয়৷ এটাকে যতটা জগৎকল্যাণে অর্থাৎ অর্থসম্পদকে কাজে লাগিয়ে হত দরিদ্রের অভাব অনটন মেটাতে ব্যয় করা যায় ততই মঙ্গল৷ ঈশ্বর জীবজগতে সকল এর মধ্যে বিরাজ করছে সেটাকে জানাতে হবে, সেই বোধের বিকাশ ঘটানোই হলো রামরাজ্য৷ ভক্ত হলো হনুমান যিনি শ্রীরাম ছাড়া সেই প্রেমময় ছাড়া আর কিছু জানে না৷ ইটের পাঁজায় ঈশ্বর বিরাজ করেন না৷ তাঁর কাছে জাতপাতের মিথ্যাচারিতার  কোন মূল্যই নেই৷

বর্তমানে অত্যাধুনিক যুগে মানুষে মানুষে ভেদাভেদটা বিশেষ ধর্মমতের হাজার ভেদাভেদের মধ্যে কি মানায়? চন্দ্র সূর্য্য, বাতাস ও এই মাতৃস্বরূপ মাটি এই পৃথিবী তো সবারই মা৷  তিন জননী স্বরূপ৷ এতো  ভেদাভেদটা কিসের? এতো লড়াই, এতা মারাত্মক অস্ত্র পরীক্ষাটা  কি কারণে? এতো  আস্ফালনটাইবা কিসের? সেই ঈশ্বর বিশ্বাস, সেই ঈর্র্শই, আর সেই ইসলাম মতাবলম্বীদের মধ্যে তফাৎ কিসের! সেই  একই জল, পানি আর এ্যাকোয়া৷ তাহলে সেই রক্ত সেও তো সেই এক৷  কবে মানুষ সেটা অন্তরের সঙ্গে বুঝবে! ধর্মসভার এক৷ ধর্মমতের কিছুটা ভাষাগত ও ভাবগত আলাদা হয় ব্যাখ্যার কারণে৷ কিন্তু সবই একাকার৷ এই ভারতের ও পৃথিবীর মাটিতে যারা জন্মেছে তারা সবাই এই মা-মাটির সন্তান৷ এটা ভাবতে দরকার বিশ্বৈকতাবোধ৷ যেটা ভারতের অধ্যাত্মবাদই স্মরণ করায় মানুষকে সেই অমৃতের সন্তান  আখ্যা দিয়ে৷ ধর্মমত পরিবর্ত্তন কিছু মানুষ করে নানা কারণে, কিন্তু পৃথিবী, চন্দ্র সূর্য্য কি তাদের সেবা দিতে আলাদা হয়? তা তো নয় ৷ তবে আসল আত্মজ্ঞানে ব্রতী হওয়াটা আজ সকলেরই দরকার৷ এটাই মহান ঈশ্বর ইচ্ছা করেন৷ গায়ের জোরে অনেক কিছু  করা হয় সেটা কিছু বছরের জন্য৷ কিন্তু সবই একেরই সৃষ্টি আর সেই একই হয় বহু৷

এ শিক্ষাটা শাসক ও সারা পৃথিবীর সকলের বুঝতে হবে, মনে হয় আজকের করোনা যেন সেটাই বোঝাতে মানব সমাজে এসেছে৷ তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানব সমাজকে বাঁচার লড়াই করতে হবে৷ সবাই সেই মহান ঈশ্বরেরই সন্তান৷ একথা শাসকগণ দয়া করে যতো তাড়াতাড়ি  উপলদ্ধি করবেন ততই মঙ্গল৷

যুদ্ধ নয়, অশুভের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েই লড়তে হবে বাঁচার তাগিদে৷ তাই সৎ নীতিবাদীরা এক হও৷ সবাই নিঃস্বার্থ সেবা দিয়ে যাও আত্ম অহংকার ত্যাগ করে৷

এটাই সেই পরম কল্যাণময় কামনা করেন৷ তোমাদের জয় হোক৷ শ্রীরাম নাম ধন্য ও সার্থক হোক৷ সকলে বিশ্বৈকতাবোধে জাগ্রত হোক৷  তখনই এই ভারত আত্মার প্রয়াস সার্থক হবে, নচেৎ সবই হবে পণ্ডশ্রম!

দুভার্গ্য আমাদের এতো ‘টুইট’ যুদ্ধ কি কারণে? এটাতো মিথ্যা আত্মহঙ্কারের এরই বহিঃপ্রকাশ৷ সত্য চিরকালই সত্য৷ জনগণ সবই বোঝেন ও লক্ষ্য করে না৷