স্মরণে রাখা অত্যাবশ্যক তা হলো ধর্ম ও ধর্মমত এক নয়৷ তাই ভারত হলো প্রকৃত সনাতন ধর্মের দেশ৷ তাই ভারতের ঋষিগণ বলতেন, হে অমৃতেরসন্তানগণ- ভূমাকে লাভ করাই জীবনের লক্ষ্য৷ তাই মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ নেই, সবাই এক পরমব্রহ্ম-এরই সন্তান৷ কিন্তু বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্য, তাই ভারত সব ধর্মমতকে মান্যতা দিয়ে থাকে৷ তাই ভারতের সংবিধান ধর্মমত নিরপেক্ষ৷
কিন্তু দেশ ভাগ করে নেতারা মারাত্মক ক্ষতি করে গেছে মানুষের সেই ঐক্য ও সংহতিতেই আঘাত করে৷
ভারত যুক্তরাষ্ট্রে তাই মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে৷ জাতি, ধর্মমত, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ভারতের সন্তান৷ এটা শাসকদের মনে প্রাণে মেনে নিয়েই দেশ শাসন করতে হবে৷
এখন প্রশ্ণ, সেটা কি হচ্ছে? আজ দীর্ঘ ৭২ বছরের শাসনে কী দেখা যাচ্ছে? সবই যেন কথার কথা আর যারা শাসনে আসছে তারা সংবিধান অমান্য করে দলের সংখ্যাধিক্যে গায়ের জোরে স্বৈরাচারিতাকেই যে প্রশ্রয় দিচ্ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই৷
শাসকগণ নিছক দলীয় স্বার্থে কয়েক ডজন বার সংবিধান সংশোধন করে দলতন্ত্রকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে, এটা গণতন্ত্রের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক ঘটনা৷
আজ শাসকদের কাছে দেশের সার্বিক কল্যাণের চেয়ে দলের স্বার্থটাই বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে৷ তাইতো আজও জীবিত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আক্ষেপ করে বলেন--- আমরা যা চেয়েছিলুম তা হয়নি৷ গণতন্ত্র দলের স্বার্থে পদে পদে অস্বীকৃত হচ্ছে৷ শাসকগণ বিশেষ করে কেন্দ্রে যারা আসে তারা এ কথাটা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে গিয়ে ভারত যে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার কাঠামোতে দাঁড়িয়ে, তাকে অস্বীকার করে বসে৷ অত্যন্ত বেদনার কথা, বর্তমানে ভারতে দলবাজিটা এতো প্রবল, যার দরুণ সর্বভারতীয় রাজনৈতিক পুরাতন দলগুলি নিশ্চিহ্ণ হয়ে নানা নামে দলছুট দল হয়েছে৷ তারা দলীয় স্বার্থেই মশগুল৷ ফলে পদে পদে গণতন্ত্রের স্বার্থ মার খাচ্ছে৷ দলীয় স্বার্থে কেন্দ্র রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে ও জনগণের নির্বাচিত সরকারকে হেনস্থা করে চলেছে৷ জীবন ভোর দেখে আসা হলো কেন্দ্র রাজ্যে রাজ্যপাল নিয়োগ করে থাকে তাদের দলীয় লোকদেরই৷ তবে তাঁরা অনেকক্ষেত্রে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করেন আবার কেউ কেউ নিছক নিয়োগ কর্ত্তাদের নির্দেশে চলেন৷ পশ্চিমবাংলার সঙ্গে দেখা গেছে অধিকাংশ সময় কেন্দ্র সরকারের মত-বিরোধ হয়েছে৷ তবু রাজ্যপালযেহেতু রাজ্যের শাসনে প্রধান, তাই মানিয়ে নিয়ে গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করে গেছেন৷ কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে রাজ্যপালের সঙ্গে যেন রাজ্য সরকারের দূরত্ব বাড়ছে৷ হঠাৎ কেন্দ্রের বাহিনী এসেছে তাঁর নিরাপত্তা রক্ষায়৷ এটা অত্যন্ত সম্মানহানি কি হচ্ছে না পশ্চিম বাংলার জনগণের? যে পশ্চিম বাংলা এক সময়ে ছিল সকল ক্ষেত্রের পীঠস্থান৷
মাননীয় রাজ্যপাল তো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তাঁর নিরাপত্তাকে জোরদার করতে পারতেন৷ যাঁর নামে রাজ্যের শাসন চলে, তিনি আইনতঃ সর্বেসর্বা৷ সেটা কেন হল না? ৭২ বছর গণতান্ত্রিক শাসনে এমন ধরণের কোন নজির তো নেই৷ বামফ্রন্টের আমলে গণতন্ত্রের শাসনে জ্যোতি বসুর সঙ্গে অনেক তিক্ততা হয়েছে আমরা লক্ষ্য করেছি৷ কিন্তু রাজ্যপাল সংযম দেখিয়েছেন ও মহত্ব প্রকাশ করেছেন৷ বর্তমানে কেন্দ্রের নিরাপত্তা বাহিনী এসে এমন নজির সৃষ্টি হলো যা অত্যন্ত বিসদৃশ৷ এমনও দেখা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তবে গভর্নর নিয়োগ করেছে কেন্দ্র৷ আমরা নাগরিকগণ অত্যন্ত মর্মাহত এই বিসদৃশ ঘটনায়৷ রাজ্যের অকারণে মর্য্যাদাহানি হওয়াতে৷ রাজ্যের প্রধানকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বক্তব্য রাখাটাই সাংবিধানিক নিয়ম৷ তা না হলে জটিলতা দেখা দেবে৷
আমরা লক্ষ্য করেছি, রাজ্যে যেভাবে বোট হচ্ছে সেটা মোটেই কাম্য নয়৷ কিন্তু দল ভাঙা-ভাঙ্গিটা যেন বর্তমানে এ দেশের গণতন্ত্রে একটা রেওয়াজ৷ এ কাজে যারা লিপ্ত তাদের কথাবার্তা, আচরণও যেন নেতৃসুলভ নয়৷ একটা বিশেষ লক্ষ্যকে ধরে তারা গণতন্ত্রের ভিতটাকে নাড়িয়ে দিতে চায়৷ কবে বোট হয়ে গেছে কিন্তু আজও মারামারি কাটাকাটি হয়েই চলেছে৷ রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা শোচনীয়৷ যারা শাসনে আছে আর যারা বিরোধী ভূমিকায় আছে তাদের এই লড়াইয়ে তাদের দলেরও হতভাগ্য সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে৷ চরম বেকার সমস্যায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনগণ কাতর৷ এ ব্যাপারে রাজ্যের বয়স্ক হিসাবে যাঁরা নিরপেক্ষ, কোন দলের নন, তাঁরা কিন্তু আশাহত৷ দেখা যাচ্ছে বর্তমানে কেন্দ্রের মন্ত্রীগণও এ রাজ্যে এসে আগামী নির্বাচনে রাজ্য শাসন কায়েম করবেন, তারই ভবিষ্যৎবাণী ঘোষণা করে চলেছেন৷ এই রাজ্যের জনগণ তো সচেতন, তাঁরা ইচ্ছা যা করবেন সেটাই হবে৷ কিন্তু আচরণে ব্যবহারে ঐ নেতাদের সংযতবাক থাকাটা বিশেষ প্রয়োজন৷ অতীতের ইতিহাস কিন্তু পশ্চিমবঙ্গবাসী ভোলেনি৷ ইন্দিরাগান্ধী চরম স্বৈরাচারিতার নজির রেখে গেছেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জরুরী অবস্থা জারি করে৷ কিন্তু আজ তিনি কোথায় আর তাঁর দলই বা কোথায়? সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বিধাতা সবই দেখেন আর অপেক্ষা করেন৷ শেষে তিনিই বিধান দেন৷ তাই শাসক দলের কি কেন্দ্রের আর কি রাজ্যের সংযত হয়ে চলাটাই তাঁর নির্দেশ৷ বেশী বাড়াবাড়ি তিনি কারোরই পছন্দ করেন না৷ যেহেতু ভারত ধর্মের দেশ তাই এ কথা স্মরণ করতে দেশবাসী আজ বাধ্য হচ্ছেন৷ শাসকগণ সংযত হোন, দেশ সেবায় মন দিন৷৷ জঘন্য দলবাজি থেকে বিরত হোন৷ দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, গণতন্ত্র আজ এদেশে ধূলায় লুন্ঠিত৷ রাজনৈতিক দলগুলি অসংযমী হয়ে গদীর স্বার্থে উন্মত্ত হয়ে পড়েছে৷ তারা একটু সংযত হোক৷ প্রশাসনে থেকে দলীয় ক্যাডারের মতো দলবাজী করাটা গণতন্ত্রের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক৷
এই কারণে রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় ক্ষেত্রেই শাসকবর্গকে ন্যায়-নীতি ও সত্যের ভিত্তিতে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করে প্রতিটি দেশবাসীকে নিরপেক্ষভাবে সেবা দান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ তবেই দেশ ও রাজ্য ক্রমাগত উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলবে৷
- Log in to post comments