বর্তমানে সারা পৃথিবীটাই দোটানায় পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে--- সেটা হলো ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র, আর বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য৷ সৃষ্টিতত্ত্বটা হলো ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র্য অর্থাৎ অবতরণ পদ্ধতি৷ অর্থাৎ সেই এক থেকে বহু৷ আর সৃষ্টির পর যে বহু সেটার লক্ষ্য হওয়া দরকার সেই বহুকে যেতে হবে ঐক্যে অর্থাৎ সেই এক এতে৷ আমাদের মধ্যে আমরা হয়তো অনেকেই জানি যে সেই ব্রহ্ম,ঈশ্বর, গড, আল্লাহ, সেই এক সত্ত্বা নামে আলাদা ঠিক যেমন জল, পানি, ওয়াটার নামে আলাদা কিন্তু বস্তুটি হলো একই, এই বিশ্বসংসারে বহু জিনিসের সৃষ্টি হয়েছে তারা সবাই এসেছে সেই এক থেকেই৷
এখানে এসে হয়েছে নানারূপ বহু যেমন গাছপালা, জীবজন্তু প্রাণী নানা ধরণের তার স্রষ্ঠা হলেন এক সত্ত্বা যাকে বলা হয় পরমব্রহ্ম৷ আর সবকটি কিন্তু বেঁচে আছে পরস্পরের সাহায্যও সহযোগিতায়৷ তাই বলা হয় প্রাণময় জগৎ৷
মানুষই কেবল আত্মীক উপলব্ধি করতে পারে অধ্যাত্মজ্ঞানের মধ্য দিয়ে সেই এককে৷
এই যে ভারত যুক্তরাষ্ট্র এটি হলো বহু ভাষাভাষীর দেশ৷ প্রত্যেকটি ভাষাভাষীর নিজস্ব সত্ত্বা আছে৷ সেটা হলো আঞ্চলিকতা তাদের অনেক কিছুই আলাদা৷ ভারত হলো কেন্দ্রীভূত একটি দেশ তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলি হলো রাজ্যগুলি৷ এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলির বেঁচে থাকার ও প্রত্যেকটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক, ভৌগোলিক ও জলহাওয়ার ভিন্নতার কারণে পৃথক বৈশিষ্ট্যগুলি বজায় রেখে সার্বিক বিকাশের জন্য নানাবিধ জিনিস দরকার৷ তবে সবগুলি অঞ্চল সার্থকতা লাভ করবে৷ তাই কেন্দ্রীভূত ভারতকে সমদৃষ্টি দিয়ে কাজ করতে হবে৷ এখন দেখা যাচ্ছে ভারতে একটি দল শাসন নিয়ন্ত্রিত করছে, তার হাতে শাসনের অধিকার আছে বা তারা সংখ্যা গরিষ্ঠতা হতে আরো কিছু দলযুক্ত৷ তারাই দেশ কেন্দ্রে শাসনে যায়৷ বাকি পৃথক হয়ে যুক্ত আছে৷ তাই ঐক্য ও সংহতি রাখতে কেন্দ্রের শাসকদলকে এই উদার সর্বসম্মত নীতি ও আদর্শ ভাবনা নিয়ে সংবিধান তৈরী করতে হবে যাতে দেশের সেই এক কেন্দ্রিক উদার শাসন ব্যবস্থায় সকলের এক হয়ে থাকার সুযোগ থাকে৷ তাই ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা করা হয় যেটিকে সর্বাগ্রে মান্যতা দিতে হবে৷ যদি ভারত যুক্তরাষ্ট্রে বিরোধী রাজ্য যাকে যারা ভিন্ন দলের তাদের সংবিধানে যে অধিকার পৃথকভাবে রাজ্যের অধিকার দিয়েছে তাকে মান্যতা দিয়ে ও কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা আইনসম্মতভাবে গ্রাহ্য সেইটি দিয়ে তার উন্নয়ণে বাধা না নিয়ে সংবিধান সম্মতভাবে চলতে পারে তবেই যুক্তরাষ্ট্র বাঁচবে ও সার্থক হবে৷ দেখা যাচ্ছে এই যুক্তরাষ্ট্র জন্মের পরই দলতন্ত্রের দলীয় শাসকগণ সেই সংবিধানকে দলীয় সংখ্যার জোরে সংবিধানের ধারাগুলি পাল্টিয়ে নিজ নিজ দলের স্বার্থ সিদ্ধিতে মগ্ণ হয়ে বিরোধী দলকে অগ্রাহ্য করেও মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে ন্যায়সঙ্গত বিচারকে অস্বীকার করে চলে দীর্ঘ ৭৬ বছরে এক অচল অবস্থার সৃষ্টি করে---প্রকারান্তরে সেই বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের যেটা যথার্থ গণতন্ত্র নয়, বরং মারাত্মক দলতন্ত্র তা হলে সেই দেশকি গণতান্ত্রিক অধিকার প্রাপ্ত নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করে সার্থক শাসক হতে পারে কি? তাই বার বার মনে পড়ে সেই সার্থক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল জীর কথা! কই আমরা তো মোদি জীর মধ্যে তাকে খুঁজে পাই না৷ মোদিজী তো হিন্দুত্ব করেই আত্ম অহংকার করছেন যেটা সারা ভারতযুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এক অস্বস্থিকর চিন্তা৷ শাসক যিনি হবেন ভারতযুক্তরাষ্ট্র সংসদীয় বহুদলীয় গণতন্ত্রে তিনি অবশ্যই হবেন কিছুটা উদার ও মানবতাবাদী৷ মানবধর্ম কখনোই বিশেষ ধর্মমতের বিশেষ করে সারা ভারতযুক্তরাষ্ট্রের অন্তরে তিনি বিশ্বাসী হতে পারেন বাহ্যিক দিয়ে তাঁকে কিছুটা সংযত থাকতে হবে কারণ তিনি সব ধর্মমতের বিশ্বাসীদের তো প্রধান শাসক৷ আর এস এস এর সম্বন্ধে একথা বলা যায় না৷ কারণ তাদের অধিকার আছে তাদের ধর্মমতের প্রচার করা৷ কিন্তু বেশী গোঁড়ামীটা ভালো নয়, শাসকদের ভারতবর্ষ হলো অধ্যাত্মবাদের দেশ সেখানে ব্রহ্মময় জগৎ আর বিশ্বস্রষ্ঠা হলেন এক ও অদ্বিতীয় তাঁর সবাই সন্তান৷ মানবজাতি তাই একধর্মের আশ্রিত৷ এক পিতার বহু সন্তান কিন্তু সেই পরমপিতা একই৷ তাই ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্ধ অনুগামীরা হতে পারে না ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ও রাজ্যের শাসকগণ তাঁদের অবশ্যই বিকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অনুগামী ও সমবায় কে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ এটারই দারুণ অভাব দলতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়৷ গণতন্ত্রে নাগরিকগণ ধনীদের দ্বারা শোষিত হচ্ছে৷ তাতে গণতান্ত্রিক অধিকারটাই অস্বীকৃত হচ্ছে৷ সুশাসন চলে বিচার বিবেচনার মাধ্যমে৷ সর্বকল্যাণ হয় যখন সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত আলাপ আলোচনার মাধ্যম গ্রহীত হয়৷ তাই বিরোধীপক্ষের আলোচনা অনেক যুক্তিবাদী হয়ে শাসককে শুনতে হয়, এটাই গণতন্ত্র এর স্বার্থকতা৷ মাননীয় বিচারকদের সেই কারণে তাঁদের বিচারকে মান্যতা দিয়ে শাসনের মর্য্যাদা রাখাটা হলো ন্যায়বিচার এর মর্য্যাদা রক্ষা করা৷ বর্তমান কেন্দ্রের শাসক এতোই দল ও গোষ্ঠী স্বার্থের চিন্তায় রত যে মহামান্য আদালতকেও একপাশে ফেলে চলতে তৈরী, যা অত্যন্ত বিপদজনক৷ দলন্তের ক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার এদেশের শাসকদের তা হলো অতীতের ইন্দিরাজী চেয়েছিলেন ভারতে প্রেসিডেন্সিয়ান সরকার গড়তে কিন্তু পারেননি৷ কারণ তাতে ঐ বহুদলীয় যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার ক্ষতি হতো৷ তাই বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারকে স্মরণে রাখতেই হবে যাতে করে অন্ততঃ বহুদলীয় সংসদীয় গণতান্ত্রিক যদিও এটাও দলতান্ত্রিক সেটা যেন অন্ততঃ রক্ষা পায়৷ দেশ বৈচিত্র্যের মধ্যে আংশিক দলতন্ত্র এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে যৎসামান্য স্বীকার করেছে সেটা শেষ হয়ে যাবে যদি ছল বল কৌশলে প্রেসিডেন্সিয়াল একদল কেন্দ্রিক স্বৈরাচারী শাসন কায়েম হয়৷ এমনিতেই দলবাজিতে বঞ্চিত৷ রিক্ত সিংহভাগ মানুষ বোট দিতেই চায় না৷ কিন্তু দল এটাকে গুরুত্ব না দিয়ে হাতিয়ার করেছে, তাই তাদের (শাসকদের) কথায় নির্বাচন হয়ে দাঁড়িয়েছে একটা ‘খেলা’৷ এটা অত্যন্ত অহংকারের স্পর্দ্ধারই উক্তি৷ গণতন্ত্র বর্তমানে হয়ে যাচ্ছে ধান্দাবাজি তাদের কাছে যারা শাসক৷
পরিশেষে বলতে বাধ্য হচ্ছি বিদেশে গিয়ে টাকা আনাটাতে গৌরবের কাজ নয় শিল্পের উন্নয়নে, দেশে যেটাকা ১০ শতাংশ ধনীর হাতে আছে সেটাকে দিয়ে দেশ আর্থিক উন্নতি ঘটাতে পারে৷ তা কিন্তু হচ্ছে না৷ তাদের টাকা দলতন্ত্রে দলকে দিয়ে বোটবাজি করছে যেখানে সকল বোটার শান্তিতে বোটটাই দিতে পারে না৷ যাতে শান্তিতে বোট হয় সকলে মতামত দান করতে পারে তার ব্যবস্থাটা সরকার করতে পারবেন কী? যদি পারেন তা হলে দেশের মানুষ কিছুটা শান্তি পায়! আমাদের নাগরিকগণতো বাংলাদেশের চেয়ে আর্থিক দিক থেকে পশ্চাতে! এযে কতো লজ্জার সেটা হতভাগ্য জনগণ অনুভব করেন৷ এ ব্যর্থতাটা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির বলে মনে কী হয় না?
তাই শ্লোগান এক দেশ এক বোট এটা ভারতের বৈচিত্র্যের ভরা বৃহৎ রাষ্ট্রে পক্ষে অবাস্তব কী নয়? ভারতের শাসন ব্যবস্থাটা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা, তাই দক্ষিণ ভারত উত্তর ভারতের শাসকদের একচক্ষু বিশিষ্ট আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ৷ তাই উদারতা চাই কেন্দ্রীয় শাসনে৷
- Log in to post comments