প্রভাতী

দিদৃক্ষু

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

হে সুন্দর, হে প্রিয়তম,

ঘোচা ও মোহের ভ্রান্তি,

দেহের সীমার বাইরে দেখাও

তোমার দিব্যকান্তি৷

প্রকটিত হও অন্তরীক্ষে

আলোকিত করো সকল দিককে,

বিশালের মাঝে তুমি যে বিরাট,

ব্রহ্মাণ্ডের তুমি সম্রাট,

নয়ন কাঁদে তোমার বিরহ লাগি

সকল অঙ্গে তোমার সঙ্গ মাগি৷

মুছে দাও আজ সীমার ভূগোল

মুগ্দ করো গো নয়ন যুগল,

দৃষ্টি পথের ঘোচাও আঁধার,

সরাও জড়ের স্তূপ---

হে জ্যোতির্ময় দেখাও তোমার

দিব্যকান্তি রূপ৷

দুঃখ-খরার রুক্ষ জীবনে

আসুক স্নিগ্দ শান্তি,

হে সুন্দর, হে প্রিয়তম,

ঘোচাও মোহের ভ্রান্তি৷

 ঠিকানা

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

ঠিকানা আমার রয়েছে বিশ্বময়,

কোনো ঠিকানাই চিরস্থায়ী নয়

         সাময়িক আশ্রয়,

কত সহস্র জীবন পরে

       মানব জনম হয়,

খুঁজে পেতে হবে অন্তিম ঠিকানা

         লক্ষ্য পরমাশ্রয়৷

 

অজস্র জনম, অজস্র ঠিকানা

       সবই ছিল অস্থায়ী,

মনুষ্যেতর জীবন প্রবাহ

       ছিল এর তরে দায়ী৷

নাই ধারণা, ধ্যান-সাধনা

     ছিলনা তাঁহার সন্ধান,

মানব জীবনে শিক্ষা পেলাম

    পশু-মানুষের ব্যবধান৷

 

করুণাময়ের লীলার ধারায়

  কত জীব দেহ অতিক্রম,

ক্রম উন্নত বিকশিত মন

  মানব জীবন ব্যতিক্রম!

জনমের পর জনম এসেছে

      পেয়েছি মানব দেহ,

পেয়েছি মনন, হৃদয়, চিন্তন

     ভাব-সাগর অপরিমেয়!

 

  যে পথ দেখায় মুক্তির পথ

  যে পথে তোমার বিজয় রথ

 চলার প্রয়াস সে’’ পথে অব্যাহত,

অজানা সে’’ পথ আবিষ্কারে

 নদীর তীরে, গিরি কন্দরে

        মানুষ দ্বিধান্বিত!

 

ভাব সাগরে তরী বেয়ে

        আসে কোন কাণ্ডারী,

তাঁর ভরসায় চরম লক্ষ্যে

        শুরু জীবন নদী পারি৷

অলক্ষ্যে থেকে প্রেরণা জোগায়

          দেখায় পথের নিশানা,

লক্ষ্য আমার পরমাশ্রয়

           মোর শাশ্বত ঠিকানা!

 

    সাহসে ভর করে-----

বাধাবিপত্তি কোথায় যায় যে সরে,

     না জানিয়ে কে সে এসে

অমানিশা শেষে আলোর দেশে

    ডাক দিল সে মৃদু হেসে৷

যে পথে হবে যেতে ------

       শঙ্কিত পথ চলাতে

একেলা বজ্রপাতে

       তিনি এলেন পথ দেখাতে৷

 

     হৃদ মাঝারে তাঁর বরণে

তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণে

           হয়েছিনু তন্ময়,

মাথার উপর বিধির হস্ত

তাই ‘বিঘ্ন-বাধা’ সদাই ত্রস্ত

অন্তরে জাগ্রত বরাভয়!

বইয়ের নামেই বিপত্তি

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

ঔষধ রোগকে হত্যা করে৷ তাই হত্যাকারী অর্থে ‘থুর্ব’ ধাতু ড করে যে ‘থ’ শব্দ পাই তার একটি যোগরূঢ়ার্থ হচ্ছে ঔষধ৷ এই ঔষধ যে কেবল শারীরিক রোগের ঔষধ তাই নয়, মানসিক রোগের ঔষধও৷ মানসিক রোগের যতরকম ঔষধ আছে তার একটা নাম হচ্ছে মানুষের মনে রসচেতনা জাগিয়ে তার মনকে হালকা করে দিয়ে ব্যথাভার সরিয়ে দেওয়া–চিন্তাক্লিষ্টতা অপনয়ন করা৷ এজন্যে প্রাচীনকালে এক ধরনের মানুষ থাকতেন যাঁরা মানুষের মনকে নানান ভাবে হাসিতে খুশীতে ভরিয়ে রাখতেন৷ মন ভাবে–ভাবনায় আনন্দোচ্ছল হয়ে উপচে পড়ত৷ এই ধরনের মানুষেরা শিক্ষিত বা পণ্ডিত থেকে থাকুন বা না থাকুন এঁরা মানব মনস্তত্ত্বে অবশ্যই পণ্ডিত হতেন৷ এঁদেরই বলা হত বিদুষক৷ বিদুষকের ভাববাচক বিশেষ্য (abstract noun) ‘বৈদুষ্য’ শব্দটির সঙ্গে নিশ্চয়ই তোমরা ভালভাবেই পরিচিত৷

                   ‘‘বাক্ বৈখরী শব্দঝরী শাস্ত্র ব্যাখ্যান কৌশলম্৷

                    বৈদুষ্যং বিদুষাং তদ্বৎ ভুক্তয়ে ন তু মুক্তয়ে’’৷

বিদুষকের বিদ্যেৰুদ্ধি থাক্ বা না থাক্ তাঁদের মনস্তত্ত্বের জ্ঞান থাকা দরকার, উপস্থিত ৰুদ্ধি (Ready wit) থাকা তো চাই–ই৷ তোমরা অনেকেই নিশ্চয় মুর্শিদাবাদের শরৎচন্দ্র পণ্ডিত মহাশয়ের নাম শুনেছ৷ তাঁর মত উচ্চমানের বিদুষক খুব কমই জন্মেছেন৷ সাধারণের মধ্যে ‘দাদাঠাকুর’ নামে পরিচিত এই মানুষটি ‘বিদুষক’ নামে একটি পত্রিকাও ছাপাতেন৷ সেবার ৰহরমপুরে বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে৷ উপস্থিতদের মধ্যে শরৎচন্দ্রপণ্ডিত মহাশয় তো আছেনই, আর ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি তখন প্রতিষ্ঠার তুঙ্গে৷ তাঁর লেখা ‘চরিত্রহীন’ পুস্তকটির তখন ‘খোলা থেকে নোলা’ গরমাগরম আলুর চপের মতই ৰাজারে ৰেজায়** কাটতি৷

শরৎ চাটুজ্জে নামকরা কথাশিল্পী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু ভাষণ ভাল দিতে পারতেন না.....মজলিসী গল্পগুজবে ছিলেন ওস্তাদ৷ সবাই তাঁকে ধরে বসল–‘‘আপনাকে এখানে কিছু বলতেই হবে৷’’ শরৎ চাটুজ্জে দু’এক মিনিট দায়সারা গোছের কিছু বলে বসে পড়লেন৷ আর বসার আগে বললেন–‘‘আমি আর এখানে ৰেশী কিছু বলব না–বলবেন বিদুষক শরৎচন্দ্র৷’’

শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (দাদাঠাকুর) উঠে খানিকক্ষণ বললেন আর বসার আগে বললেন–আমি আর কতটুকু জানি, আমার চেয়ে ঢ়ের ৰেশী জানেন ওই ‘চরিত্রহীন’ শরৎচন্দ্র৷

পেত্নীর লড়াই

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘দংশ্’‘অনট’–এর দু’টি রূপ,–‘দংশন’, ‘দশন’৷ ‘দংশন’ মানে কামড়ানো৷ ‘দশন’ মানে দাঁত কারণ দাঁতের সাহায্যে মানুষ কামড়ায়৷ তোমরা দাঁত বলতে দন্ত, দত, দশন প্রত্যেকটি শব্দই ব্যবহার করতে পারো৷ যে মানুষটির দাঁত কুন্দফুলের মত শুভ্র সে কুন্দদন্ত/কুন্দদশন/কুন্দদত এই তিন শব্দেই পরিচিত হতে পারে৷ স্ত্রীলিঙ্গে কুন্দদন্তী/কুন্দদশনা চলতে পারে৷ তবে ‘কুন্দদতী’ ব্যবহারটাই ৰেশী প্রচলিত৷

আমরা ছোটৰেলায় পেত্নীর গল্পে শুনেছিলুম দুই পেত্নীতে সব সময় দারুণ ঝগড়া করত৷ একে অন্যের ২৪ ঘণ্টা খোয়ার করত৷ সম্পর্কে তারা ছিল ননদ–ভাজ৷ একজনের নাম ছিল মিসেস কুলোকর্ণী–তার ছিল কুলোর মত কাণ, অন্য জনের নাম ছিল মিসেস মূলদন্তী (বৈয়াকরণিক বিচারে ‘মূলদতী’ হলে সেটাই ৰেশী শোভন হত)–তার মূলোর মত দাঁত৷ একজনের হাতে থাকত কাঁকড়া ৰিছের (বিচ্ছু–Scorpion) চামড়ার ব্যানিটি ৰ্যাগ৷ অন্যের হাতে থাকত ডেঞো পিঁপড়ের হাড়ের ব্যানিটি ৰ্যাগ৷ দু’জনেই হাতে ব্যানিটি ৰ্যাগ নিয়ে যখন আকাশ পানে চেয়ে ঝগড়া করত তখন কী খোলতাইটাই যে হত তা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না৷

ফুরফুরার জনৈক ফটোগ্রাফার আমাকে বলেছিল–সে ওই দৃশ্য টেকনিকালার মুবি ক্যামেরায় তুলবার জন্যে কড় গুণে গুণে ১১১১ বার চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু প্রতিবারই সে ৰড়তাজপুরে গিয়ে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছিল৷ কারণ প্রতিবারই দু’জন পেত্নীই মুড়ো ঝাঁটা নিয়ে তার দিকে তেড়ে এসেছিল৷ কুলোকর্ণীর* স্বামী শ্রীযুক্ত ৰাৰু পিণ্ডিগেলা ভূত (সংক্ষেপে পি. জি. ৰি.) ঝগড়ার চ্যাঁ ভ্যাঁ এড়াবার জন্যে অধিকাংশ সময় মাঠে–ভাগাড়ে, বনে–ৰাদাড়ে, ঝোপে–বাঁশঝাড়ে–শ্যাওড়্ গাছে ঘুরে ৰেড়াত৷ অন্য ভূতেরা যখন তাকে শুধোত–হ্যাঁ গাঁ, তুঁমি সঁব সঁময় ৰাঁড়ীর বাঁইরে বাঁইরে কেঁন থাঁক গাঁ সে বলত–আঁমাঁর হাঁর্টের ব্যাঁমোঁ আঁছে কিঁ নাঁ৷ তাঁই ডাঁত্তঁণার বঁলেঁছেঁ খোঁলাঁ হাঁওয়াঁয় থাঁকতেঁ৷

ভাগাড়ীস্তান রাষ্ট্রের মহিলা কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রিণী হবার জন্যে তারা ৫০০ বছর ধরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এসেছে কিন্তু একবারও কেউ জিততে পারেনি–জিতেছে সাধারণ মানবীরা৷

প্রভু তুমি লীলাচঞ্চল

লেখক
সুকুমার রায়

প্রভু তুমি লীলাচঞ্চল

          এত নিত্যভূবনে

সৃষ্টি স্থিতি লয়

          তোমারি ভুমামনে৷

অনন্তে আছ মিশে,

          অণু পরমাণুতে

কবে আসিবে রূপসাজে

          ধূলির ধরণীতে৷

ত্রিলোকবিহারী সবার

          প্রিয়তম তুমি

নিশিদিন পথ চেয়ে

          ওগো অন্তর্যামী৷

আকুতি

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

তোমার কথায় মুখরিত হোক

আমার কন্ঠস্বর,

হে ঈশ্বর, হে সুন্দর

হে পরমেশ্বর৷

তোমার কর্মে শরীর পাত,

ঘর্ম ঝরুক দিবস রাত,

তোমার মন্ত্রে শরীর আত্মা

মন-হোক উর্বর,

হে ঈশ্বর, হে সুন্দর,

হে পরমেশ্বর৷

 

তোমার পূজায় দেব অঞ্জলি

আমার প্রতিটি কর্ম,

নত মস্তকে করবো পালন

মানব -সেবার ধর্ম৷

অনেক-যে কাজ আছে বাকি

সেসব যেন মনে রাখি---

আবার আমি আসবো ফিরে,

আবার রূপান্তর,

হে ঈশ্বর, হে সুন্দর,

হে পরমেশ্বর৷

 

খণ্ড খণ্ড জীবন আমার

লও গো তুলে গলে,

মালার মতো পাক সে শোভা

অখণ্ড মণ্ডলে৷

দিনের শেষে যাবো ফিরে

পাখীর মতো আপন নীড়ে

তোমার জীবনে মিলুক জীবন

হোক প্রতিসঞ্চর,

হে ঈশ্বর, হে সুন্দর

হে পরমেশ্বর৷

দাদাঠাকুরের চিঠি - মানব ধর্ম

লেখক
পত্রিকা প্রিতিনিধি

ছোট ভাইবোনেরা, বৈচিত্র্যময় এই জগতে আমরা নানান ধরণের বস্তু দেখতে পাই৷ তাদের প্রত্যেকেরই কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুণ আছে যা দেখে আমরা সেই বস্তুটিকে চিনতে পারি৷ যেমন আগুনের বৈশিষ্ট্য হ’ল তাপ ও আলো দেওয়া, জলের বৈশিষ্ট্য হ’ল ভেজানো বা নীচের দিকে গড়িয়ে যাওয়া৷ বস্তুর এই বিশেষগুণ বা বৈশিষ্ট্যকেই তার ধর্ম বলে৷

জড় বস্তুর মত প্রতিটি জীবেরও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা দেখে আমরা তাদের জড়বস্তু থেকে আলাদা করতে পারি৷ যেমন জীব মাত্রেই ক্ষুধা পেলে খেতে চায় ক্লান্ত হলে বিশ্রাম চায়, ঘুমায়, প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকতে চায় আর নিজের বংশ বিস্তার করে যেতে চায়৷ এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুণগুলিকেই বলা হয় জৈব ধর্ম৷ এই জৈব ধর্মে উদ্ভিদ, পশু–পাখী তথা মানুষে কোন প্রভেদ নেই৷ জীব মাত্রেরই এগুলি স্বাভাবিক ধর্ম৷

এই জৈব ধর্ম ছাড়াও প্রতিটি জীবনের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা দেখে তাদের অন্যান্য জীব থেকে আলাদা করা যায়৷ তেমনি মানুষেরও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা দেখে তাকে পশু থেকে আলাদা করা যায়৷ পশু দেহ প্রধান জীব, তার আছে শুধু দেহের ক্ষুধা৷ কিন্তু মানুষ মন প্রধান জীব, তার দেহের ক্ষুধার সঙ্গে আছে মনের ক্ষুধাও৷ এর ফলেই পশু ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য৷ দেহের ক্ষুধা সীমিত কিন্তু মনের ক্ষুধা অনন্ত৷ সীমিত জড়বস্তুতে দেহের ক্ষুধা মিটলেও মনের অনন্ত ক্ষুধা মেটে না৷ ক্ষুধা পেলে আমরা খাদ্য গ্রহণ করি, খেয়ে সুখ পাই৷ কিন্তু খাদ্য এক সময় শেষ হয়ে যায় বা আমাদের পেট ভরে গেলে আমরা আর খেতে পারি না৷ আর খাওয়া শেষ হবার সাথে সাথে খাওয়ার সুখও শেষ হয়ে যায়৷ মন তখন অন্য কিছু পেতে চায়৷ আমরা যা কিছুই পাই না কেন তার দ্বারা আমরা ক্ষণিকের সুখ পাই৷ মন তাতে কখনও তৃপ্ত হয় না৷ মন এমন কিছু পেতে চায় যা কখনও শেষ হবে না, যা থেকে আমরা সব সময় সুখ পেতেই থাকব৷ যে সুখের কখনও শেষ হবে না৷ এই অনন্ত সুখকেই প্রকৃত আনন্দ বলা হয়৷ ঈশ্বরই একমাত্র অনাদি অনন্ত সত্তা৷ তাই একমাত্র ঈশ্বরকে উপলব্ধির দ্বারাই আনন্দ পাওয়া সম্ভব৷ প্রতিটি মানুষ জ্ঞাতসারে হোক বা অজ্ঞাতসারে হোক আনন্দ পেতে চায়, ঈশ্বরকে পেতে চায়৷ এটাই মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুণ৷ এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে, মানুষকে জীব জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে৷ এই আনন্দ পাবার এষণা অর্থাৎ একান্ত ইচ্ছা বা ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার একান্ত ইচ্ছাই মানুষের যথার্থ পরিচিতি বহন করে৷ এটাই মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, এটাই মানুষের ধর্ম৷ আর মানুষ যখন জেনে, বুঝে এই আনন্দ পাবার জন্যে, ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার জন্যে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তাকে বলে সাধনা৷ তাই প্রতিটি মানুষেরই সাধনা করা উচিত৷

ছোট্ট বন্ধুরা, এখন তোমরা বুঝতে পেরেছ, আমাদের জীবনের লক্ষ্য হ’ল অনন্ত সুখ বা আনন্দ লাভ করা৷ আর নিয়মিত সাধনার দ্বারা ঈশ্বর উপলব্ধির মাধ্যমেই অনন্ত সুখ বা আনন্দ পাওয়া যায়৷ তাই আমাদের দু’বেলা নিয়মিত ভাবে সাধনা করতেই হবে৷ এটা আমাদের বিশেষ কর্তব্য৷

কামদেবের সংসার ত্যাগ

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

ইতিহাস প্রসিদ্ধ মহারাজ আদিশূর কান্যকুব্জ থেকে যে পাঁচজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ গৌড়ে নিয়ে আসেন তাদের মধ্যে সাবর্ণ গোত্রের বেদগর্ভ নামে একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন৷ এই পাঁচজন ব্রাহ্মণের মোট ৫৬টি পুত্র সন্তান হয়৷ আদিশূরের উত্তরাধিকারী ক্ষিতিশূর এই ৫৬জন ব্রাহ্মণকে ৫৬টি গ্রাম প্রদান করেন৷ এই গ্রাম দান থেকেই ‘গাঁ-ই’ শব্দের উৎপত্তি৷ গাই বলতে বোঝায় গ্রামাধিকারী৷ পূর্বোক্ত বেদগর্ভ বারটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন৷ তাঁর সেই দ্বাদশ পুত্রের মধ্যে একজনের নাম ছিল হল৷ তিনি যে গ্রামটি পান তার নাম গঙ্গ৷ ফলে হলের সন্তানরা সবাই গঙ্গোপাধ্যায় বলেই পরিচিত হতে লাগলেন৷ এইভাবেই গঙ্গোপাধ্যায় পদবীর উৎপত্তি৷

হলের অধঃস্তন চতুর্দশ পুরুষ ছিলেন কামদেব গঙ্গোপাধ্যায়৷ তিনি ছিলেন শুদ্ধাচারী শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত৷ দিবারাত্রি জপতপ আর শাস্ত্রচর্র্চতেই তিনি নিমগ্ণ থাকতেন৷ সংসারী হলেও সংসার বন্ধন তাঁর ভালো লাগতো না৷ বৈরাগ্যের টানে ছুটে যেতে তাঁর মন উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠলো৷ কিন্তু তাঁর স্ত্রী ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী৷ স্ত্রীর ভালোবাসা আর সেবা যত্নের মোহে কামদেব সংসার ত্যাগ করতে পারছিলেন না৷

অবশেষে কামদেবের সংসার বন্ধন ছিন্ন করার এক সুযোগ এসে গেল৷ তাঁর অন্তঃসত্বা স্ত্রী পদ্মাবতী প্রচণ্ড প্রসব বেদনা সহ্য করতে না পেরে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে প্রাণত্যাগ করলেন৷ স্ত্রী বিয়োগের পর কামদেব তাঁর সদ্যোজাত মাতৃহীন শিশুর মায়ায় আবার আবদ্ধ হয়ে পড়লেন৷ কামদেব ভাবতে লাগলেন, সে চলে গেলে এই মাতৃহীন দুগ্দপোষ্য শিশুটিকে কে লালন পালন করবে৷

কামদেব একদিন ঘরে বসে পুত্রের চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে পড়লেন৷ হঠাৎ লক্ষ্য করলেন, ঘরের চাল থেকে একটি টিকটিকির ডিম তাঁর সামনে পড়লো৷ ডিমটি মাটিতে পড়েই ভেঙে গেল৷ আর ভাঙা ডিম থেকে বেরিয়ে এলো একটি ছোট্ট টিকটিকির বাচ্চা৷ আর ঠিক সেই সময় একটি পিঁপড়ে সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল৷ টিকটিকির বাচ্চাটি অমনি খপ করে পিঁপড়েটিকে খেয়ে ফেললো

এই দৃশ্য থেকে কামদেব বুঝলেন, ঈশ্বর সমস্ত প্রাণীর জন্য জন্মের পর থেকেই খেয়ে বাঁচার ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷ অতএব তাঁর সন্তান ও ঈশ্বরের কৃপায় অবশ্যই রক্ষা পাবে৷ এই ভেবে কামদেব সন্ন্যাসীব্রত অবলম্বন করে স্ত্রীকে শ্মশানে দাহ করলেন৷ তারপর একটি উত্তরীয় ধারণ করে সংসার ত্যাগ করলেন৷

শেষ মেষ হয় শেষ

লেখক
শিবরাম চক্রবর্তী

বঙ্গ সন্তান

          (রাজা) রামমোহন রায়

          নতুন ইতিহাস গড়তে,

সতীদাহ প্রথা রোধে

          আগেই গেলেন লড়তে৷

একসময় স্বামী মরলে

          সতীদাহ প্রথায়,

হিন্দু নারীর চিতায় তুলতো

          বলপ্রয়োগের দ্বারা৷

বীভৎস সেই দৃশ্য দেখে

          রামমোহনের মনে,

ভীষণভাবে পীড়া দিতেই

          ভাবতেন সর্বক্ষণে৷

হিন্দু শাস্ত্র ঘেঁটেঘুটে

          এমন প্রমাণ কিছু

যুক্তির তেমন না পেয়ে সার

           দেখেন অন্য কিছু৷

স্বামী মরলে তাঁর ভাগের

          অংশ স্ত্রীও পায়

সেই পথ রুখতে,

          শ্বশুর বাড়ীর লোক

(সতীদাহ প্রথায়)

          মারার পথ বেছে নেয়৷

ভাল কথা বুঝালেও

          এ পথ কেউ না ছাড়ে,

মানবতার খাতিরে তাই

(রামমোহন) এবার

                   তাঁর জেদ বাড়ে

শক্ত হাতে আইনের পথে

          রাজা রামমোহন রায়,

সতীদাহ প্রথা বিলোপ

          করে’ মহান হয়৷

মানুষের দায়

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

জঙ্গল কেটে সাফ করে শুরু

 নগরের পত্তন,

অজ্ঞাতসারে আহ্বান জানাই

 মরুভূমির জাগরণ৷

অনাবৃষ্টির করাল গাসে

মাটি ফেটে যায় ক্ষরায়,

তরুলতা বন শুকাইয়া যায়

 সবুজ ক্ষেত্র হারায়৷

বায়ু দূষণের প্রাদুর্ভাবে

 কমে যায় প্রাণবায়ু,

জীব নরকুল অকালে তাদের

 হারায় পরমায়ু৷

 একটি গাছ একটি প্রাণ,

সে গাছ লাগিয়ে হও সুমহান৷

যে গাছ মোদের দেয় ফুল, ফল,

 পক্ষী নীড় ও ছায়া সুশীতল,

সেই তরুতলে ভরে দিও জলে

 সেতো বাঁচিবার সম্বল৷