কোকিল ঃ ‘ক’ শব্দের উত্তর ‘ইলচ্’ প্রত্যয় করে আমরা ‘কিল’ শব্দ পাচ্ছি৷ কে+কিল= কোকিল, যার মানে হচ্ছে ধবনির মাধ্যমে যে সত্তা তার পরিচিতি জানিয়ে থাকে৷ এটা হ’ল ভাবারাঢ়ার্থ৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘কোকিল’ হচ্ছে একটি বিশেষ কৃষ্ণকায় পাখী৷ কোকিল>কোইল> কোয়েল৷ পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে পিক, পরভৃত৷ ‘পিক বলতে কোকিলের কুহুধবনিকেও বোঝায়, আবার কোকিলকেও বোঝায়৷
তুলনীয় ঃ
‘‘পিক কিবা কুষে কুঞ্জে কুছ গায়
ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মধু বায়?’’
কিংবদন্তী এই যে কোকিল ডিমে তা দিতে পারে না৷ তাই সে কাকের অনুপস্থিতিতে তার,বাসায় গিয়ে ডিম পেড়ে আসে৷ কাক ওই ডিমকে নিজের ডিম মনে করে যত্ন নেয় ও তা’ দেয়৷ ডিম ফেটে বাচ্চা ৰেরোবার পরে বাচ্চা যখন আবাজ করতে সক্ষম হয় তখন তার মুখ থেকে কোকিলের আবাজ বের হয়৷ কাক যখন দেখে যে সে পরের সন্তানকে নিজ সন্তান ভেবে পালন করেছিল তখন সে কোকিলের বাচ্চাকে নিজের বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়৷ পরকে সে ভরণ করে এই অর্থে কাকের নাম ‘পরভৃৎ’ আর পরের দ্বারা যার ভরণ করা হয়েছিল এই অর্থে কোকিল হচ্ছে ‘পরভৃত’৷ প্রসঙ্গতঃ মনে রাখা দরকার যে শ্র্ণতিমধুর কুহু কুহু ধবনি অর্থাৎ পিকধবনিটি বসন্ত ঋতুতে কোকিল-ই করে থাকে---কোকিলা নয়৷ একটি হিন্দীতে কবিতাতে আছে---‘‘কোয়লী নহীঁ ৰোলতী হৈ’’, গানে আছে ‘ডাকে দাদুরী’৷ আসলে বর্ষায় গলা ছেড়ে ডাক দেয় দর্দুর/দাদুর (পুরুষ ব্যাঙ)-দর্দুরী বা ‘দাদুরী’ (ব্যাঙ-ৰউ) ডাকে না৷ গানে আছে, নাচে ময়ূরী, ডাকে ‘দাদুরী’৷ কোলা ব্যাঙ, সোণা ব্যাঙ, কুনো ব্যাঙ, কটকটে ব্যাঙ, উড়ুকু ব্যাঙ-সব-ব্যাঙের ক্ষেত্রেই ওই একই কথা৷ ‘ব্যাঙ ৰউ’ ড্যাৰড্যাৰে চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে আর পুরুষ-ব্যাঙই গলা ফুলিয়ে আবাজ ছাড়ে৷ মনে পড়ে যায়, সেই মৈমনসিংহের গান--
‘‘মরি হায় রে হায়, মরি হায় রে হায়,
কচু ৰনে ভাওয়া* ব্যাঙে হার্র্মেনি ৰাজায়৷’’
আরও মজার কথা হচ্ছে এই যে ময়ূরীও নাচে না---নাচে ময়ূর৷ ময়ুরী একটি কুৎসিত দর্শন পাখী আর ঠিক উল্টোটা হচ্ছে ময়ূর৷ এত একটি অতি সুদর্শন পাখী৷ কোকিলের স্ত্রীলিঙ্গে ‘কোকিলী’ নয়-‘কোকিলা’ যদিও হিন্দীতে স্ত্রীলিঙ্গ রূপ ‘কোয়েলী’৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)