ঔষধ রোগকে হত্যা করে৷ তাই হত্যাকারী অর্থে ‘থুর্ব’ ধাতু ড করে যে ‘থ’ শব্দ পাই তার একটি যোগরূঢ়ার্থ হচ্ছে ঔষধ৷ এই ঔষধ যে কেবল শারীরিক রোগের ঔষধ তাই নয়, মানসিক রোগের ঔষধও৷ মানসিক রোগের যতরকম ঔষধ আছে তার একটা নাম হচ্ছে মানুষের মনে রসচেতনা জাগিয়ে তার মনকে হালকা করে দিয়ে ব্যথাভার সরিয়ে দেওয়া–চিন্তাক্লিষ্টতা অপনয়ন করা৷ এজন্যে প্রাচীনকালে এক ধরনের মানুষ থাকতেন যাঁরা মানুষের মনকে নানান ভাবে হাসিতে খুশীতে ভরিয়ে রাখতেন৷ মন ভাবে–ভাবনায় আনন্দোচ্ছল হয়ে উপচে পড়ত৷ এই ধরনের মানুষেরা শিক্ষিত বা পণ্ডিত থেকে থাকুন বা না থাকুন এঁরা মানব মনস্তত্ত্বে অবশ্যই পণ্ডিত হতেন৷ এঁদেরই বলা হত বিদুষক৷ বিদুষকের ভাববাচক বিশেষ্য (abstract noun) ‘বৈদুষ্য’ শব্দটির সঙ্গে নিশ্চয়ই তোমরা ভালভাবেই পরিচিত৷
‘‘বাক্ বৈখরী শব্দঝরী শাস্ত্র ব্যাখ্যান কৌশলম্৷
বৈদুষ্যং বিদুষাং তদ্বৎ ভুক্তয়ে ন তু মুক্তয়ে’’৷
বিদুষকের বিদ্যেৰুদ্ধি থাক্ বা না থাক্ তাঁদের মনস্তত্ত্বের জ্ঞান থাকা দরকার, উপস্থিত ৰুদ্ধি (Ready wit) থাকা তো চাই–ই৷ তোমরা অনেকেই নিশ্চয় মুর্শিদাবাদের শরৎচন্দ্র পণ্ডিত মহাশয়ের নাম শুনেছ৷ তাঁর মত উচ্চমানের বিদুষক খুব কমই জন্মেছেন৷ সাধারণের মধ্যে ‘দাদাঠাকুর’ নামে পরিচিত এই মানুষটি ‘বিদুষক’ নামে একটি পত্রিকাও ছাপাতেন৷ সেবার ৰহরমপুরে বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে৷ উপস্থিতদের মধ্যে শরৎচন্দ্রপণ্ডিত মহাশয় তো আছেনই, আর ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি তখন প্রতিষ্ঠার তুঙ্গে৷ তাঁর লেখা ‘চরিত্রহীন’ পুস্তকটির তখন ‘খোলা থেকে নোলা’ গরমাগরম আলুর চপের মতই ৰাজারে ৰেজায়** কাটতি৷
শরৎ চাটুজ্জে নামকরা কথাশিল্পী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু ভাষণ ভাল দিতে পারতেন না.....মজলিসী গল্পগুজবে ছিলেন ওস্তাদ৷ সবাই তাঁকে ধরে বসল–‘‘আপনাকে এখানে কিছু বলতেই হবে৷’’ শরৎ চাটুজ্জে দু’এক মিনিট দায়সারা গোছের কিছু বলে বসে পড়লেন৷ আর বসার আগে বললেন–‘‘আমি আর এখানে ৰেশী কিছু বলব না–বলবেন বিদুষক শরৎচন্দ্র৷’’
শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (দাদাঠাকুর) উঠে খানিকক্ষণ বললেন আর বসার আগে বললেন–আমি আর কতটুকু জানি, আমার চেয়ে ঢ়ের ৰেশী জানেন ওই ‘চরিত্রহীন’ শরৎচন্দ্র৷