শব্দটি মূলতঃ ফার্সী, ৰাংলা ভাষায় এসেছে মোগল যুগের গোড়ার দিকে--যার মানে ইংরেজীতেmirror, কাচ অর্থেও ‘আয়না’ শব্দের ব্যবহার উর্দু, ফার্সী, পঞ্জাৰী, ডোগরী, কশ্মীরী, পশ্তু ভাষায় রয়েছে৷ ‘আয়না’-র খাঁটি ৰাংলা শব্দ হচ্ছে ‘আরশী’ (আরশী একটি খাঁটি তদ্ভব শব্দ, এসেছে মূল শব্দ ‘আদর্শী’ থেকে৷ হিন্দতেও ‘আরসী’, মারাঠীতেও আরসী/আরসা৷ উত্তর ভারতে আরসীপ্রসাদ নামে লোক বিরল নয়৷ মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছেন--‘‘সরসী আরশী মোর’’৷
‘আয়নার’ পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে দর্পণ, মুকুর প্রভৃতি ৷ ‘দর্পণ’ শব্দের প্রাকৃত রূপ ছিল ‘দপ্পন’ যার থেকে প্রাচীন ৰাংলায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘দাপন’৷ বৌদ্ধ যুগের ৰাংলায় ‘হাথের কাংকন মা লেউ দাপন/অপ্পণে অপ্পা ৰুঝত নি মন৷’ এই ‘দাপন’ শব্দটি বা তার কোন বিবর্তিত রূপ বর্তমান ৰাংলায় চলছে না৷ ‘মুকুর’ শব্দটি কথ্য বাংলায় ব্যবহৃত হত না বা হয় না৷ তবে ৰাংলা সাহিত্যে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷
হ্যাঁ ৰলছিলুম, ‘আয়না’ শব্দটি কাচ অর্থে কিছুটা চলে৷ কাচের নিজস্ব ফার্সী উর্দু শব্দ হচ্ছে ‘সীসা’৷ শব্দটি হিন্দীতেও চলে৷ কিন্তু ৰাংলায় চলে না ও ৰাংলায় ব্যবহৃত হওয়া উচিতও নয়৷ কারণ সংস্কৃত ‘সীসক’ lead) শব্দটির তত্ত্ব রূপ সীসা/সীসে৷ ৰাংলায় lead’ অর্থে চলে৷ কাচকে ‘সীসা’ ৰললে অর্থবিভ্রান্তি দেখা দেৰে, যে বিভ্রাস্তি হিন্দীতে কখনও কখনও দেখা যায়৷ সংস্কৃতে পাতলা ৰা সাধারণ কাচকে কাচ’’ ৰলা হয়--মোটা কাচকে ৰলা হয় ‘স্ফটিক’৷ এই স্ফটিকের তদ্ভব রূপ ‘ফটিক’৷ ফটিক ‘জল’ শব্দটি তোমরা অনেকেই শুনেছ--- যার মানে কাচের মত পরিষ্কার জল transparent কিন্তুtransclucent নয়)৷ ৰাঙ্গালীর ছেলের ডাক নাম হিসেবে ‘ফটিক’ শব্দের ব্যবহার রয়েছে৷ ‘কাচ’ শব্দটি সংস্কৃতে লেখা হৰে ‘কাচ’ পড়াও হবে তাই! ৰাংলায় লেখা হৰে ‘কাচ’ পড়তে হবে ‘কাঁচ’৷ আর হিন্দীতে লেখাও হবে ‘কাঁচ’, পড়তেও হবৰে ‘কাঁচ’৷ যেমন সংস্কৃতে ‘সঃ হসতি’ (সে হাসছে)৷ ‘হস্’ ধাতুতে চন্দ্রবিন্দু নেই, চন্দ্রবিন্দু দিয়ে পড়তেও হয় না৷ ৰাংলায় লিখতে হবে ‘সে হাসছে’, কিন্তু পড়তে হবে ‘সে হাঁসছে’৷ কিন্ত উর্দূ হিন্দীতে লিখতে হবে ‘‘বহ্ হঁসতা হৈ’’৷ বাংলার নিজস্ব শব্দ ‘আরশী’ আজও বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে৷ তাই একান্ত প্রয়োজনৰোধে ‘আয়না’র ব্যবহার হোক, তবে অকারণে ‘আরশী’-র বদলে ‘আয়না’ শব্দের ব্যবহার না করাই সমীচীন৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)