সর্বভারতীয় একটি সমীক্ষায় প্রকাশিত --- ৪৫ বছরের মধ্যে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা সর্বাধিক৷ আগুনের মতো হু হু করে বাড়ছে দেশে বেকার উচ্চশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা৷ কেন্দ্র রাজ্য কোন সরকারই বেকারত্ব সমাধানের জন্য এগিয়ে আসছে না৷ আমাদের রাজ্যে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বেকার সমস্যা সমাধানের জন্যে কখনো কখনো কিছু কিছু সমাধান বাতলে দেন৷ যেমন ধরুন চপ শিল্প বা তেলে ভাজা শিল্প৷ আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে বেকার যুবকদের চাকরি দাবীতে আন্দোলন করতে হয়৷ যে আন্দোলন পুলিশের লাঠির আঘাতে শেষ হয়ে যায়, শুরু হয় অবদমন৷ যে দেশ চাকরীর নিয়োগ এর পরীক্ষায় সীমাহীন দুর্নীতি স্বজন পোষণ বেআইনি অর্থ আদান-প্রদান এসব অনায়াসে ঘটতে পারে৷ এত কিছুর পরেও প্রতিবাদ না করে চুপ করে বসে থাকা যায় কি?
টানা ২৮দিন ধরে কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে সারা রাজ্য থেকে প্রায় চার শতাধিক হবু এস.এস.সি এর শিক্ষকরা অনশনে বসেছেন এ কথা আজকাল আমরা সবাই জেনেছি, তাদের একটাই দাবী, নিয়ম মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক৷ যারা কৃতকার্য হয়েছেন তাদের সকলের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হোক৷ এরা প্রত্যেকেই নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে৷ এরা প্রত্যেকেই ওয়েটিং লিস্টে রয়েছে, চাকরী পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন৷ অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সন্তোষজনক বার্র্ত পাওয়া যায়নি৷ মাথার ওপর কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে ঘন্টার পর ঘন্টা তারা বসে আছেন, রাতের বেলা মশার কামড় সহ্য করেও রাতের পর রাত কাটিয়েছেন৷ মাথার উপর সামান্য ত্রিপল টাঙ্গানোর অনুমতি পুলিশ দেয়নি৷ ইতিমধ্যেই দুজন অনশনকারীর গর্ভস্থ ভ্রুণ নষ্ট হয়েছে, প্রায় ৪০ থেকে ৯০ জন অনশনকারী গুরুতর অসুস্থ হওয়াতে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে, সেখানে তারা চিকিৎসাধীন৷ এরমধ্যে কালবৈশাখীর ঝড়ে বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ তবু তারা হাল ছাড়েননি, আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসেননি৷ মাঝে একবার শিক্ষামন্ত্রীর আগমন ঘটেছিল কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷ তিনি অনশন তুলে নেওয়ার কথা বলেছিলেন আন্দোলনকারীরা তা মানতে পারেননি৷ মন্ত্রীমশাই যা বলেছিলেন তা কেবল মৌখিক কোন লিখিত প্রতিশ্রুতি ছিল না, তার চেয়ে বড় কথা তার কথায় বিশ্বাস রাখতে পারেননি অনশনকারীরা৷
তবে আশার আলো এই যে শঙ্খ ঘোষের মতো প্রবাদপ্রতিম কবি চিন্তক তার নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন অনশনকারীদের পক্ষে৷ কবি মন্দাক্রান্তা সেন অনশনকারীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন৷ প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তিনি ও তার নৈতিক সমর্থন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন৷ আন্দোলনের প্রাপ্তি বলতে গেলে এটুকুই৷
এই প্রবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত এই অসহায় নিরুপায় উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীর মর্মবেদনার ভাগীদার হতে পারেননি পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ তবুও তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করবেন ও তাদের সমস্যার, সমাধান হবে৷ এখন দেখার মুখ্যমন্ত্রী কবে কখন কীভাবে এই হবু শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালান৷ ভবিষ্যতের মানুষ তৈরীর কারিগর যারা, যাদের হাতে দেশগড়ার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তাদেরকে উপেক্ষা বা অবহেলা করে বা তাদের প্রাপ্য অধিকার বঞ্চিত করে আখেরে কার লাভ হবে৷ সমাজের শুভবুদ্ধি সম্পন্নকল্পে রাজ্য সরকারেব মানবিক দিকটিকে দেখতে চান৷
(শেষ পর্যন্ত ২৭শে মার্চ মুখ্যমন্ত্রী অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন ও নির্বাচনের পর তাদের জন্যে কিছু করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ও এই পরিপ্রেক্ষিতে পরে তারা অনশন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন৷ ---সম্পাদক)
- Log in to post comments