আর্তি

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

হে আচার্য, আজ আমারো কাণে মন্ত্র দাও দিকি---

আমি ও কবি হব---যেমন হয়েছিলেন বাল্মিকি

রাম নাম মন্ত্রে৷

আজ আমাকেও দীক্ষিত করো তন্ত্রে৷

আমিও লিখবো এক মহাজীবনের কথা---

যে-জীবন কখনো নীলকন্ঠ, কখনো কারাবাস---

তবু ও যে জীবন হয়নি স্তব্ধ,

হয়নি রাষ্ট্রীয় ত্রাসের দাস৷

আমি যে দেখেছি তাঁকে, কল্পলোকে নয়,

এই মাটির পৃথিবীতে

দুই নয়নের মুগ্দ দৃষ্টিতে৷

আমি যে দেখেছি তাঁকে অস্থি-মাংস সহ,

ক্ষণে ক্ষণে স্মরণে তাই মনে জাগে বিরহ দুঃসহ৷

সহধর্মীনীর অসহযোগে তিনি তো হননি বিহ্বল,

তাঁর কর্মযোগী, ত্যাগব্রতী গৈরিক ভক্তরা যখন

অগ্ণি-দহনে করছিল মরণকে বরণ,

তখনো তাঁর আদর্শের দীপশিখা হয়নি নির্বাপিত,

বরঞ্চ ঘাতকের পাতকের দল

জন-মানস থেকে হয়েছে নির্বাসিত৷

আজ তারা বিধবস্ত ধিকৃত, হেয়---

যেন খেদানো রাস্তার সারমেয়৷

 

হে আচার্য, আজ আমারো কাণে মন্ত্র দাও দিকি---

আমিও কবি হব--- যেমন হয়েছিলেন বাল্মিকী৷

আজ আমি করেছি মনোস্থির ---

সেই মহাজীবনের কথায় গড়ে তুলবো

আমার কাব্যের শরীর৷

বর্ণের বন্ধনী ছিন্ন করে

কাব্যের অক্ষরে অক্ষরে উৎসারিত

মুখরিত হবে তাঁর জীবনের অমৃতবাণী,

পঠনে মননে শ্রবণে অপসৃত হবে আত্মগ্লাণি৷

 

হে পাঠক, একথা সত্য, নই আমি

কবি-যশ-প্রার্থী-

আমার কাব্যে প্রচারিত হবে

সেই মহাজীবনের কথা---

এই আমার আর্তি৷

 

হে পাঠক, কাব্যে আমার থাকবে পাতা

তাঁরই আসন,

শুণবে তোমরা কাণে কাণে

তারই ভাষণ

এসে গেছে সেই শুভক্ষণ,

কর-জোড়ে করি তাই নিবেদন---

হে আচার্য, আজ আমারো কাণে মন্ত্র দাও দিকি---

আমিও কবি হব--- যেমন হয়েছিলেন বাল্মীকি৷