মার্জার জাতীয় পশুর ঘ্রাণশক্তি বেশী । মাছ বা দুধ ভালোভাবে ঢাকা দেওয়া থাকলেও বিড়াল তার আশে-পাশে ঘুরঘুর করে । এই বস্তুটিকে সে দেখতে পায়নি কিন্তু গন্ধ পেয়েছে । বাঘ অনুকূল হাওয়া পেলে কয়েক মাইল দূরের গন্ধও পেয়ে যায়; সে বুঝতে পারে সেখানে কোন্ প্রাণী রয়েছে – মানুষ না বুনো-শোর, মোষ না কাঁকর হরিণ । মানুষের গন্ধগ্রহণ পরিভূর চেয়ে মার্জার বর্গীয় জীবের বিশেষ করে বাঘের গন্ধগ্রহণ পরিভূ বেশী । তাই ব্যাঘ্র শব্দটি আসছে বি-আ-ঘ্রা+ড প্রত্যয় করে, যার মানে হচ্ছে যার বিশেষ রূপ আঘ্রাণ শক্তি রয়েছে । ব্যাঘ্র > বাঘ্ঘ > বাগ্ঘ > বাগ/বাঘ ।
ব্যাঘ্রতটী > বাগ্ঘঅডি > বাগ্ঘডি > বাগড়ি । ‘বাগড়ি’ মানে মধ্য বাংলা বা সুপ্রাচীন সমতট ভূমি । ব্যাঘ্রভূম বলতে সমতটকে বোঝায় না, ব্যাঘ্রভূম বলতে বোঝায় সুবর্ণরেখা অববাহিকাকে । অর্থাৎ রাঁচী থেকে সুবর্ণরেখার সেই অংশ পর্যন্ত যতক্ষণ ক্ষকায়া (ক্ষরকাই) নদীটি সুবর্ণরেখার সঙ্গে মিশেছে । এই অংশটি প্রাচীনকালে পাছোটি বা পঞ্চকোট রাজ্যের অধীনে ছিল । পরবর্ত্তীকালে রাতু মহারাজা এই অংশটি দখল করেন । রাঢ়ীবাংলায় যে কথ্য ভাষাটি এখানে প্রচলিত তা পাঁচপরগণীয়া ভাষা নামে পরিচিত (সিল্লি, সোণাহাতু, বুন্দু, তমার, আরকি, আঙ্গারা) আসলে সুবর্ণরেখা অববাহিকার উর্ধাংশ অর্থাৎ আঙ্গারা, সিল্লি, সোণাহাতু, তমার, বুন্দু, আরকি প্রভৃতি অঞ্চল ব্যাঘ্রভূম নামে ও ওই অববাহিকার নিম্নাংশ সিংভূম নামে পরিচিত ছিল ।
(সূত্রঃ প্রভাত রঞ্জন সকারের “গন্ধ পরিক্রমা)