বাংলা নামে সায় নেই ‘আমরা বাঙালী’র

লেখক
মনোজ দেব

২৭শে জুলাই দিল্লী গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের  নাম বাংলা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন৷ ‘আমরা বাঙালী’ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও দলের ছাত্র যুব বাংলা নেতা তপোময় বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সংঘটন সচিব পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলা রাখার তীব্র বিরোধিতা করেন৷

তাঁদের এই বিরোধিতা অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ৷ ভারতবর্ষে পশ্চিম বাঙলাই বাঙলার একমাত্র ভূখণ্ড নয়৷ বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপূর্বে অসম মেঘালয়ের সঙ্গে যুক্ত আছে বাঙলার বৃহৎ অংশ৷ তাছাড়া সমগ্র ত্রিপুরাও বাঙলার অংশ৷ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বাঙলাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল ও  জনগোষ্ঠীগতভাবে সংখ্যালঘু করার জন্যে বাঙলাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ পরাধীন ভারতে বাঙলার অংশ বাঙলাকে ফেরৎ দেবার দাবী উঠলে তৎকালীন জাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দেশ স্বাধীন হলে বাঙলার অংশ বাঙলাকে ফেরৎ দেওয়া হবে৷ কিন্তু দেশ ভাগ করে, ক্ষমতা হস্তান্তর করে ব্রিটিশ ভারত ছেড়ে চলে গেলেও দেশের স্বাধীন সরকার সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ নীতি অবলম্বন করে চলছে৷ তাই তথাকথিত স্বাধীন ভারতে বাঙলা একইভাবে শোষিত বঞ্চিত অবহেলিত৷ বাঙলার অংশ বাঙলাকে ফেরত তো দেওয়াই হলো না,উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর  বাঙলা ভূখণ্ডের বাঙালী ভূমিপুত্রদের মুখের ভাষাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ আজতো তাদের বিদেশী বানাবার চক্রান্ত চলছে৷ খোদ পশ্চিম বাঙলাতেও অবাঙালী অধিপত্য দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন কি খুব জরুরী?

বাংলা নামের মধ্য দিয়ে পূর্ণ বাংলার পরিচয় বহন করবে৷ তখন বাঙলা বলতে শুধু পশ্চিম বাঙলাই থাকবে৷ এমনিতেই আজকের বাঙালী প্রজন্মের মন থেকে ক্রমশঃ বাঙালী চেতনা হারিয়ে যাচ্ছে৷ অতি কৌশলে হিন্দি অসংস্কৃতির স্রোত বহিয়ে দিয়ে বাঙলার উন্নত ভাষা সংস্কৃতিকে ধবংস করে বাঙালী জনগোষ্ঠীকে বিলুপ্ত করার চক্রান্ত করে চলেছে নেহেরু  থেকে নরেন্দ্র মোদী দিল্লীর সাম্রাজ্যবাদী শাসক৷ বাঙলার খনিজ, বনজ, জলজ কৃষিজ সম্পদ অবাধে লুণ্ঠন হচ্ছে৷ প্রতিবেশী রাজ্য বাদ দিন, আজ পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলিকাতার বুকেও বাঙালী তার ভাষা সংস্কৃতির অধিকার হারাচ্ছে৷ এব্যাপারে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়া এক জলন্ত দৃষ্টান্ত৷ একদা এই ভাটপাড়া ছিল সংস্কৃত পণ্ডিতদের বাসস্থান৷ তাঁদের অধিকাংশের পদবী ছিল ভট্টচার্য৷ সেই অনুসারে অঞ্চলটির নাম হয় ভট্টপাড়া৷ পরবর্তীকালে ভট্টপাড়া--- ভাটপাড়ায় পরিণত হয়৷  আজ সেখানে  অবাঙালী জুট মাফিয়াদের আধিপত্য৷ একদিন যেখানে ভোরের আলোয় বৈদিক মন্ত্রশুণে নির্মলানন্দে মানুষ জেগে উঠতো আজ সেখানে বোমার আবাজে আতঙ্কের প্রহর গুণতে হয় মানুষকে৷ বাঙালী যদি এখনই সচেতন না হয় তবে গোটা পশ্চিমবঙ্গ একদিন ভাটপাড়ায় পরিণত হবে৷

এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ নাম পরিবর্তন খুব জরুরী নয়৷ বরং এই নামের  মধ্য দিয়েই এক টুকরো বাঙলার পরিচয় বহন করছে৷ এই পরিচয় মুছে দিয়ে নাম পরিবর্তন নয়,প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর বাঙলার অংশ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করে বাঙলা নামে কারো আপত্তি থাকবে না থাকার  কথাও নয়৷

বাংলা বানান প্রসঙ্গে কিছু কথা৷  মহান দার্শনিকও ভাষাবিদ শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার, বানান বিভ্রাট দূর করতে ভাষার ক্ষেত্রে বাংলা, ভৌগোলিক অবস্থান ও জনগোষ্ঠী বোঝাতে বাঙলা বানান ব্যবহার করেছেন৷ তাই এই বিধি মেনে চললে ভাষা, জনগোষ্ঠী ও ভৌগোলিক অবস্থান বোঝাতে বানানে স্বচ্ছতা থাকবে৷