‘কৃষ্ণ’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল মহর্ষি বেদব্যাস৷ মহর্ষি বেদব্যাস প্রয়াগে গঙ্গা–যমুনার সঙ্গমস্থলের নিকটে যমুনা থেকে উত্থিত একটি কৃষ্ণ দ্বীপে জালিক–কৈবর্ত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ যমুনা নদীর নিকটস্থ মৃত্তিকা হ’ল কৃষ্ণ কর্পাস মৃত্তিকা (ব্ল্যাক কটন সয়েল)৷ এই জন্যে যমুনার জলকেও কালো রঙের বলে মনে হয়৷ যমুনার যে চরটিতে মহর্ষি ব্যাস জন্ম গ্রহণ করেন সেটিরও ছিল কৃষ্ণমৃত্তিকা৷ ভারতের ইতিহাসে ব্যাস নামে কয়েক জনই খ্যাতনামা পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন (উত্তর মীমাংসার বাদরায়ণ ব্যাস)৷ তাঁদের থেকে পৃথক করার জন্যে এঁকে বলা হত কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস অর্থাৎ কালো রঙের দ্বীপের অধিবাসী ব্যাস৷ এই কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস মহাভারতের লেখক৷ ইনি বেদকে ঋক্, সাম, যজু ও অথর্ব এই চারিভাগে বিভাজন করেন তাদের কালগত পরিচিতি বুঝে৷ এই জন্যে তিনি ভারতের ইতিহাসে বেদব্যাস নামেও বিখ্যাত৷ যেহেতু এঁর পুরো নাম কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাস সেহেতু এঁকে সংক্ষেপে কৃষ্ণ ঋষিও বলা হত৷ আজকের দিনে যাঁরা জাতপাতের ভুরকুটি (শব্দটি ‘ভ্রুকুটি’ থেকে এসেছে) করেন তাঁদের মনে রাখা দরকার যে ব্যাসদেব যখন বেদের বিভাজন করেছিলেন তখন নিশ্চয়ই তাঁর বেদজ্ঞানে ও বেদে অধিকার ছিল৷ তবে আজকে তাঁরা জালিক কৈবর্ত্তকে ছোট বলে মনে করেন কোন যুক্তিতে যে কোন উচ্চ বর্ণের মানুষ মহর্ষি বেদব্যাসের চরণ–ধূলি মাথায় নিয়ে কৃতার্থ হত না কি তাহলে কোন জালিক কৈবর্ত্ত কুলজাত মানুষ যদি স্বমহিমায় শ্রেষ্ঠ হন তবে কোন তথাকথিত উচ্চ কুল–জাত মানুষ তাঁর চরণধূলি মাথায় নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করবেন না কি।
- Log in to post comments