হাজরা ঃ বাংলায় ব্যবহূত ‘হাজরা’ শব্দটি একটা সামরিক র্যাঙ্ক বা পদবিশেষ৷ এক সহস্র (ফার্সীতে, ‘হজার’) সৈনিকের যিনি অধিপতি তিনি হলেন ‘হজারা’৷ ভুল করে একেই বলা হয় ‘হাজরা’৷ তেমনি আসলে ফার্সী শব্দটা হচ্ছে ‘হজারিবাগ’৷ বাংলায় যখন ‘হাজারিবাগ’ বলি তখন কিন্তু কাউকেই হাসতে দেখি না অর্থাৎ ভুল উচ্চারণটাই মেনে নেওয়া হয়েছে৷
দস্তিদার ঃ ‘দস্ত্’ শব্দযুক্ত অনেক ফার্সী শব্দ বাংলায় রয়েছে৷ যেমন, দরাজদস্ত্, দস্তানা, দস্তাবেজ, দস্তখৎ, দস্তিদার প্রভৃতি৷ ফার্সীতে ‘দস্ত্‘ কথাটার মানে হ’ল হাত৷ যার হাত খুব উদার সে হ’ল ‘দরাজদস্ত্’৷ হাতের চিহ্ণ হ’ল ‘দস্তখৎ’৷ হাতে যা পরা হয় তা হ’ল ‘দস্তানা’৷ হাতের লিখিত প্রমাণ ‘দস্তাবেজ’৷ সরকার বা শাসককুলের যিনি হস্তস্বরূপ তিনি হচ্ছেন ‘দস্তিদার’৷ বাঙলায় ‘দস্তিদার’ পদবীযুক্ত অনেক লোক আছেন৷
হিন্দু ঃ স্পষ্ট কথা প্রাচীনকালে ‘হিন্দু’ শব্দটি ছিল না৷ ‘হিন্দু’ শব্দটি হচ্ছে একটি ফার্সী শব্দ, যার মৌল অর্থ হচ্ছে সিন্ধু নদীর অববাহিকা অথবা তৎসন্নিহিত এলাকায় যে জনগোষ্ঠী বাস করে থাকেন৷ তা’ তাঁরা যে কোন ধর্মমতাবলম্বী হউন না কেন, তাঁরা সবাই হিন্দু৷ অর্থাৎ ‘হিন্দু’ শব্দটি সম্পূর্ণতই একটা দেশবাচক শব্দ৷ আজকাল যাঁদের হিন্দু বলি তাঁরা দেশবাচক অর্থে হিন্দু তো বটেই, ধর্মগত কারণে ‘আর্ষ’ মতাবলম্বী৷ কিন্তু বর্ত্তমানে যেহেতু আর্ষ মতের বদলেও ‘হিন্দু’ শব্দটা ব্যবহূত হচ্ছে তাই আজ যাঁরা তথাকথিত হিন্দু তাঁরা দেশবাচক অর্থেও হিন্দু মতগত বিচারেও হিন্দু৷ কিন্তু ভারতে যাঁরা তথাকথিত অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোক রয়েছেন তাঁর দেশবাচক অর্থে হিন্দু কিন্তু মতগত বিচারে হিন্দু নন, তাঁদের নিজের নিজের ধর্মমত বা রেলিজন্ (religion) রয়েছে৷