‘ব্রাহ্মণ’ শব্দটির নানান ব্যাখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে৷ তবে মুখ্যতঃ এর অর্থ হ’ল ব্রহ্মজ্ঞ৷ মনে রাখা উচিত, বিপ্র ও ব্রাহ্মণ এক শব্দ নয়৷ ‘বিপ্র’ মানে ৰুদ্ধিজীবী (intellectual) আর ‘ব্রাহ্মণ’ শব্দের ব্যাখ্যায় ৰলা হয়েছে– ‘‘জন্মনা জায়তে শূদ্রঃ সংস্কারাৎ দ্বিজ উচ্যতে৷
বেদপাঠাৎ ভবেৎ বিপ্রঃ ব্রহ্ম জানাতি ব্রাহ্মণঃ’’৷৷
জন্ম সূত্রে সকলেই শূদ্র, দীক্ষা সংস্কারের পর মানুষ হয় দ্বিজ৷ দীক্ষা–সংস্কারটিকে নূতন জন্ম ৰলে গণ্য করা হয় এই জন্যে যে দীক্ষা গ্রহণের পর মানুষের জীবনধারা পাল্টে যায়৷ সে নূতন ভাবে জীবনকে দেখতে শেখে ও তদনুযায়ী চলতে শেখে৷ তাই দীক্ষা সংস্কারের পর প্রতিটি মানুষ দ্বিজ হয়ে যায়৷ সাধারণতঃ মানুষের দাঁত দু’বার জন্মায়৷ এই কারণে দাঁতকেও ‘দ্বিজ’ ৰলা হয়৷ পতঙ্গ, সরীসৃপ, পক্ষীকুল ও বিভিন্ন ধরণের অ–স্তন্যপায়ী জীব (Non-mammal) প্রথমে মাতৃগর্ভ থেকে অণ্ডরূপে প্রসূত হয় (সংস্কৃতে ‘অণ্ড’ থেকে ‘অণ্ডা’ আর ‘ডিম্ব’ থেকে এসেছে ‘ডিম’)৷ তারপর ধরিত্রীর গর্ভে কিছুদিন আবশ্যকীয় উত্তাপের মধ্যে থাকার পর নিজে–নিজেই অণ্ড থেকে নির্গত হয়৷ তাই এদেরও দু’বার জন্ম হচ্ছে, এই কারণে সমস্ত অণ্ডজ প্রাণীকে দ্বিজ ৰলা হয়৷
‘ব্রাহ্মণ’ সম্বন্ধে বুদ্ধ বলেছেন– ‘‘জস্স পুরে চ পচ্ছে চ মজ্ঝে চ নত্থি কিংচনং৷
অকিংচনং অনাদানং তমহং ব্রুমি ব্রাহ্মণ৷৷’’
–যে কোন আকাঙক্ষার পেছনে ছুটে যাচ্ছে না, যে অতীতের কোন আকাঙক্ষাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকছে না, যে কোন আকাঙক্ষা মনে পুষে রাখছে না, যে কারও কাছ থেকে কিছু চায় না, যে কারও কাছ থেকে কিছু নেয় না তাকেই ব্রাহ্মণ ৰলি৷