চিচিঙ্গা
এটি একটি সরু লম্বা ধুন্দুল বর্গীয় সব্জী---গায়ে ডোরা কাটা৷ গুণের দিক দিয়ে তরকারীটি তামসিক--- মনস্থৈর্যের প্রতিকূল৷ সব্জীটিকে আমাদের কলকাতার বাংলায় বলা হয় চিচিঙ্গা৷ রাঢ়ের অধিকাংশ স্থানে লা হয় ‘হোপা’ ও াঙলার কোন কোন স্থানে ‘কুশ্যে’৷ সংসৃকতে প্রচলিত দুটি নাম ---গোশৃঙ্গ (গোরুর শিং-এর মত) ও কুসুম্ভ৷ প্রাচীনকালেও লোকে এর দুর্গুণের কথা জানত ও বুদ্ধিজীবী মানুষকে এই সব্জী খেতে নিষেধ করা হত৷
‘‘কুসুম্ভ-নালিকাশাক-ন্তাকং-পোতকীস্তথা৷
ভক্ষয়ন্ পতিতোহস্তু স্যাদপি বেদান্তগঃ দ্বিজঃ৷৷’’
চিচিঙ্গা, নালিকা শাক (ডাঙ্গার কলমী জলের কলমীকে সংসৃকতে বলে ‘কলম্বী’---তার গুণও অনেক), শাদা গুেন, লাল পুঁই প্রভৃতি সব্জী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে বেদান্তজ্ঞ সুপণ্ডিত মানুষের পতন ঘটে থাকে৷
চিংড়ি
অনেকে চিংড়িকে ভুল করে মাছ বলে থাকেন৷ মাছের সঙ্গে চিংড়ির সম্পর্কই নেই৷ চিংড়ি একটি জলজ কীট৷ পচা জলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়৷ রাঢ়ের কোন কোন অঞ্চলে ও অবশিষ্ট বাঙলার কোথাও কোথাও একে ইচামাছও বলা হয়৷ গ্রামের নামও আছে ‘ইচাডি’, ‘ইচাগড়’ প্রভৃতি৷ ইংরেজীতেও একে মাছ বলে স্বীকার করা হয় না, বলা হয়Lobster, মাছ নয় তো মাছ বলবেই বা কেন? যাঁদের মাছ খাবার অনুমতি (যেমন, গৌড়ীর বৈষ্ণবদের) তাঁদের কেউ কেউ চিংড়িকে মাছের পর্যায়ভুক্ত মনে করে তা খেয়ে থাকেন৷ আবার বলি, চিংড়ি মাছ নয়, চিংড়ি পচা জলের পোকা৷ নোনা ও মিষ্টি জল ভেদে পৃথিবীতে অনেক প্রজাতির চিংড়ি আছে৷ বাঙলার সমুদ্র সন্নিহিত নদী ও খাড়িগুলিতে লালচে রঙের চিংড়ি পাওয়া যায়৷ এই চিংড়িগুলি দুষ্প্রাচ্য ও ভক্ষণকারীকে নানান উপসর্গে ভুগতে হয়৷ মিষ্টি জলের চিংড়ির মধ্যে আমাদের কলকাতায় গলদা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি, মোচা চিংড়ি, কুচো চিংড়ি, কাদা চিংড়ি প্রভৃতি নানান ধরণের চিংড়ি দেখতে পাওয়া যায়৷ কলকাতা অঞ্চলের লোকেরা না খেলেও বাঙলার কোথা কোথাও লোকেরা শুঁটকি চিংড়িও খেয়ে থাকে৷ নোনা ইলিশের মত এই শুঁটকি চিংড়িও অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত ও পেটের পক্ষে মোটেই ভাল নয়৷ কতকটা চিংড়ির মত দেখতে বলে একধরণের উড়ুক্কু কীটকে আমরা উচ্চিংড়ে (উড়্+ চিংডে = উচ্চিংড়ে) বলে থাকি৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘু নিরক্ত থেকে সংগৃহীত)