মধ্যপ্রদেশের বসন্তপুরের-গ্রামের একটি ছবি দেখে সবাই বিস্মিত৷ একটি গরীব চাষী পরিবাবের ছবি৷ বাবা লাঙ্গল ঠেলছেন৷ আর লাঙ্গলে জোয়াল টানছেন তার দুই কন্যা-কুন্তী আর রাধা৷ এইভাবে জমি চাষ করছেন সর্র্দর কাহালা নামে এক চাষী৷ বলদের বদলে এভাবে মেয়েদের দিয়ে হালচাষ করছেন কেন? উত্তর দিলেন বাবা--- আর্থিক সামর্থ্যের অভাবেই মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে এইভাবে চাষের কাজে লাগিয়েছেন তিনি৷ বলদ কিনবার পয়সা তাঁর নেই৷ আর এভাবে চাষ না করলে পেটও চলে না৷ তাই বাধ্য- হয়ে এই কাজ করতে হচ্ছে৷
না---এই দারিদ্র্যের ছবি কেবলমাত্র মধ্যপ্রদেশের একটি বিশেষ গ্রামের নয়৷ সারা দেশেই ছড়িয়ে আছে এমন দারিদ্র্যের ছবি৷ এই তো পশ্চিমবঙ্গেই কিছুদিন আগে অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রয়ের খবর প্রকাশিত হয়েছিল৷ অভাবের তাড়নায় চাষীদের আত্মহত্যার খবর তো প্রায়ই প্রকাশিত হয়৷ সে আলুচাষীই ধানচাষী হোক বা বাদাম চাষী হোক৷ সর্বক্ষেত্রে চাষীদের দুর্দশার এই একই চিত্র৷
একই দিনে, ওই একই পত্রিকায় আর একটি খবরও অবাক করার মত! পশ্চিমবঙ্গে মালদা মেডিক্যাল কলেজে লাশ কাটা ঘরের চাকরীর জন্যে ২টি পদ খালি ছিল৷ শব ব্যবচ্ছেদের সময় চিকিৎসককে মৃতদেহ কাটাছেঁড়া করতে সাহায্য করবে তারা৷
এধরণের কাজে বেশি শিক্ষিত মানুষের প্রয়োজন পড়ে না৷ অষ্টম শ্রেণী পাশ হলেই চলে৷ কিন্তু এই চাকুরীর জন্যে যারা আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন তাদের মধ্যে যাচ্ছেন ডবল এম.এ,পি.এইচ.ডি ধারীরাও৷ গ্রুপ ডি’র কর্মীর জন্যে এত শিক্ষিত মানুষের আবেদন পত্র দেখে কর্তৃপক্ষও বিস্মিত৷ না, ভুল করে, এক---দুজন জন নয়৷ প্রচুর সংখ্যায় এই উচ্চশিক্ষিতদের আবেদন পত্র৷ এ থেকে বোঝা যায়, আমাদের দেশের দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যা কত তীব্র!
প্রধানমন্ত্রী তো ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ে তোলবার জন্যে----আমেরিকা-ফ্রান্সের ধাঁচে আমাদের দেশকে গড়ে তোলার জন্যে পাগল হয়ে উঠেছেন৷ দেশ বিদেশের পঁুজিপতিদের তোষামুদি করছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও৷ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত--- কি কংগ্রেসী, কি বিজেপি, কি বিপ্লবী সি.পি.এম-এর ‘সর্বহারা’ নেতারা--- সবাই৷ বড় বড় শিল্পের ঘটা করে শিলান্যাস হ’ল, কত শিল্প হল, কত বন্ধ হল৷ জিডিপি, পার ক্যাপিটা ইনকাম নাকি প্রতি বছর বাড়ছে৷ ভারতের অর্থনীতি নাকি বীরবিক্রমে এগিয়ে চলেছে৷ কিন্তু বঙ্কিম চন্দ্রের আমলের ‘রমা কৈবর্ত্ত ও হাসিম শিখদের--- সেই সমাজের দারিদ্র্য সীমার তলায় পড়ে থাকা মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হ’ল কি? শাইনিং ইন্ডিয়া’র উজ্বল আলো ওদের জীবনে আজও পৌঁছলো না কেন?
তার কারণ হল---স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন সরকারের অর্থনৈতিক ‘মূলনীতিটাই ত্রুটিপূর্ণ৷ সাংসৃকতিক ক্ষেত্রে কোনো পরিকল্পনা নামাতে হয় ওপর থেকে নীচের দিকে৷ কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করা উচিত নীচের থেকে ওপরের দিকে৷ নীচুর তলা থেকে শুরু করতে হয়৷ এখন রাজনীতিতে বসে জিডিপি’র হিসেব করে পরিকল্পনা করা হয়৷ বর্তমান অর্থনীতির নীতি হ’ল ‘ট্রিকল ডাউন ইকনমি’৷ ‘চঁুইয়ে পড়া অর্থনীতি ওপর তলার মানুষের হাতে বেশি পয়সা থাকলে তা চঁুইয়ে চঁুইয়ে গড়িয়ে পড়বে নীচে ও তাতে নীচুর তলার মানুষেরও অভাব মিটবে ৷
পঁুজিবাদী অর্থনীতির মূলকথা এইটাই৷ এটাকেই আজকের সমস্ত দল---ডান-বাম সব দলই অনুসরণ করছে৷ কিন্তু এই নীতিতে কোনোকালেই সমাজের ওপর তলার মানুষের (অর্থনৈতিক বিচারে) ও নীচুর তলার মানুষের মধ্যে বিপুল ধনবৈষম্য হ্রাস পাবে না৷ আর এর ফলে অর্থনৈতিক শোষণ চলতেই থাকবে৷ খবরে প্রকাশ, বর্তমানে পৃথিবীর ১ শতাংশ বিত্তমান মানুষদের হাতে রয়েছে পৃথিবীর ৫০ শতাংশ সম্পদ৷ ধনীদের দ্বারা দরিদ্ররা চিরকাল নিষ্পেষিত হতে থাকবে--- যদি বর্তমান ব্যবস্থা চলতে থাকে৷ শুধু অর্থনৈতিক শোষণ নয়, এই অর্থশক্তিকে হাতিয়ার করে সমাজের সবক্ষেত্রেই শোষণ চলতে থাকবে৷ সমাজে ন্যায়, নীতি মানবতা,মূল্যবোধ ,ধর্মবোধ--- সবই ধনী শ্রেণীর মানুষের বুটের তলায় দলিত মহিত হতে থাকবে৷
এই সমস্যার সমাধান রয়েছে একমাত্র প্রাউটের ‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের পথে৷ অর্থনৈতিক কেন্দ্রীকরণ নয়, বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে৷
নীতিগত দিক থেকে বলতে হয় , এই বিশ্বের সমস্ত সম্পদের প্রকৃত মালিক বিশ্বস্রষ্টা পরমপিতা৷ তাই বিশ্বের সমস্ত সম্পদে সমস্ত মানুষের পৈত্রিক অধিকার রয়েছে৷ এই সমস্ত সম্পদ সবাইকার পৈত্রিক সম্পদ৷ তাই এতে রয়েছে সবাইকার যৌথ অধিকার৷
তাই কেউ এই সম্পদ নিয়ে যথেচ্ছাচার করবে, আর কেউ অনাহারে শুকিয়ে মরবে৷ এটাকে কখনোই ন্যায় সঙ্গত বলে মেনে নেওয়া যায় না৷ তাই প্রাউট-প্রবক্তা বিকেন্দ্রীকরণ নীতির মাধ্যমে সমাজের সমস্ত মানুষেরই অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছেন--- সবার হাতে ক্রয়ক্ষমতা তুলে দিতে চেয়েছেন৷ যার মূলে থাকবে সামূহিক অর্থনীতি বা সামবায়িক অর্থনীতি৷ তাতে শ্রমিক মালিক দ্বন্দ্ব চিরতরে বিলুপ্ত হবে৷ গড়ে উঠবে শোষণমুক্ত সমাজ৷
- Log in to post comments