আমরা সাপকে যত ভীষণ জীব লেই মনে করি না কেন, সাপ আসলে একটি ভীরু স্বভাবের জীব৷ সে সব সময় আত্মরক্ষায় অতি তৎপর থাকে৷ কোন দিক থেকে নেউল (নকুল> নউ>নেউল বর্জিকা> বজ্জিআ> বেজি৷ বাংলায় নেউল ও বেঁজি দুটোই---এর প্রচলিত নাম,ইংরেজীতেmongoose) আসছে, কোন্ দিক থেকে ময়ূর আসছে সেই ভয়েই সে শশব্যস্ত৷ এই চার তাগিদেই সে সর্বদাই রণমুখী হয়ে ফোঁসফোঁস করে৷ কিন্তু দুই একটি ক্ষেত্র বাদে পালাবার সুযোগ পেলে সে তেড়ে না এসে পালিয়েই যায়৷ সাপের ন্যাজে পা পড়লে সে মৃত্যুভয়ে ভীত হয়েই মানুষকে কামড়ায়৷ নির্র্মেক ত্যাগের সময় কিছুকাল চামড়া পাতলা থাকায় সে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে৷ তাই একটুতেই কামড়ায়৷ স্বভাবগতভাবে কেউটে বাদে অধিকাংশ সাপই পালাবার রাস্তা খোঁজে৷ কেউটের বিষ বেশী থাকায় তার স্বভাব একটু গরম৷ তাই তারা কিছুটা ঠাণ্ডা পরিবেশ পছন্দ করে যদিও সাপ গরম আহাওয়ার জীব৷ ঠাণ্ডা দেশে সাপ থাকলেও তার বিষ থাকে না৷ সূর্যাস্তের পর রেল লাইন একটু ঠাণ্ডা হয়ে যায় বলে সাপ রেল লাইনে গা ফেলে শুয়ে থাকে৷ গাড়ীর শব্দ পেয়ে আর সব সাপ পালায় কিন্তু গরমস্বভাব কেউটে পালায় না৷ সে ভাবে, যে শত্রুই আসুক না কেন আমি তার সঙ্গে যুঝে যাবো৷ এর ফলে রেল লাইনে কাটা পড়ে সে সব সাপ মরে তাদের বেশীর ভাগই কেউটে৷
কেউটে হচ্ছে গোক্ষুরা জাতের একটি সাপ৷ গোক্ষুরা সাপ সাধারণতঃ গৃহবাসী৷ পুরোনো গৃহই এদের প্রিয় আবাসস্থল৷ ন্যাজ খসে যাওয়া বড়ো গোক্ষুরাকে অনেকে বাস্তু সাপ বলে থাকেন৷ বাস্তুভিটায় থাকে, তাই ‘বাস্তুসাপ’৷ এই গোক্ষুরার বিভিন্ন প্রজাতি---কালী গোখরো, পদ্ম গোখরো, চক্র গোখরো, শ্বেত গোখরো, নো কেউটে, আল কেউটে প্রভৃতি৷ মনে রাখা দরকার যে কেউটেও বৃহত্তর গোক্ষুরা বর্গে অন্তর্ভুক্ত৷ ইংরেজীতে সবাই কোবরা বর্গীয়৷ এমনকি বৃহত্তম বিষধর সর্প চন্দ্রচূড়কেও ইংরেজীতে কিং কোবরা লা হয়৷ এই গোখরো বা গোক্ষুরা পশ্চিম রাঢ়ে সাধারণত ‘খরিস’ নামে পরিচিত৷ সাপের এই স্বভাবের জন্যে অর্থাৎ সব সময় প্রাণরক্ষার তাগিদে শত্রু খোঁজ করার জন্যে ‘ঢুণ্ঢ্’+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি মানে ‘সাপ’৷
সাপ মানুষ ও অন্যান্য অধিকাংশ জীবের জাতশত্রু৷ সাপ যেমন মানুষকে ভয় পায় মানুষও তেমনি সাপকে ভয় পায়৷ সাধারণতঃ নির্বিষ সর্পের non-venomous) চক্র থাকে না৷ বিষধর সর্প অচক্র হয় না৷ তবে এর অল্পবিস্তর ব্যতিক্রমও আছে৷ নির্বিষ সাপের দেশজ বাংলায় সাধারণ নাম ‘ঢোঁড়া’৷ ঢোঁড়া সম্বন্ধে একটু পরে বলছি৷ চিতি, হেলে ও অন্যান্য সমস্ত নির্বিষ সাপই মুখ্যতঃ ঢোঁড়া প্রজাতির মধ্যে পড়ে৷ যাই হোক মানুষ বিষধর সাপকে ভয় পায়৷
সাপের পর্যায়বাচক নাম ঃ সর্প, আশীবিষ, ভুজগ, ভুজঙ্গম, অহি, ফণী প্রভৃতি৷ তার সঙ্গে সঙ্গে ‘ঢ’ শব্দটিও তোমরা ব্যবহার করতে পার৷