(১) ‘ধা’ ধাতু অনেকগুলি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ একটি হ’ল অধিকারে পাওয়া to own, to possess) দ্বিতীয় হ’ল ব্যবস্থা দেওয়া, তৃতীয় হ’ল দেখাশোনা করা বা তত্ত্বাবধান করা, চতুর্থ হ’ল প্রতিপালন করাto nourish)৷
‘ধা’ ধাতুর উত্তর ‘ড’ প্রত্যয় করে দু’টি রূপ পাই---‘ধ’ ও ‘দ’৷ ‘দ’ সম্বন্ধে আলোচনা পূর্বেই করা হয়েছে৷ এখানে বিধান দেওয়া বা ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্ত্তমান নির্দ্ধারণ করা অর্থে যে ‘ধ’ শব্দ ব্যবহৃত হয় তার মানে বিধাতা---বি-ধা তৃচ্ (তৃণ্) প্রথমা একবচন৷ খুব অল্পক্ষেত্রে ‘ধা’ ধাতু ‘ধারণ করা’ to hold) অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ সেক্ষেত্রে ‘ধা’ ‘ড’ করে ‘ধ’ পাচ্ছি তার অর্থ ‘ধারণকারী’৷ গ্রহ-নক্ষত্র জ্যোতিষ্কপুঞ্জকে ধারণ করে রেখেছে মহাকাশ৷ তাই এই অর্থে ‘ধ’ বলতে ‘মহাকাশ’কেও ৰোঝায়৷ স্ত্রীলিঙ্গে ‘ধা’ তৃচ (তৃণ্) স্ত্রিয়াম ‘ঈপ্’ করে যে যে ‘ধাত্রী’ শব্দ ( nurse, midwife ধাই/দাই) তারজন্যেও ‘ধ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়৷ এই শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গবাচক হলেও শব্দরূপে পুংলিঙ্গ৷ এর রূপ ‘নর’ শব্দের মত অর্থাৎ প্রথমবার একবচনে ‘ধঃ’৷
(২) বৈদিক ‘ধণ্’ ধাতুর অর্থ হ’ল প্রস্তুত করা ---নির্মাণ করা৷ এই ধাতুটি ধাতুহিসাবে লৌকিক সংস্কৃতে না চললেও তজ্জাত বা তদ্ব্যুৎপন্ন শব্দগুলি লৌকিক সংস্কৃতে চলে৷ তবে লৌকিক সংস্কৃতে ‘ণ’-এর পরিবর্ত্তে ‘ন’ ব্যবহৃত হয়৷ গুপ্তযুগের পূর্বে ‘ণ’, ‘ন’ দুই-ই পাশাপাশি চলত৷ বৈদিক ভাষায় এই ধাতুটি উভয়পদী ও এর চারটি রূপ ছিল---দধনতি/দধণতে, দধণ্বতি/দধণ্বতে৷ এই ‘ধণ্’ ‘ড’ করে আমরা যে ‘ধ’ শব্দ পাই ভাবারূঢ়ার্থে তা হ’ল সৃষ্টিকর্র্ত্ত৷ যেমন,একটি মৃৎপাত্রের সৃষ্টিকর্র্ত্ত একজন কুম্ভকার৷ যোগারূঢ়ার্থে এই ‘ধ’ শব্দের অর্থ হ’ল পুরাণ-বর্ণিত সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা৷ সৃষ্টির ৰীজমন্ত্র হ’ল ‘অ’৷ সৃষ্টিকর্র্ত্ত পরমপুরুষ ব্রহ্ম যখন সৃষ্টিকার্যে রত হন, তাঁর জন্যে ৰীজমন্ত্র ‘অ’-এর সংযুক্তিতে ব্রহ্ম+ অ= ব্রহ্মা এই ভাবে শব্দটির উদ্ভব হয়৷
(৩) ‘ধন্’ ধাতুর (বৈদিক ভাষাতেও এই ধাতুতে ‘ন’) অর্থ হ’ল শব্দ তৈরী করা (to sound), বিস্তারিত হওয়া (to expand)৷ এই ‘ধন্’ ধাতু+অচ্ প্রত্যয় করে ‘ধন’ শব্দ পাই যার মানে সম্পত্তি৷ মানুষ জীবনের বিভিন্ন ভূমিতে ও জীবনের বিভিন্ন ভূমিকায় নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চায়--- নামে, যশে, ঐশ্বর্যে,রূপে, গুণে, বিদ্যাবত্তায়, অর্থস্বাচ্ছল্যে৷ তার মধ্যে সম্পত্তি বা অর্থ-প্রাপ্তির এষণা মানুষের মধ্যে একটু বেশী৷ সেভাবে তার ভেতর দিয়েই আর সব কিছুই সে পেয়ে যাবে৷ সেভাবে---‘দুনিয়াটা কার’ , না দুনিয়া টাকার’৷ গ্রামৰাঙলাতে ৰলা হয়, ‘‘যার আছে টাকা/তার কথা বাঁকা বাঁকা৷ তাই ‘ধন’্+ ড করে যে ‘ধ’ শব্দটি পাচ্ছি তার একটি মানে ‘কুবের (ধনসম্পদের দেবতা)৷
(৪) ‘ধন’ মানে যে সম্পত্তি তা একটু আগেই ৰলেছি৷ তাই ‘ধন্+‘ড’ করে যে ‘ধ’ শব্দ পাই তার একটি মানে ‘সম্পত্তি’ও৷
(৫) ‘ধৈ’ ধাতুর মানে মনকে কোন বিশেষ লক্ষ্যের দিকে ৰাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে ছুটিয়ে দেওয়া--- বিশেষ করে মনকে বাধার সমস্ত উপলকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে পরমপুরুষের দিকে চালিয়ে দেওয়া৷ এই ‘ধৈ+‘অনট’ করে ‘ধ্যান’ শব্দের ভাবারূঢ়ার্থ হ’ল কোন বিশেষ ভাবনায় মনকে নিৰদ্ধ করা অন্তরলোকে নজর রাখা---‘যোগারূঢ়ার্থে ধ্যান’৷ ‘ধ্যান শব্দের মুখ্যতঃ অর্থ --- ১) অবধান, (২) ধ্যেয় বস্তুর সম্প্রাপ্তির আভ্যন্তরীণ এষণা বা ঈশ্বরচিন্তা৷ ‘অবধানতা’ জিনিসটা শুভার্থে সম্পূর্ণভাবে নৈতিকতা ভিত্তিক৷ নৈতিকতা না থাকলে সাধারণের মানসিক উন্নয়নই ব্যর্থ হয়.... হতে বাধ্য৷ তাই ‘ধৈ’ ‘ড’ করে যে ‘ধ’ পাচ্ছি তার মানে ‘নৈতিকতা’ বা নৈতিক ৰল৷
---শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত গ্রন্থ থেকে