এর আগে আমি কয়েকবারই বলেছি যে মানুষের মত হাতীও যূথবদ্ধ জীব৷ হাতীর সবচেয়ে বড় শত্রু হ’ল সিংহ৷ হাতী চায় গহন অরণ্য৷ জায়গাটা ভিজে কি শুকনো তার অত বিচার নেই৷ তবে জলটা যেন নোনতা না হয়৷ আর জঙ্গল যেন বেশ ঘন হয়৷ সমতল ভূমি বা পাহাড় এ ধরণের বিচার হাতীর নেই৷ তবে কাছে পিঠে একটু জলাশয়ের তার প্রয়োজন৷ কারণ জলে নেবে ভালভাবে স্নান করা ও অনেকক্ষণ ধরে জলে খেলা করা হাতীর একটা স্বভাব৷ যে সব ফলে মাদকতা আছে অর্থাৎ খেলে একটু নেশা হয় হাতী সেসব ফলই ভালবাসে৷ আর ফল খাবার পরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হাতী জলে নেবে পড়ে ও অনেকক্ষণ থাকে৷ আফ্রিকায় এক ধরনের লাল অতিমিষ্ট জাম হয় যা থেকে চেষ্টা করলে চীনী তৈরী করা যেতে পারে৷ ওই জাম হাতীর অত্যন্ত প্রিয়৷ ওই জাম মাত্রাতিরিক্ত খেলে, ধরো পাঁচ-ছয় কিলো খেলে, অল্প একটু নেশা আসে...........মানুষের তেমন নেশা না এলেও হাতীর আসে৷ যাই হোক হাতী যেসব জায়গায় থাকে সেটা যদি বেশ শুকনো হয় ও বড় গাছের সঙ্গে কিছু ঝোপ-ঝাপ গোছের গাছ থাকে তবে সেখানে সিংহ থাকে৷
হাতী একটা শক্তিশালী জীব৷ গায়ের জোরে বাঘ হাতীর সঙ্গে পারে না৷ তবে বাঘের সাহস হাতীর চেয়ে বেশী৷ হাতীর সঙ্গে লড়াই লাগলে বাঘের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে --- বাঘ তা’ জানে৷ যে কারণে প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ প্রাপ্তবয়স্ক বুনো শো’রকে ঘাঁটাতে চায় না, সেই একই কারণে বাঘ হাতীকে ঘাঁটাতে চায় না৷ সিংহের কিন্তু ততটা বিবেচনা শক্তি নেই৷ সে হাতীকে আক্রমণ করে, কখনো সিংহ মরে, কখনো হাতী মরে৷ যেখানে সিংহ সংখ্যায় বেশী, আবার হাতীরও বাস আছে সেরকম জায়গায় হাতীকে সব সময়েই বিশেষ করে রাত্তিরে একটু সতর্ক হয়ে চলতে হয়৷
বুদ্ধিতে হাতী সিংহের চেয়ে বেশী উন্নত৷ আমাদের আনন্দনগর এলাকায় হাতী, সিংহ বাঘ তিনই ছিল৷ বাঘ শেষ হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে৷ রাঢ়ী সিংহ শেষ হয়েছে আনুমানিক নববই বছর আগে৷ আর হাতী কয়েক মাইল দূরে বনে জঙ্গলে চলে গেছে৷ হেমন্তে শীতে পাকা ফসলের গন্ধে অনেক সময় তারা আবার একটু কাছাকাছি এসে যায়৷
যাই হোক, সিংহ-সংকুল অঞ্চলে হাতীরা রাত্তিরবেলা তাদের স্ত্রী ও শাবকদের একটি মণ্ডলীর মধ্যে রেখে দেয়৷ স্ত্রী-হাতীরা তাদের শাবকদের নিয়ে রাত্রে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোয় আর পুরুষ-হাতীরা মণ্ডলাকারে তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দেয়৷ অতগুলো হাতীকে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে দেখে সিংহ সেদিকে আসে না৷ হাতীর এই মণ্ডলাকারে ঘিরে থাকাকে বলে ‘গজমণ্ডলিকা’৷ হাতী যূর্থদ্ধ জীব৷ তাই সে এই মণ্ডলিকা রচনা করে৷ তাহলে তোমরা এবার ‘গজমণ্ডলিকা’ শব্দের মানে ঝলে তো৷
(---শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘আমাদের প্রতিবেশী পশু ও পক্ষী’ গ্রন্থ থেকে)