হাট/ঘাট

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

 

ৰাংলায় আর একটা কথা রয়েছে ‘হাট’৷ সংস্কৃত ‘হট্ট’ শব্দ থেকে ‘হাট’ শব্দটি এসেছে৷ যেমন পাশাপাশি সাজানো অনেকগুলি হাট, সংস্কৃতে ‘হট্টমালা’৷ ‘হট্টমালার গল্প’ তোমরা অনেকেই নিশ্চয় পড়েছ৷ সংস্কৃতে ৰড় ৰড় হাটকে ৰলে ‘হট্টিক’৷ হট্টূ‘ষ্ণিক্’ প্রত্যয় করে ‘হট্টিক’৷ যদিও বৈয়াকরণিক বিচারে ‘হট্টিক’ মানে ছোট হাট  হওয়া উচিত কিন্তু আসলে ৰড় হাট অর্থেই ‘হট্টিক’ শব্দটি ব্যবহার করা হ’ত৷ ‘হট্ট’–এর তদ্ভব ৰাংলা হচ্ছে ‘হাট’৷ যেমন রাজারহাট, বাগেরহাট, মাঝেরহাট প্রভৃতি৷ ‘হট্টিক’ শব্দের ৰাংলা ‘হাটি’৷ যেমন ‘নবহট্টিক’ থেকে ‘নৈহাটি’, ‘নলহট্টিক’ থেকে ‘নলহাটি’, ‘গুবাকহট্টিক’ থেকে ‘গৌহাটি’  (গুয়াহাটি) প্রভৃতি৷ দক্ষিণ ৰাংলায় হাটকে ‘হাটা’, ঘাটকে ‘ঘাটা’ রূপে উচ্চারণ করার একটা প্রবণতা ছিল৷ তার ফলে আমরা পাচ্ছি পাথুরে ঘাটা, বেলেঘাটা, মুরগীহাটা, দরমাহাটা, গড়িয়াহাটা প্রভৃতি৷

আউশ ধানের জেলা নদীয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেই গো–খাদ্যের (ন্দ্রপ্সস্তুস্তুন্দ্বব্জ) টান পড়ত৷ পাশেই রয়েছে আমনের জেলা বর্দ্ধমান৷ বর্দ্ধমানের নন্দনঘাট (নাদনঘাট) থেকে নৌকো ৰোঝাই খড় জলঙ্গী নদী দিয়ে নদীয়া জেলায় আমদানী করা হ’ত৷ সেকালের এই খড়ের নৌকো–বোঝাই জলঙ্গী নদীর তাই নতুন নামকরণ করা হয়েছিল খড়িয়া বা খড়ে নদী৷ অর্থাৎ পদ্মা হতে নিঃসৃত এই জলঙ্গী নদী মুর্শিদাবাদ জেলায় ‘জলঙ্গী’ নামে পরিচিত হলেও এর আটপউরে নাম খড়ে নদী৷ তাই সেই নদীয়া জেলার গোপালক–প্রধান রেউই গ্রামের (সেকালকার সেই রেউই গ্রামই পরবর্তীকালে ‘কৃষ্ণনগর’ নামে পরিচিত হয়েছিল) পাশেই ছিল প্রকাণ্ড একটি গোরুর হাট–সংস্কৃত ভাষায় ‘গোহট্টিক’> প্রাকৃতে ‘গোহড্ডি’>র্দ্ধপ্রাকৃতে ‘গোহাডি’> পুরোনো ৰাংলায় ‘গোহাড়ি’>বর্তমান ৰাংলায় ‘গোয়াড়ি’৷ ইংরেজরা নদীয়া জেলার সদর গোয়াড়িতেই করেছিলেন৷ এখনও আমরা একসঙ্গে উচ্চারণ করে ৰলি ‘গোয়াড়ি–কৃষ্ণনগর’৷

যেখানে কেনা–বেচার জন্যে খুৰ ৰড় রকমের কেন্দ্র রয়েছে–তা সে গ্রামেই হোক বা শহরেই হোক, তাকে ফার্সীতে ৰলে ‘কসৰা’৷ চব্বিশ পরগণাতে ‘কসৰা’ ৰলে একটি জায়গা রয়েছে৷ যশোর শহরের পুরোনো নাম ছিল ‘কসৰা’৷ আসল যশোর নামক স্থানটি যখন খুলনা জেলা তৈরী হ’ল তখন খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়৷ খুলনা খুব প্রাচীন জেলা নয়৷ চব্বিশ পরগণার সাতক্ষীরা, যশোরের খুলনা, বাখরগঞ্জের বাগেরহাটের অধিকাংশ অংশ নিয়ে জেলাটি তৈরী করা হয়েছিল৷ যশোর স্থানটি (ধূমঘাট) খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবার পরে জেলার অবশিষ্টাংশের নাম যশোর রাখার কোন সার্থকতা ছিল না৷ তবু ‘যশোর’ নামটি বরাবর থেকে গেছ্ল৷ তখন থেকেই লোকে জেলা–সদর কসৰা শহরকে যশোর নামে অভিহিত করেন৷ আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি, গ্রাম্য মেয়েরা শ্যালদায় টিকিট কাটতে গিয়ে ৰুকিং ক্লার্ককে ৰলত, ‘মাষ্টারৰাৰু, কসৰার একটি টিকিট দেবে গা’’ আর সঙ্গে সঙ্গে ৰুকিং ক্লার্ক যশোরের একটা টিকিট বার করে দিতেন৷

কলকাতার উত্তর ঘুঘুডাঙ্গাতে ইংরেজরা সৈন্যাবাস তৈরী করেছিলেন৷ সেখানে হরদম গুলিগোলার দুমদাম আবাজ হত৷ এ যেন সেই দীপাৰলীর রাত্রে এক–দমা দো দমা ফাটানো হচ্ছে৷ চারিপাশের গ্রামের লোকেরা আবাজে অতিষ্ঠ হয়ে ওই জায়গাটার নাম রেখেছিলেন ‘দমদমা’৷ পরে যখন সেখানে রেলের ইষ্টিশান হ’ল তখন জায়গাটির নাম রাখা হ’ল ‘দমদম’৷ জায়গাটার আসল নামটা হচ্ছে তাহলে ‘দমদমা’৷ স্থানীয় জনসাধারণ শ্যালদা ইষ্টিশানে টিকিট কাটতে গিয়ে বলত, ‘‘মাষ্টারৰাৰু, ঘুঘুডাঙ্গার একটা টিকিট দাও তো গো’’৷ ৰুকিং ক্লার্ক তাদের দমদমের টিকিট দিতেন৷ কেউ সিঁথির টিকিট চাইত না৷ হয়তো বা সিঁথির নামডাক ঘুঘুডাঙ্গার চেয়ে একটু কম ছিল বলেই চাইত না৷