জা+ মা+ তৃচ= জামাতৃ৷ ‘জা’ মানে জায়া অর্থাৎ পত্নী৷ ‘মা’ ধাতুর অর্থ গ্রহণ করা/ধারণ করা/ পরিমাণ দেওয়া/ সম্মান দেওয়া৷ যিনি পত্নী গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ দার পরিগ্রহ করেছেন তিনি ‘জামাতৃ’---প্রথমার একবচনে ‘জামাতা’৷ জামাত > জামাআ> জামাএ> জামাই৷ ‘জামাতৃ’ শব্দের অন্য অর্থ ‘ৰর’ bridegroom), সহায়ক, বন্ধু৷ ‘জামাতা’ শব্দের অপর মানে সূর্যমুখী ফুল৷
যৌগিক শব্দের উত্তরপদে থাকলে ‘জামাই’ শব্দ সাধারণতঃ, ‘পতি’ অর্থে ব্যবহৃত হয়৷ যে নারীর পতি তার পিত্রালয়ে আছে সে ‘ঘরজামাই’৷ অনুরূপভাবে, ভাইঝি-জামাই, ৰোনঝি-জামাই,ভাগ্ণী-জামাই, নাতজামাই, (নাতনীর স্বামী), ঠাকুর জামাই (‘ঠাকুর-জামাই’ মানে ‘ননদের পতি’ বা ‘নন্দাই’)৷
‘ঘরজামাই’ আজকাল ৰড় একটা কেউ হয় না৷ কিন্তু আগেকার দিনে অবস্থাপন্ন মানুষেরা যদি অপুত্রক হতেন তাহলে ঘরজামাই রাখতেন৷ ঘরজামাইদের তেমন সামাজিক মর্যাদা থাকত না৷ বর্দ্ধমানের গ্রামে ছড়া আছে---
‘‘বাহিরের জামাই মধুসূদন, ঘরের জামাই মধো
ভাত খাও’ সে মধুসূদন, ভাত খে’সে রে মধো৷’’
‘খাও’ সে’ মানে ‘খেতে এসো’৷ খে’সে মানে ‘খেতে আয়’৷
জেল
সাধু ৰাংলার ‘কারাগার’, হিন্দুস্তানী ‘ফাটক’,--- সব শব্দকে সরিয়ে দিয়ে আজ ইংরেজী ‘জেল’ শব্দটি ব্যাপকভাবে চলছে৷ ‘জেল’-এর পুরনো ইংরেজী ৰানানGaol ও আধুনিক ইংরেজী বানানJail দুই ৰানানই চলছে৷ ‘জেল’ শব্দটি ইংরেজী হলেও ‘খানা’ শব্দটি ফার্সী৷ তাই ‘জেলখানা’ শব্দের অর্দ্ধেক ভাগ ইংরেজী, অর্দ্ধেক ভাগ ফার্সী৷
সাহেৰেরা কলকাতায় গোড়ার দিকে যে চিড়িয়াখানা (পশুশালা) করেছিলেন স্থানীয় লোকে তার নাম দিয়েছিল হরিণবাড়ী Deerpark)৷ পরে সাহেবরা পশুশালাটিকে কলকাতা থেকে ব্যারাকপুরে স্থানান্তরিত করেন৷ পশুশালার জায়গাটিতে করে দেন জেলখানা৷ লোকে কিন্তু পুরনো ‘হরিণবাড়ী’ শব্দটি ব্যবহার করে যেতে থাকল ও তার ফলে জেলখানার নোতুন ৰাংলা নামকরণ হয়ে যায় হরিণবাড়ী৷ রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতায় (গান্ধী মহারাজ্যের শিষ্য কেউ বা ধনী কেউ বা নিঃস্ব) জেলখানা অর্থে এই ‘হরিণবাড়ী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)