পূর্বপ্রকাশিতের পর,
শোষনের মানসিকতা কী?
শোষনের প্রথম কারন হলো আত্মসুখতত্ত্ব৷ এতে ভাবনা এই যে, যা কিছু করব সুখ পাবার জন্য৷ এই মানসিকতার জন্য অন্যের ক্ষতি হচ্ছে তা সে দেখে না৷ অথচ এই পৃথিবীতে সকল মানুষের বাঁচার অধিকার আছে শুধু মানুষ কেন এই পৃথিবীটা সকল জীবের জন্য৷ পশু মানুষ ও উদ্ভিদেরও বাঁচার জন্য৷ এইটাকে বলে সম-সমাজতত্ত্ব৷ আর দ্বিতীয় কারণ হল সমাজে অনুবিততত্ত্বের প্রভাব৷ এই অনুবিততত্ত্বের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে মানুষ অন্য মানুষ কে শোষন করে ফুলে ফেঁপে যায়৷ আর তৃতীয় কারন জিও সেন্টিমেন্ট (ভূমিগত ভাবপ্রবণতা), সোসিও সেন্টিমেন্ট (বিশেষ সামাজিক বা গোষ্ঠীগত ভাবপ্রবণতা ও সাধারণ মানবতাবাদ৷ জিও সেন্টিমেন্টের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মানুষ অন্যস্থানের মানুষের কল্যাণতো চায় না বরং নির্দয় ব্যবহার করে’ শোষন করতে থাকে৷ আর ওই জিও সেন্টিমেন্টের দোহাই দিয়ে ওই স্থানের বিকাশের জন্য সুললিত বাণী শুনিয়ে নিজের স্থানের মানুষদেরও শোষন করে চলে৷ তেমনি, সোসিও সেন্টিমেন্টের দ্বারা প্রভাবিত মানুষ অন্য গোষ্ঠী বা সমাজের কল্যাণ তো চাইবেন না উল্টো তাদের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ, পোষণ করে আর নির্বিবাদে শোষণ চালায়৷ সেই সঙ্গে সোসিও সেন্টিমেন্টের দ্বারা প্রভাবিত নেতাগন জনগণকে নানা অজুহাতে শোষন করে নিজেরা সুখ সম্পদশালী হয়ে ওঠে৷ ওই জিও সেন্টিমেন্টের ভিত্তিতে জিও-প্যাট্রিটিওটিজম(ভৌম দেশাত্মবোধ) জিও রিলিজিয়ন (ভৌম ধর্মমত), জিও ইকোনমিক্স (ভৌম অর্থনীতি) প্রভৃতি দাঁড়িয়ে থাকে৷ তেমনি সোসিও সেন্টিমেন্ট ভিত্তিতে সোসিও প্যাট্রিটিওটিজম, সোসিও রেলিজিয়ন সোসিও ইকনমিক্স, সোসিও আর্ট-আর্কি টেকচার,সোসিও লিটারেচর ইত্যাদি দাঁড়িয়ে থাকে৷ ওই ভাবাবেগ দ্বারা এক গোষ্ঠী যেমন অন্যগোষ্ঠীদের শোষন ও ঘৃণা পোষন করে তেমনি ওইসব ভাবাবেগের নেতৃবৃন্দ তাদের নিজের গোষ্ঠীর লোকদেরও শোষন করেথাকে৷ যেমন জিও-রেলিজিয়নের সোসিও রিলিজিয়নের দ্বারা অন্য গোষ্ঠীর লোকেরা শোষিত নির্যাতিত হয় তেমনি নিজেদের গোষ্ঠীর নেতারা নিজেদের মানুষদের শোষন অব্যাহত রাখে৷ যেমন ভারতে হিন্দুধর্ম জাতপাতের বিভেদ সৃষ্টি করে সেই সুযোগে পুরোহিতরা সাধারণ মানুষকে শোষন করত৷ ডঁচু জাত নীচুজাতকে ঘৃণা ও শোষন চালায়৷ যাগ-যজ্ঞ কর্মকাণ্ডের নামে জনসাধারণকে শোষন দেখে গৌতমবুদ্ধ ও মহাবীর জৈন তীব্র বিরোধিতা করে বেদকে অস্বীকার করেন, জনসাধারনকে শোষন থেকে অব্যাহুতি দেওয়ার জন্য৷
সেন্টিমেন্টের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ভাবাবেগের ক্ষেত্রে মানুষ কী উচিৎ কী অনুচিৎ তা ভাবে না, কেবল ভাবাবেগে চলতে থাকে৷ ধর্মীয় ভাবাবেগের মানুষেরা তাদের ধর্মের উচিৎ-অনুচিৎ তো ভাবে না আর মনে করে ধর্ম মানে সংযম-সহিষ্ণুতাকে মেনে চলা৷ এরই সুযোগে কায়েমী স্বার্থবাদীরা ধর্মের নামে নিজের গোষ্ঠীর বা নিজসম্প্রদায়ের লোকদের শোষন করে নিজেদের স্বার্থপূরণ করে৷ যেমন বর্তমানে ভারতে ধর্মকে রাজনীতির কাজে লাগিয়ে নেতারা দেশের সম্পদের সুযোগ সুবিধা ভোগ অবাধে করে চলেছে৷ ভোটে লড়বার জন্য পুঁজিপতিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিতে হয়েছে ও হবে তাই তাদের স্বার্থে তাদের লাভের জন্য আর বেশী হারে কর আদায় হবে বলে আজ পেট্রোপণ্য থেকে সব জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া৷ সেই সঙ্গে ধনী শিল্পপতিদের ব্যাঙ্ক ঋণ মাপ করে দেওয়া হয়েছে৷ ভারতে বর্তমানে ক্ষমতায় আসীন বিজেপি পার্টিটির মূল এজেন্ডা হলো হিন্দু হিন্দি আর হিন্দুস্থান৷ ভারতে অধিক সংখ্যক সাধারণ জনগণ তো হিন্দু মতবাদে বিশ্বাসী৷ সেই হিন্দু সেন্টিমেন্টকে রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের কাজে লাগানো হচ্ছে৷ হিন্দুরা যে বেদ,গীতা, মহাভারত ও পুরান---আদিকে তাদের ধর্মগ্রন্থ মানে সে সবের শিক্ষা তো সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয় না৷ বিজেপি ও আর এস এস হিন্দুদের জাত-পাতের বিভেদ তো মানছেই সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মনে হিন্দুধর্মের কু-সংস্কার কে প্রোৎসাহিত করছে, অর্থাৎ বেদ-গীতা নয় হিন্দুত্বের দাবীর সূচীকা প্রয়োগ৷ ছাড়া আর কিছু নয়৷ ধর্মের মূল কথা হ’ল পরাভক্তি লাভ ও মানসিক বিস্তার লাভ করা৷ উদার, সহিষ্ণুতা গুন লাভ করা৷ এদের হিন্দু ধর্ম মানে অস্ত্রহাতে রামনবমীতে মিছিল করে অন্যপার্টির লোকদের উত্তপ্ত করা, জয় শ্রীরাম বলে অন্য দেবদেবী বিশ্বাসী ও রাজনৈতিক দলের লোকদের উত্তপ্ত করা৷ ধর্মের শিক্ষা কি তাই৷ ধর্ম হলো এই যে ‘‘মনকে একান্তভাবে পরমপুরুষের দিকে চালিয়ে দিতে হবে৷ কারণ এতে অন্তরের ভাব সম্পদে পুষ্ট হয় ভেবে পরমপুরুষের দিকে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাওয়া৷ ভক্তি মানুষকে, মানবত্বকে সূক্ষ্মত্বের দিকে নিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আনন্দঘন সত্তার দিকে মিশিয়ে দেয়৷ যাদের এই পরাভক্তি আছে তারাই পৃথিবীতে মানুষের জন্য কাজের কাজ করে যায়৷
বিজেপি ও আর এস.এস.এর তথাকথিত হিন্দুধর্মের লক্ষ্য হয়ে ওঠেছে, ধর্মের কু-সংস্কার, রামমন্দির ও সাম্প্রদায়িক উগ্রতা অথচ বেদ-গীতা বলছে সবই এক ঈশ্বরে সৃষ্টি সবাই মোরা ভাই ভাই৷ এদের ধর্মের লক্ষ্য আনন্দ ঘন সত্তা পরমপুরুষকে, ঈশ্বরকে লাভ করা নয়৷ এদের ধর্মের লক্ষ্য কু-সংস্কারে ও রামমন্দিরে৷ কথায় বলা হয় মোল্লার দৌড়, মসজিদ পর্যন্ত৷ এদেরও তাই৷ লোক শিক্ষার জন্য আদর্শ মানব চরিত্র কেমন হওয়া চাই সেই শিক্ষার জন্য মুনি ঋষিগণ আদর্শ রাম চরিত্রের কল্পনা করেছেন ও জনসমাজে তা প্রচার করেছেন৷ শ্রীরাম সত্যিকারে মাতৃগর্ভে জন্ম হয়নি, জন্ম হয়েছে বাল্মীকির মনোভূমিতে যার ব্যাপকতা ও প্রয়োজনীয়তা অনেক অনেক বেশী৷
ধর্ম মানুষের এক৷ হিন্দু-মুসলমান, খ্রীষ্টান আদিধর্ম নয় এগুলোকে বলা যেতে পাবে ধর্মমত৷ হিন্দু যদি যথার্থ ধর্ম হতো বিশ্বের সকল মানুষের এক ধর্ম হিন্দুই হতো কিন্তু তা তো নয়৷ তেমনি মুসলমান, খ্রীষ্টান,ইহুদি ধর্মের ক্ষেত্রেও একই কথা৷ হিন্দু শব্দটা সিন্ধু সভ্যতা থেকে এসেছে, পারস্য, ইরাক অঞ্চলের লোকে ‘স’কে ‘হ’ বলে তারাই সিন্ধুসভ্যতা কে হিন্দু সভ্যতা বলে অভিহিত করত৷ আসলে বিশ্বের প্রতিটি সত্তার ধর্ম এক থাকে যেমন বরফ তা যে দেশেরই
- Log in to post comments