যদিও সাধারণ অর্থে কদলী ৰলতে সব কলাকেই বোঝায় তবু বিশেষ অর্থে কদলী মানে কাঁচকলা আর রম্ভা মানে পাকা কলা৷ এখানে কাঁচ কলা ৰলতে আমরা সেই কলাকে ৰোঝাচ্ছি যা কাঁচা অবস্থায় তরকারি রেঁধে খাওয়া হয়, আর পাকা অবস্থায় খাওয়া হয় না৷ যে কলা কাঁচা অবস্থায় সাধারণতঃ খাওয়া যায় না, পাকা অবস্থায় খাওয়া যায় তাকে পাকা কলা বা রম্ভা ৰলে৷ এই রম্ভাকে কাঁচা অবস্থায় কাঁচা কলা (কাঁচকলা নয়) ৰলা হয়৷ ‘কদলী’ বা ‘কদলি’-তে দু’টো ৰানানই চলৰে৷ যে ‘ল’ রয়েছে সেটা হচ্ছে অন্তস্থ ‘ল’ Lra)৷ এই কদলী থেকে কলা ও কল (অসমীয়াতে) শব্দ এসেছে৷ যেহেতু ‘কদলী’র ‘ল’ অন্তস্থ ‘ল’ সেই কারণে ‘কলা’র ‘ল’ অন্তস্থ ‘ল’ Lra) হওয়াই উচিত৷ কিন্তু যেহেতু ৰাংলা ও অসমীয়ার উচ্চারণে সাধারণ মানুষ এ ক্ষেত্রে আদি ‘ল’ উচ্চারণ করে সেহেতু ‘কলা’ ৰানানে আদি ‘ল’ La) লেখা বা ৰলা অশুদ্ধ ৰলে গণ্য হতে পারে না৷ তবে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের অধিকাংশ ভাষাতেই যে ‘কলা’ শব্দটি এসেছে তার উচ্চারণে অন্তস্থ ‘ল’ Lra) ব্যবহৃত হয়৷ বিহারের ভাষাগুলিতে তাই উচ্চারণ করা হয় ‘কেরা’ (সঠিক উচ্চারণ কেলা)৷ উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত---সর্বত্র স্থানীয় ভাষাতে ওই একই উচ্চারণ৷ কেবল হিন্দী, ৰাংলা ও অসমীয়াতে আদি ‘ল’ Lra)-এর উচ্চারণ চলে৷ কারণ এই তিনটি ভাষাতেই অন্তস্থ ‘ল’-এর উচ্চারণ নেই৷
কলা বিশ্বের সমস্ত গ্রীষ্মপ্রধান দেশেই জন্মায়৷ তবে কলার আদি নিবাস পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ East Indies Archipellago) অর্থাৎ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশ৷ ভারতও অন্যতম কলা-উৎপাদনকারী দেশ৷ কেবল ভারতেই শতাধিক প্রজাতির গাছ রয়েছে৷ ভারত ও বহির্ভারত নিয়ে সমগ্র বিশ্বে কলার প্রজাতির সংখ্যা দেড় হাজারের মত৷ অতি ক্ষুদ্র আকারের কলাও যেমন আছে তেমনি দেড় ফুটের মত দীর্ঘ কলাও রয়েছে৷ স্বাদবিহীন কলাও আছে৷ টক কলাও আছে৷ আবার অতি মিষ্ট কলাও আছে৷ ৰন্য আৰহাওয়ায় অধিকাংশ কলাতেই ৰীজ থাকে৷ কিন্তু চর্চার দ্বারা যখনই কলাকে উন্নত মানে পরিবর্তিত করা হয় তখন আর তার ৰীজ থাকে না৷ অবশ্য পোস্ত দানার চেয়েও ছোট কালো রঙের অতি ক্ষুদ্র বীজ সকল অবস্থাতেই থেকে যায়৷ পূর্ব ভারতে যা ‘ৰীজে’ কলা নামে পরিচিত সেই কলাই ‘উপযুক্ত’ চর্চার দ্বারা কাঁটালী কলায় পরিণত হয়েছে (রাঢ়ী ৰাংলায় গুঁদী কলা)৷ আবার অনাদরে এই কাঁটালী কলাই ৰীজে-কলা হয়ে যায়৷ এমন কলাও আছে যার মোচা গাছের বাইরে বের হয় না৷ গাছের ভেতর থেকে সরাসরি কান্দি বেরিয়ে আসে৷ আবার এমন কলাও আছে যে গাছে মোচার মত নয়, অন্য ধরণের ফুল আসে৷ কিন্তু কলার কান্দি আসে না৷ বহির্ভারত থেকে আনা কলার অনেক প্রজাতিই এখন স্বভাবে ভারতীয় হয়ে গেছে৷ ব্রহ্ম দেশের মার্তাবাণ প্রদেশ থেকে আনা কলা ৰাঙলায় ৰেশ ভালভাবেই আছে ও ফল দিচ্ছে৷ কলকাতা অঞ্চলে এই কলাকেই তাই ‘মর্তমান কলা’ ৰলা হয়৷ একেই ৰাঙলার উত্তরের জেলাগুলিতে ৰলা হয় ‘অনুপম কলা’ ও পূর্বদিকের জেলাগুলিতে ‘সপরী কলা’৷ বিদেশাগত অনেক জিনিসকেই ৰাংলায় সপরী ৰলা হয়৷ ভারতের কেরলেই সবচেয়ে বেশী প্রজাতির কলা পাওয়া যায়৷ ৰন্য অবস্থায় ভারতে কলা পাওয়া যায় অসম ও তৎসন্নিহিত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে৷ কলার কোন অংশই পরিত্যজ্য নয়৷ কলার খোলাও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের লোকেরা বিভিন্ন ভাবেই খেয়ে থাকে৷ ফলন্ত কলা গাছের কাণ্ডের অভ্যন্তর ভাগ যাকে ৰাংলায় ‘থোড়’ ৰলা হয় তাও মানুষের খাদ্য৷ কলাপাতা ভোজনপাত্র হিসেৰে ব্যবহৃত হয়৷ কলাগাছ পোড়ালে যে ক্ষার পাওয়া যায় তা দিয়ে এককালে কাপড় কাচা হত৷ এই কলাগাছের ক্ষার সোডিয়াম কার্বনেট বা কাপড় কাচা সোডার মূল উপাদান৷ কলাগাছের সূতোতে পৃথিবীর অনেক দেশে বস্ত্র প্রস্তুত করা হয়--যেমন, বস্ত্র প্রস্তুত হয় আনারসের সুতো দিয়ে (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি দ্বীপের মানুষেরা লেখককে ওই সূতোয় প্রস্তুত একটি জামাও উপহার দিয়েছিলেন)৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)