কোক

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘কুক্‌’ ধাতুর অর্থ হ’ল খুঁটিয়ে দেখা বা ভালভাবে তাকানো৷ কুক্‌+ঘঞ্‌ করে পাচ্ছি ‘কোক’ শব্দটি৷ তাই ‘কোক’ শব্দের মানে যে ভালভাবে তাকিয়ে দেখে৷ দূর আকাশে ৰলাকা ভেসে আসছে সূদূর উত্তর এলাকা থেকে হিমালয় পার হয়ে ভারতে৷ নীচে কোন্‌ বৃক্ষবেষ্টিত জলাভূমিতে গত বৎসর সে বাসা ৰেঁধেছিল সেই বৃক্ষটিকে সু-উচ্চ নভ থেকে সে ঠিক চিনে নেয়৷ এই জন্যে এই আরণ্য পাখীগুলির সংস্কৃতে সাধারণ নাম ‘ৰলাকা’--- আরেকটি নাম ‘কোক’৷

ককটেসিয়াস প্রজাতির জীবগুলি---যেমন কুমীর,মেছো কুমীর, ক্রকোডাইল, এ্যালিগেটর, কমেট, স্যালাম্যাণ্ডার (ৰড় আকারের গোসাপ) গোধিকা, স্বর্ণগোধিকা (গোসাপ), কৃকলাশ (গিরগিটি, ৰাংলায় ‘টিকটিকি’, অঙ্গিকায় ‘টিকটিকিয়া’, মৈথিলী, মগহী ও ভোজপুরীতে বিছৌতি, হিন্দীতে ‘ছিপকলী’, ইংরেজীতে Lizard), আঞ্জুনি প্রভৃতি জীবগুলি নিজেদের দৃষ্টির দ্বারা অন্যকে কিছুটা সম্মোহিত করে ফেলে৷ তোমরা দেখৰে দেয়ালে একটি টিকটিকি এক দৃষ্টিতে  দূরের একটি আরশোলার দিকে চেয়ে আছে৷ আরশোলা উড়তে পারে, টিকটিকি পারে না৷ আরশোলার নজর যখন টিকটিকির দিকে পড়ল সে ভয়ে ঘাবড়ে কেমন হয়ে গেল৷ তারপর  সে উড়তে উড়তে এসে টিকটিকির মুখের কাছে গিয়ে পৌঁছাল৷ টিকটিকিটা তখন তাকে ধরে গলাধঃকরণ করলে৷ এই গোষ্ঠীভুক্ত অন্যান্য জীবগুলি প্রায় সবাই এইভাবে শিকার ধরে থাকে৷ কুমীর দ্রুত দৌড়োতে পারে না, মোটামুটিভাবে পারে কিন্তু হরিণ খুবই দ্রুত গতিশীল৷ কিন্তু  নদীর ধারে জল খেতে এসে হরিণ যদি কুমীরের দৃষ্টিতে পড়ে আর হরিণের দৃষ্টিতে যদি কুমীর  পড়ে সেক্ষেত্রে কখনো কখনো এমনও হয় হরিণ যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে কাঁপছে, চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়ছে৷ তারপর কুমীর ধীরে ধীরে এসে তাকে নিজের কব্জায় আনে৷

মেছো কুমীর এইভাবে তারচেয়েও অধিক গতিশীল মাছ ও জলজন্তুকে ধরে থাকে৷ এই টিকটিকি বর্গীয় (কক্‌টেশিয়াস প্রজাতিভুক্ত) সমস্ত জীবই হ’ল ‘কোক’৷ কুমীর, মেছোকুমীর প্রভৃতি জীব শিকার  ধরবার জন্যে জলে নাৰলেও তাদের বাসস্থান নদীতীরবর্ত্তী কোন গহ্বরে৷ কিন্তু দৃষ্টিতে এই বিশেষ ধরণের সম্মোহিনী শক্তি থাকায় তারা তাদের চেয়েও দ্রুত গতিশীল জলের ও ডাঙ্গার জীব ধরে  তো খায়ই, নভোচর জীবকেও ধরে খেয়ে থাকে৷ স্যালামাণ্ডার জাতীয় গোসাপ গাছে চড়ে পাখী ও পাখীর ডিম দুইকেই খায়৷ অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় পাখী উড়ে পালাতে সক্ষম হলেও পালায় না৷ হতে পারে, সে পালায় না ডিমের মায়ায়৷ তবে ৰেশী সম্ভব, সে স্যালাম্যাণ্ডারের দৃষ্টিতে অভিভূত হয়ে পালাতে পারে না৷ তবে পাখী পালিয়ে যায় যদি সে স্যালাম্যাণ্ডারকে দেখে ফেলে অথচ স্যালাম্যাণ্ডারের দৃষ্টি তার চোখে পড়েনি--- এই অবস্থায়৷ এই কক্‌টেশিয়াস জাতীয় জীবেরা ধীর-স্থিরভাবে অনেকক্ষণ ধরে শিকারের দিকে চেয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে৷ অনেকক্ষণ ধরে ওইভাবে তাকিয়ে থাকার ফলে তাদের চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে থাকে৷ এটা তাদের কাঁদা নয়, এটা অশ্রুপাতও নয়৷ এটা এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার ফলে  জলপাত৷ লোকে ভাবে কুমীর বুঝি কাঁদছে---ৰাংলায় ৰলি ‘কুম্ভীরাশ্রু’, হিন্দীতে ‘ঘড়িয়ালী আশু’৷ তাহলে ৰুঝলে শিকারকে দেখে কুমীর আদৌ কাঁদে না৷ আমরা যাকে ইংরাজীতে ‘ক্রুকোডাইলস টিয়ারস’ আসলে তা ‘টিয়ারস’ নয়৷ এই এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ শিকারের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্যে এই প্রজাতির সমস্ত প্রাণীকে সংস্কৃতে ‘কোক’ বলা হয়ে থাকে৷

                      (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)