খস আত্মন্ জন্ ড ঞ্চ খসাত্মজ৷ ‘খসাত্মজ’ শব্দের অর্থ রাক্ষসীপু––সে স্বয়ং রাক্ষস নাও হতে পারে৷ পুরাণে এই ধরনের কাহিনীও অনেক আছে৷ রাক্ষসী মাতার গর্ভে জন্মেছে উন্নত বুদ্ধির মানুষ বা দেবতা৷ কর্কটী রাক্ষসীর স্বামী অনুভসেন ছিলেন মানব ও রাজা৷ কর্কটী রাক্ষসী কর্কট অর্থাৎ ক্যান্সারের ঔষধ আবিষ্কার করেছিলেন৷ রাক্ষসীর পু– হলেও সুতনুক রাক্ষস ছিলেন না৷ তবু তাঁকে ‘খসাত্মজ’ বলা অবশ্যই চলবে৷ আসলে শাস্ত্রে ‘আত্মজ’ বলতে বোঝায় প্রথম সন্তানকে (পু– বা কন্যা)৷ অন্যান্য সন্তানকে ‘আত্মজ’ না বলে বলা হয় ‘কামজ’৷ এক্ষেত্রে দুঃখের সঙ্গেই বলতে হচ্ছে যে কর্কটী রাক্ষসীর আবিস্কৃত কর্কট রোগের (cancer) ঔষধ আজ বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেছে৷ রোগ নির্ণয়ে ও ঔষধের সন্ধানে গবেষণার জন্যে তাঁকে মৃতদেহ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হত৷ তাই সেদিনকার অনগ্রসর মানুষ ভেবেছিল তিনি নরমাংস ভক্ষণের জন্যেই বুঝি মৃতদেহ খুঁজে বেড়াতেন৷ বলা হয়, অকৃতজ্ঞ মানুষ কর্কটী রাক্ষসীকে পুড়িয়ে মেরেছিল৷ আর তাঁকে পোড়াবার সময় অগ্ণিতে যে লেলিহান শিখা উৎসারিত হয়েছিল তার অভিশাপেই নাকি তৈরী হয়েছিল বিসূচিকা ব্যাধি ও তাঁর আশীর্বাদেই ভেসে এসেছিল মধুমেহের (diabetes আজকাল বলা হয় বহুমূত্র) ঔষধ৷ কলেরা ব্যাধিটির সংস্কৃত নাম ‘বিসূচিকা’, বাংলা নাম ওলাওঠা, ইংরেজী নাম cholera আর ফার্সীতে ‘হ্যায়জা’৷ ওলাওঠা বা কলেরার যথার্থ ঔষধ এখন আর মানুষের হাতে নেই৷ স্যালাইন দেওয়া তো কোন ঔষধ হ’ল না৷ মানুষকে এর যথার্থ ঔষধ খুঁজে বার করে নিতে হবে৷ দেরী ওলাইচণ্ডীর (ওলাবিবি) পূজোয় রোগটা কতখানি সারতে পারে তা বুদ্ধির অগম্য৷
ককেশিয়ান আর্য, প্রাচীন
ইরান ও গমের ইতিকথা
গন্ধ বি – হবল্ অচ্৷ ভাবারূঢ়ার্থে যে গন্ধে নড়াচড়া করে বা নড়াচড়া করায় অথবা যার গন্ধে অন্যে নড়েচড়ে বা কেঁপে ওঠে৷ তোমরা জান পৃথিবীতে সমগ্র মানবজাতি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একই সময়ে উদ্ভূত হয়নি৷ বিভিন্ন অংশ থেকে বিভিন্ন ধরনের করোটির মানুষ এসেছিল বিভিন্ন ধরনের অলাঙ্গুল শাখামৃগ প্রজাতি থেকে৷ তবে অনুমিত হয় এদের প্রথম উদ্ভব হয়েছিল তৎকালীন রাাভূমির পশ্চিম প্রত্যন্ত থেকে, ও তারপর অবশিষ্ট গণ্ডোয়ানার মধ্যাংশ থেকে৷ রাাভূমিতে যে নরকরোটির প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল তা অষ্ট্রিক গোষ্ঠীভুক্ত হলেও তাতে নাসার দীর্ঘতা বর্তমান অষ্ট্রিকের চেয়ে ছিল অনেকাংশে বেশী৷ মধ্য গণ্ডোয়ানার সুমাত্রা–বলীদ্বীপ–য প্রথম যে নরকরোটির সৃষ্টি হয়েছিল তাও ছিল অষ্ট্রিক....নাসা ছিল কিছুটা অবদমিত৷ গাত্রবর্ণ সম্বন্ধে জোর করে কিছু বলা যায় না৷ তবে রাা মুখ্যতঃ কর্কটক্রান্তীয় এলাকা৷ তাই অনুমিত হয় গাত্রবর্ণ ছিল শ্যামবর্ণ বা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ বা ঈষৎ কৃষ্ণাভ৷ আর মধ্য গণ্ডোয়ানার অবস্থিতি বিষুবরৈখিক এলাকায়৷ তাই মানুষেরা ছিল তুলনামূলক বিচারে কৃষ্ণবর্ণ ও কিছুটা অবনত নাসার৷ একেবারে নাক–থ্যাবড়া নয়৷ অনুমিত হয় পরবর্তীকালে চৈনিক গোষ্ঠীভুক্ত মঙ্গোল শাখার মানুষ নিরাপদ জীবিকার সন্ধানে অধিক সংখ্যায় যেখানে আসেন ও তাঁদের সঙ্গে পূর্বোক্ত অষ্ট্রিক শাখার মিশ্রণে তৈরী হয়েছিল মঙ্গোলীয় মালয় শাখা৷
রাঢ়ের নরকরোটির সঙ্গে বর্তমান রাঢ়ী বাঙ্গালীর করোটির অনেকখানি মিল আছে৷ কিছুটা বহিরাগত আর্য বা ককেশীয় রক্তের মিশ্রণ ঘটলেও রাঢ়ী কায়স্থরা অনেকটা সেই ধরনের আকৃতি বহন করে চলেছে৷ আর্য মিশ্রণের ফলে তারা হয়ে গেছে দীর্ঘকায়৷ গাত্রবর্ণ উজ্জ্বলতর কিন্তু প্রাচীন রাঢ়ীয় ছাপ আজও তাদের সর্বাঙ্গে প্রবলভাবে ফুটে রয়েছে৷ রাঢ়ের অন্যান্য মানুষেরা বিশেষ করে জাত–বাঙ্গালীরা সেই সুপ্রাচীন করোটির আজও ধারক৷ ওঁরওদের মধ্যে নিগ্রোবটুর রক্তসম্পাত ঘটায় করোটিতে একটু বেশীমাত্রায় পরিবর্তন ঘটেছে, যেমন ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের গোণ্ড ও সৎনামীদের মধ্যে ও ওড়িষ্যার ওড়িয়া বর্গভুক্ত মানুষদের মধ্যে৷ রাঢ়ে কিন্তু জাত বাঙ্গালী–গোপ–সদ্গোপ–প্রায় ষোল আনাই সেই সুপ্রাচীন রাঢ়ীয় করোটি আজও ধারণ করে রয়েছে৷ রাঢ়ের কায়স্থ–ক্ষ্রাহ্মণ–বৈ নিজেদের যত বেশী বহিরাগত বলুন না কেন, তাঁরাও এই রাঢ়েরই সুপ্রাচীন মাটির সন্তান৷
যে আর্য বা আর্যেতর গোষ্ঠীকে ককেশীয় নামে আজকাল আখ্যাত করা হয় তাদের আদিবাস সুইটজারল্যাণ্ড অঞ্চলে৷ সেখান থেকে তারা তুষারের হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্যে পূর্বমুখী হয়ে ককেশীয় এলাকায় প্রথম ধাপে আশ্রয় নিল৷ নিগ্রো জনগোষ্ঠীর উদ্ভব বর্তমান সাহারার মাঝামাঝি অঞ্চলে৷ সাহারা যখন ভূমিকম্পে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচু হয়ে যায় তখন তার ঊর্ধ্বস্তরে জলাভাব দেখা দেয় যদিও নিম্নস্তরে জল থেকেই যায় যা আর্টেসীয় পদ্ধতিতে ফোয়ারার মত বার করা আজও সম্ভব৷ যাইহোক, সাহারা মরুভূমি আপাতদৃষ্টিতে জলশূন্য হওয়ায় বেশীরভাগ মানুষ চলে যান দক্ষিণে৷ বাকীরা যান উত্তরে ও উত্তর পূর্বে৷ এঁদের সঙ্গে ককেশীয়দের মিশ্রণে তৈরী হয় সেমেতিক গোষ্ঠী৷ সেমেতিক গোষ্ঠীর অনেকের নিগ্রোদের সঙ্গে মেলে, অনেকের ককেশীয়দের সঙ্গে মেলে৷ কারো রঙ ধবধবে ফর্সা, কারো রঙ মেটে, কোঁকড়ানো চুলের মানুষও যথেষ্ট, সোজা চুলের মানুষ সংখ্যায় মোটেই কম নয়৷