প্রভাতী

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

আকাশে মেঘ জমতে দেখলে আমরা মনে করি খুব বৃষ্টি হবে৷ কিন্তু মেঘ ছাড়াও বৃষ্টির আরো পূর্ব লক্ষণ আছে৷

আমাদের দেশের প্রাচীন জ্যোতিষীরা বলে গেছেন, পিঁপড়েদের যদি দেখা যায়, হঠাৎ খাবার মুখে নিয়ে ওপরের দিকে উঠতে তবে বুঝতে হবে শিগ্গীরই বৃষ্টি হবে৷ বৃষ্টি হবার আগে ব্যাঙ ডাকে তা আমরা প্রায় সবাই জানি৷ বৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ালরা অনেক আগেই টের পেয়ে নিরাপদ জায়গায় ছুটতে থাকে৷ অনুরূপভাবে বেজি আর সাপও যার যার আস্তানার দিকে দৌড়তে থাকে৷ শরভ নামে এক ধরনের হরিণ বৃষ্টির আগে দৌড়োদৌড়ি শুরু করে দেয়৷ বেতো রোগীদের বাতগ্রস্ত অঙ্গে আঘাত লেগে যদি খুব যন্ত্রণা হয় তবে জানবে বৃষ্টি অবধারিত৷ সাপেদের গাছে চড়া, জলস্তম্ভ, জলচর পাখিদের ডানা শুকনোর ব্যস্ততা আর ঝিঁঝিঁর ডাক---এ সবই বৃষ্টির পূর্ব লক্ষণ৷

জ্যোতিষীরা আরো বলে গেছেন, পৌষ মাসে বৃষ্টির সময় যদি দেখা যায়, উত্তর বা পশ্চিম দিক থেকে হাওয়া বইছে তাহলে বুঝতে হবে প্রচুর বৃষ্টি হবে৷ আর পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকে হাওয়া বইলে বৃষ্টি সাধারণত অল্পই হয়৷ হাওয়া না বইলে ধরে নিতে পার বৃষ্টি হবে না৷ এলোমেলো হাওয়া বইলে বৃষ্টি তাড়াতাড়ি থেমে যায়৷ পৌষ মাসের যে-তিথিতে বৃষ্টি বা কুয়াশা হয় শ্রাবণ মাসের সেই তিথিতে বৃষ্টি হবেই হবে৷

বাঙলায় ডাকের বচনের মত উত্তর প্রদেশে ঘাঘের বচনের প্রচলন আছে৷ সেই ঘাঘের বচন অনুসরণ করে বলা যায়, যে বছর অগ্রহায়ণ মাসে খুব গরম পড়ে সে-বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়৷ যদি ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের ষষ্ঠীতে  অনুরাধা নক্ষত্র পড়ে তবে সারা দেশ জুড়ে বৃষ্টি হয়৷ যদি শুক্রবার আকাশে মেঘ দেখা যায় এবং সেই মেঘ শনিবার অবধি থাকে তবে সেই মেঘে বৃষ্টি হবেই হবে৷ যদি আষাঢ় মাসে সোম শুক্র অথবা বৃহস্পতিবার শুক্ল-প্রতিপদ তিথি পড়ে তবে প্রবল বর্ষণ হয়ে থাকে৷

তুমি এসেছো

লেখক
কেয়া সরকার

চারিদিক হতে, শুধু এই রব ওঠে

শান্তি দাও হে প্রভু---

দ্বন্দ্বে লিপ্ত বিশ্ব মাঝারে

শান্তি আসে না কভু৷

 

চারিদিকে শুধু হাতছানি দেয়

লোভের করাল ছায়া,

আশীবিষ সম বেষ্টন করে

মোহের অন্ধ মায়া৷

 

তোমা ভুলে যারা এই পৃথিবীতে

ভোগতৃষ্ণায় রত

আত্মস্বার্থ পূর্ণ করিতে

লহে প্রাণ শত শত৷

 

কোটি কোটি তব জীব পশু-পাখী

তোমারে ফিরিয়া যাচে---

তাই বুঝি ধরা দিলে ধূলির এই

ক্লীষ্ট বসুধা মাঝে!

কৌশিক খাটুয়ার কবিতা

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

মেঘলা সকাল

বৃষ্টি অকাল

ভারি মজার দেশ,

নাই উত্তাপ

রোদের প্রতাপ

নাই ক্লান্তি ক্লেশ৷

রবির ছুটি

নাই ভ্রুকুটি

শীতল পরিবেশ!

ঝঞ্ঝা ক্ষুদ্ধ

অদ্য প্রভাতে

নাই রবি সাথে

জানিনা কি কাজে মত্ত,

এলোমেলো হাওয়া

কালো মেঘ ছাওয়া

তুফানের ঔদ্ধত্য!

মোসাহেৰ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

কথায় বলা হয়, খোসামদে পাহাড়ও গলে মাখন হয়ে যায়৷ খোসামদে দুর্বাসা মুনিও গলে যান৷ সেই খোসামদের জন্যে ‘কাণ্ড’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ ‘খোসামদ’ শব্দটি এসেছে ফার্সী ‘খুসামদ’ থেকে৷ অনেকে ‘খুসামদ’–কে মার্জিত রূপ দেবার জন্যে ‘তোষামোদ’ ৰলে থাকেন৷ না, ‘তোষামোদ’ ৰলে কোনো শব্দ নেই৷ শাস্ত্রে ৰলেছে, খোসামদকারী প্রতি মুহূর্তেই প্রতি পদবিক্ষেপেই অধোগতি হয়, কারণ সে প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদবিক্ষেপে কেবল স্বার্থচেতনায় অস্বাভাবিক কাজ করে থাকে৷ আগেকার দিনে রাজাদের বা অবস্থাপন্ন লোকেদের বেতনভুক খোসামদকারী থাকত৷ তাদের ৰলা হত মোসাহেৰ–যারা সৰ সময় নিজেদের কর্ত্তাকে ‘সাহেৰ’, ‘সাহেৰ’ ৰলে তুষ্ট রাখবার চেষ্টা করে৷ আরৰী ব্যাকরণ অনুযায়ী ওই ‘সাহিৰ’ শব্দটির আদিতে ‘মু’ সংযুক্ত করে তাদের ৰলা হয় মুসাহিৰ বা মোসাহেৰ৷ এইভাবে বিভিন্ন গুণের সঙ্গে ব্যষ্টির সংযোগ সাধন করে ক্রিয়া বা বিশেষ্যের আদিতে ‘মু’ যোগ করে আরৰীতে বিভিন্ন শব্দ সৃষ্ট হয়ে থাকে৷ যেমন মুয়াল্লিন, মুয়াজ্জিন (যিনি আজান দেন), মুজাহিদ (যিনি জেহাদ বা ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করেন), মুহাজির (যিনি অন্য দেশ থেকে এসে হাজির হয়েছেন অর্থাৎ রেফিউজী), মুসাফির (যিনি সফর বা ভ্রমণ করে চলেছেন) প্রভৃতি৷ সেই যে মোসাহেৰের একটা গল্প আছে না!

রাজামশায়ের একজন মোসাহেৰ চাই৷ তিনি খৰরের কাগজে যথাৰিধি কর্মখালির বিজ্ঞাপন দিলেন৷ জানিয়েও দিলেন, ‘‘আবেদনকারীকে দরখাস্তের সঙ্গে ৫০০ টাকার ক্রশ চেক দিতে হৰে যা প্রত্যর্পণযোগ্য নহে৷ হাজারে হাজারে দরখাস্ত এল৷ লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষা চলছে৷ রাজামশায় বসে রয়েছেন৷ তাঁর সিংহাসনের বাঁ হাতলটা ধরে ঘাড় বেঁকিয়ে মন্ত্রীমশায় একটু কেতরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ এক একজন কর্মপ্রার্থী আসছেন ইন্টারভিউ (সংজ্ঞ–প্রতীতি) দিতে৷

রাজামশায় প্রথম জনকে জিজ্ঞেস করলেন–‘‘তুমি কি মোসাহেৰের কাজ পারৰে’’

সে ৰললে–‘‘নিশ্চয় পারব, জাঁহাপনা৷’’

রাজামশায় তার নাম খারিজ করে দিলেন৷ দ্বিতীয় কর্মপ্রার্থী এলেন–একজন চালাক–চতুর যুবক.......চোখে মুখে খই ফুটছে৷

রাজামশায় তাকে ৰললেন–‘‘মোসাহেৰের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরু দায়িত্ব! তুমি কি এ কাজ পারৰে’’

কর্মপ্রার্থী ৰললে–‘‘একবার চান্স দিয়ে দেখুন শাহানশাহ্, আমি নিশ্চয় পারৰ৷’’ রাজা তাকেও না–পসীন্দ*(*শব্দটা ফার্সী৷ তাই ‘না–পছন্দ’ না ৰলে ‘না–পসীন্দ’ ৰলাই ৰেশী ভাল৷ তবে এর ৰাংলা রূপ হিসেৰে ‘না–পছন্দ’ও চলতে পারে’৷) করলেন৷ ৰলা বাহুল্য, এরও চাকরী হ’ল না৷

পরের কর্মপ্রার্থীটি খুৰই শিক্ষিত কিন্তু ইন্টারভিউ কেমন হৰে তাই ভেৰে সে পৌষের শীতেও ঘেমে গেছল........রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সে রাজার সামনে এসে দাঁড়াল৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘মোসাহেৰের এই মহান কর্ত্তব্যে তুমি কি সমর্থ’’

উৎসাহের অগ্ণিতে প্রদীপ্ত হয়ে কর্মপ্রার্থীটি ৰললে–‘‘নিশ্চয়ই পারৰ৷ একশ’ বার পারৰ, স্যার......কথা দিচ্ছি স্যার....কেবল একবার একটা চান্স দিন স্যার....ন্দব্ভব্দব্ধ ন্তুড়্ত্রুন্তুন্দ্ব হ্মপ্তন্দ্ব্ত্রব্দন্দ্ব৷’’

রাজামশায় তাকেও বাতিল করে দিলেন৷ এবার যে ছেলেটি এল তার চোখে–মুখে বুদ্ধির ঝলক ছিল কিন্তু প্রজ্ঞার গভীরতা ছিল না৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘খোসামদের কাজটা তুমি কি পারৰে’’

সে বললে–‘‘সত্যিই রাজাসাহেৰ, খোসামদের কাজটা আমি কি পারৰ!’’

রাজামশায় ৰললেন–‘‘হ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো৷’’

সে ৰললে–‘‘হঁ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি৷’’

রাজামশায় আড়চোখে মন্ত্রীর দিকে চাইলেন৷ মন্ত্রী ৰললেন–‘‘মহারাজ, ইনিই সর্ৰগুণান্বিত, এঁকেই ৰহাল করুন৷ আজকের দিনে ইনিই বিশ্বমানবতার প্রতিভূ......জয়মাল্য পাবার ইনিই অধিকারী৷’’

রাজামশায় প্রার্থীকে ৰললেন–‘‘ৰুঝলে হে, আজ থেকে তোমার চাকরী হ’ল৷’’

তাহলে ৰুঝলে ‘কাণ্ড’ ৰলতে এই খোসামদকে ৰোঝায়৷ সংস্কৃতে কিন্তু মোসাহেৰকে ৰলা হয় ‘বিদূষক’৷ ‘মোসাহেৰ’ অর্থে সীমিত ক্ষেত্রে সংস্কৃতে ‘ভাণ্ড’ শব্দটিও চলত যার থেকে ৰাংলার ‘ভাঁড়’ শব্দটি এসেছে (যেমন–গোপাল ভাঁড়)৷ তবে ‘ভাঁড়’ ৰলতে ক্লাউনকেও ৰোঝায়৷ ‘‘আর ‘ভাঁড়ামি’ করতে হবে না’’–এমন কথা যখন আমরা বলে থাকি তখন কিন্তু সেটা ‘ভাণ্ড’ বা ‘ভাঁড়’ থেকে আসছে না, আসছে ‘ভণ্ড’ থেকে অর্থাৎ ভণ্ডামি অর্থে ‘ভাঁড়ামি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷

স্বাধীনতার কালে বাঙালী আগুন জ্বালে

লেখক
শিবরাম চক্রবর্ত্তী

বীর বাঙালী বাঘাযতীন,

প্রফুল্ল, বাদল, দীনেশ, বিনয়

মাতঙ্গিনীর মতো বহু

বীরঙ্গনা নারী বাঙলায় জন্মায়৷

এরা সবাই বাঙালীয়ানায়

বড়ো হয়ে শেষ কালে

ভারতস্বাধীন করার লাগি

লড়াই করেন সমানতালে৷

মারের মুখে কেউ বা পড়েন

কেউ বা নারীর সতীত্ব খুইয়ে,

বন্দেমাতরম্‌ ধবনি তুলে

ভারতমাতায় যায় জয় গেয়ে৷

এরা বাঙালীর ঘরে ঘরে

পেয়ে নারীর খুব মর্যাদা

চিরদিনের জপমালায়

বাঙালীর ভাবে থাকবে বাধা৷

১৭

মিলন মেলা

আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

বিশালতা ভরে মন

কি বা রণন...

তাপস বসি সদা

ভাবে সারাক্ষণ

তপোবন, তপোবন৷

কিবা ধ্যানে যোগীগণ

মাধুরীতে ভরি মন

কার সনে কহে কথা

জাগি অনুক্ষণ

তপোবন, তপোবন!

সুর লয়ে তুলি তান

করি কার অভিধ্যান

পথ বেয়ে চলে ওই

যত গোপীগণ

তপোবন, তপোবন!

ভুলি সব দিনক্ষণ

করি সব একপ্রাণ

প্রীতি উৎসবে মাতে

মার্মিক জীবন

তপোবন, তপোবন!

তোমার কৃপাধারা

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

যন্ত্রণা বহন করে চলা, আরেক যন্ত্রণা,

সে যন্ত্রণা গোপন করা,দ্বিগুণ যন্ত্রণা৷

তবু যন্ত্রণা কাতর হাসি হতাশারই প্রকাশ,

যন্ত্রণা লাঘব করার এক বিফল প্রয়াস৷

 

মহামূল্য এ যাতনা ভরা থাক মনে,

না প্রকাশিয়া সর্বজনে, রাখি সঙ্গোপনে৷

অভাগার শেষ সম্বল, দুফোঁটা অশ্রুজল,

হলে নিঃশেষ তাও, চিত্ত হয় দূর্বল৷

 

চাপা যন্ত্রণা সযতনে রাখা স্রষ্টার তরে,

নিভৃতে শ্রীচরণে অভিমানে ফেটে পড়ে!

সে যাতনা অনুভব করি তারিয়ে তারিয়ে,

অন্তরে জাগত পিতা দুহাত বাড়িয়ে৷

যন্ত্রণা সহিবার হেথা চরম সার্থকতা,

গভীর আনন্দ রূপ দিলেন বিধাতা৷

 

সমব্যাথি দয়া করে থাকো তুমি দূরে,

প্রেম-ডালি নিয়ে বিধি জাগত অন্তঃপুরে৷

যাতনা-সৃষ্ট আনন্দ, আনে জীবনের ছন্দ,

অভিমানে বিস্ফোরণ, সেতো মহানন্দ!

এখনো রয়েছে হাসি, তাই জাগ্রত আশা,

শিরে বরাভয়ের কৃপা হস্ত,

আছে ভালোবাসা৷

যন্ত্রণা আসে যায়, ভরা ভূবনে,

যন্ত্রণা তাঁর লীলা, যেন থাকে মনে৷

 

যবে একে একে প্রিয়জন দূরে যায় চলে,

হৃদাকাশ ভারাক্রান্ত জমাট বাদলে৷

তবু ছিন্ন সূত্রের পরেও অচ্ছেদ্য বন্ধনে,

আবদ্ধ দ্বৈত সত্তা----------

আত্মা ও পরমাত্মা৷

মোসাহেৰ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

কথায় বলা হয়, খোসামদে পাহাড়ও গলে মাখন হয়ে যায়৷ খোসামদে দুর্বাসা মুনিও গলে যান৷ সেই খোসামদের জন্যে ‘কাণ্ড’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ ‘খোসামদ’ শব্দটি এসেছে ফার্সী ‘খুসামদ’ থেকে৷ অনেকে ‘খুসামদ’–কে মার্জিত রূপ দেবার জন্যে ‘তোষামোদ’ ৰলে থাকেন৷ না, ‘তোষামোদ’ ৰলে কোনো শব্দ নেই৷ শাস্ত্রে ৰলেছে, খোসামদকারী প্রতি মুহূর্তেই প্রতি পদবিক্ষেপেই অধোগতি হয়, কারণ সে প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদবিক্ষেপে কেবল স্বার্থচেতনায় অস্বাভাবিক কাজ করে থাকে৷ আগেকার দিনে রাজাদের বা অবস্থাপন্ন লোকেদের বেতনভুক খোসামদকারী থাকত৷ তাদের ৰলা হত মোসাহেৰ–যারা সৰ সময় নিজেদের কর্ত্তাকে ‘সাহেৰ’, ‘সাহেৰ’ ৰলে তুষ্ট রাখবার চেষ্টা করে৷ আরৰী ব্যাকরণ অনুযায়ী ওই ‘সাহিৰ’ শব্দটির আদিতে ‘মু’ সংযুক্ত করে তাদের ৰলা হয় মুসাহিৰ বা মোসাহেৰ৷ এইভাবে বিভিন্ন গুণের সঙ্গে ব্যষ্টির সংযোগ সাধন করে ক্রিয়া বা বিশেষ্যের আদিতে ‘মু’ যোগ করে আরৰীতে বিভিন্ন শব্দ সৃষ্ট হয়ে থাকে৷ যেমন মুয়াল্লিন, মুয়াজ্জিন (যিনি আজান দেন), মুজাহিদ (যিনি জেহাদ বা ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করেন), মুহাজির (যিনি অন্য দেশ থেকে এসে হাজির হয়েছেন অর্থাৎ রেফিউজী), মুসাফির (যিনি সফর বা ভ্রমণ করে চলেছেন) প্রভৃতি৷ সেই যে মোসাহেৰের একটা গল্প আছে না!

রাজামশায়ের একজন মোসাহেৰ চাই৷ তিনি খৰরের কাগজে যথাৰিধি কর্মখালির বিজ্ঞাপন দিলেন৷ জানিয়েও দিলেন, ‘‘আবেদনকারীকে দরখাস্তের সঙ্গে ৫০০ টাকার ক্রশ চেক দিতে হৰে যা প্রত্যর্পণযোগ্য নহে৷ হাজারে হাজারে দরখাস্ত এল৷ লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষা চলছে৷ রাজামশায় বসে রয়েছেন৷ তাঁর সিংহাসনের বাঁ হাতলটা ধরে ঘাড় বেঁকিয়ে মন্ত্রীমশায় একটু কেতরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ এক একজন কর্মপ্রার্থী আসছেন ইন্টারভিউ (সংজ্ঞ–প্রতীতি) দিতে৷

রাজামশায় প্রথম জনকে জিজ্ঞেস করলেন–‘‘তুমি কি মোসাহেৰের কাজ পারৰে’’

সে ৰললে–‘‘নিশ্চয় পারব, জাঁহাপনা৷’’

রাজামশায় তার নাম খারিজ করে দিলেন৷ দ্বিতীয় কর্মপ্রার্থী এলেন–একজন চালাক–চতুর যুবক.......চোখে মুখে খই ফুটছে৷

রাজামশায় তাকে ৰললেন–‘‘মোসাহেৰের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরু দায়িত্ব! তুমি কি এ কাজ পারৰে’’

কর্মপ্রার্থী ৰললে–‘‘একবার চান্স দিয়ে দেখুন শাহানশাহ্, আমি নিশ্চয় পারৰ৷’’ রাজা তাকেও না–পসীন্দ*(*শব্দটা ফার্সী৷ তাই ‘না–পছন্দ’ না ৰলে ‘না–পসীন্দ’ ৰলাই ৰেশী ভাল৷ তবে এর ৰাংলা রূপ হিসেৰে ‘না–পছন্দ’ও চলতে পারে’৷) করলেন৷ ৰলা বাহুল্য, এরও চাকরী হ’ল না৷

পরের কর্মপ্রার্থীটি খুৰই শিক্ষিত কিন্তু ইন্টারভিউ কেমন হৰে তাই ভেৰে সে পৌষের শীতেও ঘেমে গেছল........রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সে রাজার সামনে এসে দাঁড়াল৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘মোসাহেৰের এই মহান কর্ত্তব্যে তুমি কি সমর্থ’’

উৎসাহের অগ্ণিতে প্রদীপ্ত হয়ে কর্মপ্রার্থীটি ৰললে–‘‘নিশ্চয়ই পারৰ৷ একশ’ বার পারৰ, স্যার......কথা দিচ্ছি স্যার....কেবল একবার একটা চান্স দিন স্যার....ন্দব্ভব্দব্ধ ন্তুড়্ত্রুন্তুন্দ্ব হ্মপ্তন্দ্ব্ত্রব্দন্দ্ব৷’’

রাজামশায় তাকেও বাতিল করে দিলেন৷ এবার যে ছেলেটি এল তার চোখে–মুখে বুদ্ধির ঝলক ছিল কিন্তু প্রজ্ঞার গভীরতা ছিল না৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘খোসামদের কাজটা তুমি কি পারৰে’’

সে বললে–‘‘সত্যিই রাজাসাহেৰ, খোসামদের কাজটা আমি কি পারৰ!’’

রাজামশায় ৰললেন–‘‘হ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো৷’’

সে ৰললে–‘‘হঁ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি৷’’

রাজামশায় আড়চোখে মন্ত্রীর দিকে চাইলেন৷ মন্ত্রী ৰললেন–‘‘মহারাজ, ইনিই সর্ৰগুণান্বিত, এঁকেই ৰহাল করুন৷ আজকের দিনে ইনিই বিশ্বমানবতার প্রতিভূ......জয়মাল্য পাবার ইনিই অধিকারী৷’’

রাজামশায় প্রার্থীকে ৰললেন–‘‘ৰুঝলে হে, আজ থেকে তোমার চাকরী হ’ল৷’’

তাহলে ৰুঝলে ‘কাণ্ড’ ৰলতে এই খোসামদকে ৰোঝায়৷ সংস্কৃতে কিন্তু মোসাহেৰকে ৰলা হয় ‘বিদূষক’৷ ‘মোসাহেৰ’ অর্থে সীমিত ক্ষেত্রে সংস্কৃতে ‘ভাণ্ড’ শব্দটিও চলত যার থেকে ৰাংলার ‘ভাঁড়’ শব্দটি এসেছে (যেমন–গোপাল ভাঁড়)৷ তবে ‘ভাঁড়’ ৰলতে ক্লাউনকেও ৰোঝায়৷ ‘‘আর ‘ভাঁড়ামি’ করতে হবে না’’–এমন কথা যখন আমরা বলে থাকি তখন কিন্তু সেটা ‘ভাণ্ড’ বা ‘ভাঁড়’ থেকে আসছে না, আসছে ‘ভণ্ড’ থেকে অর্থাৎ ভণ্ডামি অর্থে ‘ভাঁড়ামি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷

মিলন মেলা

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

বিশালতা ভরে মন

কি বা রণন...

তাপস বসি সদা

ভাবে সারাক্ষণ

তপোবন, তপোবন৷

কিবা ধ্যানে যোগীগণ

মাধুরীতে ভরি মন

কার সনে কহে কথা

জাগি অনুক্ষণ

তপোবন, তপোবন!

সুর লয়ে তুলি তান

করি কার অভিধ্যান

পথ বেয়ে চলে ওই

যত গোপীগণ

তপোবন, তপোবন!

ভুলি সব দিনক্ষণ

করি সব একপ্রাণ

প্রীতি উৎসবে মাতে

মার্মিক জীবন

তপোবন, তপোবন!

স্বাধীনতার কালে বাঙালী আগুন জ্বালে

লেখক
শিবরাম চক্রবর্ত্তী

বীর বাঙালী বাঘাযতীন,

প্রফুল্ল, বাদল, দীনেশ, বিনয়

মাতঙ্গিনীর মতো বহু

বীরঙ্গনা নারী বাঙলায় জন্মায়৷

এরা সবাই বাঙালীয়ানায়

বড়ো হয়ে শেষ কালে

ভারতস্বাধীন করার লাগি

লড়াই করেন সমানতালে৷

মারের মুখে কেউ বা পড়েন

কেউ বা নারীর সতীত্ব খুইয়ে,

বন্দেমাতরম্‌ ধবনি তুলে

ভারতমাতায় যায় জয় গেয়ে৷

এরা বাঙালীর ঘরে ঘরে

পেয়ে নারীর খুব মর্যাদা

চিরদিনের জপমালায়

বাঙালীর ভাবে থাকবে বাধা৷

তোমার কৃপাধারা

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

যন্ত্রণা বহন করে চলা, আরেক যন্ত্রণা,

সে যন্ত্রণা গোপন করা,দ্বিগুণ যন্ত্রণা৷

তবু যন্ত্রণা কাতর হাসি হতাশারই প্রকাশ,

যন্ত্রণা লাঘব করার এক বিফল প্রয়াস৷

 

মহামূল্য এ যাতনা ভরা থাক মনে,

না প্রকাশিয়া সর্বজনে, রাখি সঙ্গোপনে৷

অভাগার শেষ সম্বল, দুফোঁটা অশ্রুজল,

হলে নিঃশেষ তাও, চিত্ত হয় দূর্বল৷

 

চাপা যন্ত্রণা সযতনে রাখা স্রষ্টার তরে,

নিভৃতে শ্রীচরণে অভিমানে ফেটে পড়ে!

সে যাতনা অনুভব করি তারিয়ে তারিয়ে,

অন্তরে জাগত পিতা দুহাত বাড়িয়ে৷

যন্ত্রণা সহিবার হেথা চরম সার্থকতা,

গভীর আনন্দ রূপ দিলেন বিধাতা৷

 

সমব্যাথি দয়া করে থাকো তুমি দূরে,

প্রেম-ডালি নিয়ে বিধি জাগত অন্তঃপুরে৷

যাতনা-সৃষ্ট আনন্দ, আনে জীবনের ছন্দ,

অভিমানে বিস্ফোরণ, সেতো মহানন্দ!

এখনো রয়েছে হাসি, তাই জাগ্রত আশা,

শিরে বরাভয়ের কৃপা হস্ত,

আছে ভালোবাসা৷

যন্ত্রণা আসে যায়, ভরা ভূবনে,

যন্ত্রণা তাঁর লীলা, যেন থাকে মনে৷

 

যবে একে একে প্রিয়জন দূরে যায় চলে,

হৃদাকাশ ভারাক্রান্ত জমাট বাদলে৷

তবু ছিন্ন সূত্রের পরেও অচ্ছেদ্য বন্ধনে,

আবদ্ধ দ্বৈত সত্তা----------

আত্মা ও পরমাত্মা৷