প্রাচীনকালে ৪ ধরনের সাহিত্য গ্রন্থ লেখা হত ৷ কাব্য, ইতিবৃত্ত, ইতিহাস পূরাণ৷ বাক্যং রসাত্মক কাব্যং--- ছন্দ, উপমা প্রভৃতি দিয়ে রসাত্মক কাব্যরচনার নাম কাব্য৷ সমাজে যা ঘটছে--- তার হুবুহু পঞ্জীকরণ হ’ল ইতিবৃত্ত৷ কোনো এক রাজন, তাঁর ৪ ছেলে৷ তাদের ছেলে-পুলে তাদের রাজ্য বিস্তার বা জীবনযাত্রার কাহিনী--- এসব ঘটনাপঞ্জীর বিবরণ হ’ল ইতিবৃত্ত৷ ইতিবৃত্ত কিন্তু ‘ইতিহাস’ নয়৷ ইতিবৃত্তের মধ্যে যে অংশ শিক্ষাপ্রদ---সে অংশটাই হল ‘ইতিহাস’৷ আর পুরাণ হ’ল--- লোকশিক্ষার্থে রচিত কল্পিত কাহিনী৷ পুরাণের ঘটনাগুলো কাল্পনিক হলেও তার মাধ্যমে মানুষকে নানান্ শিক্ষা দেওয়া হয়৷ যেমন বলা হয়েছে,
‘‘অষ্টাদশ পুরাণেষু / ব্যাসস্য বচনদ্বয়ম্৷
পরোপকারঃ পুণ্যায়/পাপায় পর পীড়ণম্৷৷
অর্থাৎ অষ্টাদশ পুরাণে ব্যাসদেবের মূল বক্তব্য হ’ল,, পরোপকার হ’ল পুন্য, আর পরপীড়নই হল পাপকাজ৷’’
তেমনি এই যে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গাপূজা করা হয়, এই দুর্গার কাহিনী অনেকেরই অজানা৷ দেবতারা অসুরদের দ্বারা পরাজিত হয়ে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন৷ এ অবস্থায় সমস্ত দেবতাদের দেহ থেকে এক জ্যোতি বেরিয়ে এল,আর সেই জ্যোতি দুর্গার রূপ নিল৷ বিভিন্ন দেবতা তাদের অস্ত্র দিয়ে দুর্গাদেবীকে সজ্জিত করলেন৷ দুর্গাদেবী তখন অত্যাচারী মহিষাসুরের সঙ্গে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে মহিষাসুরকে বধ করলেন৷ দেবতারা স্বর্গরাজ্য ফিরে পেল৷
এ পৌরাণিক কাহিনীর মাধ্যমে শিক্ষানীয় বক্তব্যটি খুবই পরিষ্কার৷ এখানে আগে বলা উচিত, স্বর্গ বলে আলাদা কোনো স্থান নেই বা নরক বলেও আলাদা কোনো স্থান নেই৷
‘‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক
কে বলে তা বহুদূর
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক
মানুষেতে সুরাসুর৷’’
শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষগুলিই হ’ল দেব, আর পাপাচারী মানুষগুলি হল অসুরের প্রতীক৷ যুগে যুগেই এভাবে কখনো কখনো ভাল মানুষেরা পাপাচারী মানুষদের কাছে পরাভূত হয়৷ আবার ভাল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষরা সুসংঘটিত হলে তাদের মিলিত শক্তির কাছে অশুভশক্তি পরাভূত হয়৷
এই শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের মিলিত শক্তি হ’ল দুর্গার প্রতীক৷ তখন জ্ঞান (বিদ্যা), ধনসম্পদ,সবকিছু তাঁদের সহায় হয়৷ শুভ -অশুভের সংগ্রামে অশুভ শক্তির পরাভব ঘটে৷
দুর্গতিনাশিনী দুর্গার কাহিনীর মধ্যেই এটাই শিক্ষণীয়৷ এটাই বোঝারও উপলদ্ধি করার৷ এই পুরাণকাহিনী বলছে, দেশে সমাজে অশুভ শক্তির প্রাবল্য হলে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সমস্ত ব্যষ্টি ঐক্যবদ্ধ হোক৷ তাদের মিলিত শক্তির কাছে অসুরশক্তির ধবংস অনিবার্য৷
- Log in to post comments