মনে পড়ে --- চল্লিশ বছর আগের কথা

লেখক
মনোজ দেব

শ্রদ্ধেয় বরুণ সেনগুপ্ত তখনও বর্তমান পত্রিকা প্রকাশ করেনি৷ বাংলা ভাষার বিখ্যাত পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত৷ সম্ভবত ১৯৮০ মে মাসের প্রথম দিকে ওই পত্রিকায় তিনি একটি প্রবন্ধ লেখেন যার শিরোনাম ছিল--- ‘‘শুধু বঙ্গভাসাভাসী শরণার্থীদের নাগরিকত্বের প্রমান দিতে হবে?’’

ওই প্রবন্ধের টুকরো কিছু অংশ আমি এখানে তুলে ধরছি৷ একেবারে প্রথমে---‘‘শেষ পর্যন্ত শ্রীমতি গান্ধী যা-ই করুন, ইতিমধ্যে অসম প্রসঙ্গে সরকারি নেতারা ও অসমের  আমলারা এমন কতগুলি কথা বলেছেন ও এমন কিছু কাজ করছেন অবিলম্বে যার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের সরব হওয়া একান্ত প্রয়োজন৷ সারা ভারতকে এখন বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে পশ্চিমবঙ্গ এইসব জিনিস মানছে না ও কিছুতেই মানবে না৷

এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে আগে উল্লেখ করা প্রয়োজন অসম থেকে হাজার হাজার বাঙালীকে তাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা৷ অসমে যে এ জিনিস চলছে, অসম সরকার কেন্দ্রীয় কর্তৃকপক্ষের  আওতায় চলে আসার পরও যে এই জিনিস অবিরাম ঘটছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবের বিবৃতিই তার প্রমান৷ তিনি বলেছেন, সম্পূর্ণ  অবৈধভাবে অসম থেকে হাজার হাজার  বাঙালীকে  বিদেশী বলে ছাপ মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷

বরুণ বাবুর এই লেখাতে  একটা জিনিস পরিষ্কার, অসমের বাঙালী বিদ্বেষী আন্দোলনে কেন্দ্রের সম্পূর্ণ মদত ছিল৷ আজ তো মদত নয়, কেন্দ্রীয় সরকারই বাঙালী বিতাড়নে উদ্যোগ নিয়েছে৷ সেদিনও কেন্দ্রীয় সরকার অসমে বাঙালী বিদ্বেষী নীতি নিয়ে ছিল৷ বরুণ সেনগুপ্তের লেখা থেকেই পড়ে নিই৷

‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জৈল সিং-এর সাম্প্রতিক মারাত্মক ও বিপদজনক বিবৃতির  বিরুদ্ধেও পশ্চিমবঙ্গের অবিলম্বে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন৷ জৈল সিং বলেছেন ঃ অসমে যারা বিদেশী বলে ঘোষিত হবেন তাঁদের ভারত থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না, শুধু অন্য রাজ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে, তবে তাদের নাগরিক অধিকার দেওয়া হবে না৷’’

না, বাম কংগ্রেসে মশগুল বাঙালীর সেদিন হুঁশ ফেরেনি৷

বরুণবাবু সেদিন বাঙালীকে সতর্ক করে লিখেছেন---‘‘আজ  অসমে যা ঘটছে তার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে গর্জে না উঠলে কি একদিন অন্যান্য রাজ্যেও এইভাবে বঙ্গভাষাভাষী বিতাড়ন শুরু হতে পারে না? বাম কংগ্রেসে মজে থাকা বাঙালী সেদিন বরুণবাবুর এ প্রশ্ণ এড়িয়ে গেছেন৷ আর আজ তো পশ্চিমবঙ্গের এক গাড়ল নেতা কাশ্মীরে নিহত পাঁচ বাঙালীকে বাঙালী বলতে অস্বীকার করছে৷ আমার মনে হয় ওনার ড়িএন.এ টেষ্ট করে দেখা দরকার উনি বাঙালী ঔরসজাত কিনা?

যাক ওসব ক্ষোভের কথা বাদ দিন, রাম, বাম, ডান নয়, এরা সবাই দিল্লির পোষ্য৷ বাঙালীকে বাঙালী পরিচয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে, নিজের অধিকার বুঝে নিতে হবে৷

বরুণ সেনগুপ্তের শেষ কথাই সফল করা আজ বাঙালীর লক্ষ্য হোক৷ উপসংহারে তিনি লিখেছেন---ভারত সরকার বা ভারতের কোন নেতা যদি ভেবে থাকেন যে বঙ্গভাষাভাষীদের সর্বতোভাবে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত করে দীর্ঘকাল এই রাষ্ট্রের অখণ্ডতা বজায় রাখতে পারবেন তাহলে বলব তাঁর মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন ....

অসম নিয়েই দিল্লি চোখে সর্ষে ফুল দেখছে৷ অবিরাম লাঞ্ছনা গঞ্জনা ও বঞ্চনার ফলে যদি পশ্চিমবঙ্গেও ব্যাপক বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হয়ে যায় তাহলে কি কর্তারা তখন ফলের পরিবর্তে চোখে বড় বড় সর্ষে ক্ষেত দেখবেন না? ঐক্যবদ্ধ বাঙালী যদি রাম বাম ডান ভুলে  একবার গর্জে ওঠে তবে সুবর্ণরেখার পূর্বপাড় থেকে ব্রহ্মপুত্র বরাকভ্যালি পর্যন্ত দিল্লির সরকার সর্ষের ক্ষেত দেখবে৷