‘খটক’ শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে যিনি দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে কার্যসিদ্ধি করে দেন অর্থাৎ ‘ঘটক’৷ এঁরাও অনেক সময় কথা বেচে অনেক অনিচ্ছুক পাত্রপক্ষ ও অনিচ্ছুক পাত্রীপক্ষের ওপর অবাঞ্ছিত পাত্রী বা পাত্র গছিয়ে দেন৷ এই প্রসঙ্গে একটা ছোট্ট ঘটনা মনে পড়ল৷
সেটা ১৯৩৫ সালের কথা৷ আমরা তখন কলকাতায় থাকি, মামার বাড়ী শ্যামবাজারে৷ আমার দিদির বিয়ের সম্বন্ধ প্রায় পাকা হয়ে এসেছিল৷ কেবল পাকা দেখাটাই বাকী ছিল৷ পাত্র সব দিক দিয়েই ভাল–বার্মা গবর্ণমেন্টের উচ্চপদস্থ অফিসার৷ বাড়ী ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট৷ কোন তরফেই বিয়েতে কোন আপত্তি ছিল না৷ হঠাৎ আমার মা বেঁকে বসলেন......বললেন, মেয়েকে আমার নির্বাসনে পাঠাব না৷ হঠাৎ দরকার পড়লে মেয়েকে আনাতে পারব না৷ নিজেরা হঠাৎ ওখানে পৌঁছে যেতে পারব না৷ রেঙ্গুন অনেক দূর..... রেঙ্গুন অনেক দূর৷ অত দূরে মেয়ের বিয়ে দোব না৷ .... বিয়ে কলকাতার বাইরে দোবই না....তাও কেবল উত্তর কলকাতায়....বড় জোর ভবানীপুরে৷
আমার বাবা–মামা সবাই মা’র কথা মেনে নিলেন৷ প্রমাদ গুণলেন ঘটকী ঠাকরুণ৷ তাঁর মোটা একটা আয় গেল–গেল অবস্থায় গিয়ে পৌঁছোল৷ ঘটকী ঠাকরুণ একবার আমার বাবাকে ধরেন, একবার মামাকে ধরেন৷ ওঁরা বললে–মেয়ের মা যখন চাইছেন না তখন আমরা কিছুতেই বিয়েতে মত দিতে পারছি না৷
শেষ পর্যন্ত ঘটকী ঠাকরুণ আমার মা–কে বললেন–তুমি কেন রাজী হচ্ছ না মা? বার্মা তো বাঙলার পাশেই ও তো আর দূর বিদেশ নয়৷ এ যেমন আমাদের শ্যামবাজার–কুমোরটুলী৷
মা তাতেও রাজী হলেন না৷
ঘটকী তখন শুধোলেন, ‘‘হ্যাঁ মা, তোমার যে জামালপুরে থাক সেটা কোন জেলায়?
মা বললেন–মুঙ্গের জেলায়৷ তখন ফোকলা মুখে একগাল হেসে ঘটকী বললেন–তবে আর আপত্তি করছ কেন মা? মুঙ্গের আর রেঙ্গুন তো পাশাপাশি৷
মা বললেন, ‘‘সে তো নিশ্চয়ই....দুয়েতেই যখন ‘ঙ্গ’ রয়েছে’’ (শব্দ–চয়নিকা, ১২/১০৮)