ভারতের আয়তন বেশ বড়ো৷ এখানে নানা ভাষা-ভাষী ও ধর্মমতের মানুষ বাস করেন৷ তারমধ্যে ভারতের সুপ্রাচীন কাল থেকে যাঁরা বাস করছেন তাঁরা আছেন, আর আছেন দেশের বাহির থেকে আসা বিভিন্ন ধর্মমতের বাসিন্দারা ও তাঁদের বংশোধর গণ৷ যাঁরা সুপ্রাচীন কাল থেকে বাস করছেন তাঁরা সেই প্রাচীন কালের ধর্মকেই অর্র্থৎ সনাতন ধর্মের বার্র্ত্তবহ৷ সেই ধর্মই হলো আধ্যাত্মিক ধর্ম৷ যেটি সব মানুষের ধর্ম৷ কারণ মানব সমাজ হলো এক ও অবিভাজ্য৷ দেশ কাল পাত্রের আপেক্ষিক জগতে যে আপাত দৃষ্টিতে পার্থক্য দেখা যায় সেটা বাহ্যিক৷ কিন্তু মূলতঃ সকল মানুষের চাওয়া পাওয়াটি একই৷ এমন কোন মানুষ কী আছেন এই পৃথিবী গ্রহে যিনি আনন্দ পেতে চান না! যিনি স্নেহ ভালোবাসায় মুগ্দ হন না! সবই এক৷ তাই সার্থক সমাজ তখনই হয় যখন হিংসা ঘৃণা, বিদ্বেষ ভুলে মানুষ এক সঙ্গে থাকেন৷ সেই একসঙ্গে থাকা ও কল্যাণধর্মী চিন্তায় যাঁরা এগিয়ে যান তারাই প্রকৃত সভ্য মানুস৷ কয়েক লক্ষ বছর আগে পৃথিবীর বুকে মানুষ এসেছেন ৷ নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে এসেও সমাজবদ্ধ উন্নত জীব হিসাবে মানব সমাজকে গড়ে তুলতে পারেননি৷ পারেন নি বলেই বর্ত্তমান আধুনিক জগতে সুশিক্ষার অভাবে ও লোভ, হিংসা, ঘৃণার বসবর্তী হয়ে ভয়ংকর জঙ্গলের রাজত্ব করে তুলেছেন৷ সত্যাশ্রয়ী না হয়ে ব্যাভিচারী হয়ে বসেছে, বিংশ শতাব্দীতে পর পর দু’টো বিশ্বযুদ্ধে মানব সমাজ ক্ষত বিক্ষত হয়েছে৷ লক্ষ লক্ষ হতভাগ্য মানুষ মারা গেছেন, জীবজন্তু, অরণ্য সম্পদ ধবংস হয়েছে৷ পৃথিবী কোথাও কোথাও ধবংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷
তবে একটা কথা বলতেই হয়, তাহলো শেষের পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে আর বর্ত্তমান ২১০০ শতাব্দী পর্য্যন্ত এই গ্রহে ভৌত বিজ্ঞানের উন্নতি, শিল্প বিপ্লবের কারণে আপেক্ষিক জগতে যেমন একটা পরিবর্ত্তন এসেছে তার সঙ্গে আধ্যাত্মিক জগতে যে বিপ্লব মার্গ গুরুদেব, পরমারাধ্য ৰাৰা এনেছেন, তাতে এই পৃথিবী গ্রহে এক আধ্যাত্মিক বিপ্লব এসেছে৷ যার দরুণ মানুষ ব্যষ্টি ও সমষ্টি জীবনে সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক নব্যমানবতাবাদের চিন্তাধারায় পৃথিবী আপ্লুত হচ্ছে, মানুষ উপলব্ধি করছে যে মানুষকে সংকীর্ণতার ঊধের্ব উঠে এক মানব সমাজ গড়তে হবে৷ জাত,পাত সাম্প্রদায়িকতা চিন্তাশীল যুক্তিবাদী মানব আর তেমন আসল দেন না৷ মূলতঃ পৃথিবী হয়ে গেছে কে এক বৃহৎ পরিবারের মতো৷ আজ সেই পুরাতন ধর্মমতভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোর অনেকের মধ্যে ধীরে ধীরেবিশ্বৈকতাবোধের উদয় হচ্ছে৷ তাই তো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পৃথিবী আজ সচেতন৷ তবে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশকে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান হয় তাতে এই এলাকা বড়ই বিপদাপন্ন৷ এশিয়ার মধ্য প্রাচ্যেও সাধারণ মানুষ প্রচণ্ড সন্ত্রাসের শিকার৷
তাছাড়া যে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ গত কয়েক শতাব্দী ধরে পৃথিবী জুড়ে শোষণ চালায় তার অবসান ঘটায় সেই সাম্রাজ্যবাদীরা ছলবল কৌশলে নানাভাবে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলিকে উন্নয়ণের পথে বাধা দিয়ে চলেছে৷ তাছাড়া বর্ত্তমানে বৃহৎশক্তিগুলি যেমন আমেরিকা চীন নানাভাবে নাকগলিয়ে ও মুসলীম রাষ্ট্র গুলির বেশ কিছু রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদকে ছড়িতে দিতে আই এস-কে সাহায্য করছে৷ এতে ক্ষতি হচ্ছে এই গ্রহের অগ্রগতিতে৷ তবে ইউ.এন.ও বেশ কিছুটা এ ব্যাপারে সচেতন৷ তাই সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলো কিছুটা নিয়ন্ত্রিত আছে৷
তবে গণতন্ত্রের নামে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা যেখানে আছে , সেখানে বিরোধীরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিছক শাসন ক্ষমতা কায়েম করতে স্বচেষ্ট হয় তাহলে সেখানে যে দল এককভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে শাসন চালায়, সেই দল স্বৈরাচারিতার দিকে মোড় নেয়৷ সেখানে দলীয় স্বার্থটাই প্রবল হয়৷ আর ধনীরা সেই দলকে মদৎ দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রহশনে পরিণত করে৷ এই প্রবণতা দেখা যায় এশিয়ার বুকে৷ বড়ো দল ভেঙ্গে ছোট ছোট দল হয়৷ তাদের মধ্যে নানা কারণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না৷ সেই সুযোগে বড় দলগুলি লোকসভাকে এড়িয়ে ঘন ঘন সংবিধান পরিবর্তন করে সামাজিক, আর্থিক অচলাবস্থার সৃষ্টি করে, যার দরুণ ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সিংহভাগ মানুষ চরম বেকাতত্বের কবলে পড়ে৷ দলীয় রাজনীতির সংঘাতে আশাহত হয়৷ এইসব দেশের শাসকগণ কি কেন্দ্রে ও কী রাজ্যে মুষ্টিমেয় ব্যষ্টিকে পায়িয়ে দেওয়ার পথে অগ্রসর হয়৷ তাদের লক্ষ্য শুধু গদী লাভের৷ সেই লক্ষ্যে দল ভাঙ্গাভাঙি্গতে মত্ত হয়৷ যার ফলে দেশের সার্বিক কল্যাণটাই ব্যর্থ হয়৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা দীর্ঘ ৭২ বছরের গণতন্ত্রে মুষ্টিময় কিছুমানুষ উন্নতির মুখ দেখেন, বাকিরা যে তিমিরে সেই তিমিরে৷
শাসকদল প্রতিশ্রুতির বন্যা বহিয়ে দেন৷ জনগণের দিকে কোনই নজর নেই৷ শিক্ষ্যা স্বাস্থ্য পানীয়, রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা আর আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি৷ ফলে মানুষ দিশেহারা৷ এসব জেনেও কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদের কোন হেল দোলই নেই৷ নামে গণতন্ত্র, নোংরা দলতন্ত্রে দেশ সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে৷
অত্যন্ত লজ্জার কথা নির্বাচনে নানাকারণে নাগরিকরা অনেক ক্ষেত্রে বোট দিতে পারেন না৷ তার ভুরি ভুরি নজির আছে৷ কিন্তু সে দিকে শাসনে যাঁরা আছেন তাঁদের তেমন নজরই নেই৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা গণতন্ত্রে বিরোধী শূন্য করার প্রবণতাই বেশী দেখা যায় রাজনৈতিক দলওগুলির মধ্যে৷
প্রথমদিকে কিন্তু ভারতে এমনটা ছিল না৷ যতো দিন যাচ্ছে রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনাটায় ততই দীনতা র প্রকাশ পাচ্ছে৷ রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নে দেশ পঙ্গু হয়ে পড়ছে৷ নির্বাচনে কত মানুষ যে মারা যায় তার সঠিক হিসাব হয় না৷ তাই গণতন্ত্রকে দলগুলো কলঙ্কিত করছে নিঝক দলীয় স্বার্থে৷ এর জন্যে দেশের নাগরিককে সচেতন হতে হবে দেশের কল্যাণে৷ দলহীন গণতন্ত্রকে আহ্বান দিতে হবে৷ সৎ নাগরিক তরুণ তরুণীদের এগিয়ে আসতে হবে দেশ সেবায়৷ অধিকাংশ দল পরিবার কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে৷ ডাঃ বিধানরায়ের আমলে কিন্তু এই বাঙলা এমনটা ছিল না৷ তবে সে টাতো প্রাথমিক স্তর তাই গণতন্ত্রে সেদিন বর্ত্তমানের মতো অধঃপতন দেখা যায়নি৷
আজ দেশ সেবকের দারুণ অভাব৷ আজকের দলীয় রাজনীতিটা নিছক ধনী কেরিয়ারিষ্টদের অত্যন্ত আকর্ষণীয় বস্তুবিশেষ!
এই সংকটকালে মানুষ ও তার সমাজকে বাঁচাবার একমাত্র পথ মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের নব্যমানবতাবাদ ও তার উপর ভিত্তি করে পরিকল্পিত সামাজিক অর্থনৈতিকতত্ত্ব প্রগতিশীল উপযোগতত্ত্ব৷ যা শুধু মানুষকে নয়, মানুষ পশুপক্ষী তরুলতা সকলের সার্বিক কল্যাণের পথ বের করে দেবে৷ তাই বিশ্বের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নীতিবাদী মানুষের উচিত নব্যমানবতাবাদের পথে চলতে মানুষকে সচেতন করে তোলা৷
- Log in to post comments