নির্বাচন নির্বাচক ও সু-নেতৃত্ব

লেখক
সুভাষপ্রকাশ পাল

ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সদস্যরা শাসন ক্ষমতায় আসেন, তাঁদের পরিচালনায় দেশের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে বা দেশ শ্রীহীন হয়, একটা দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার যতগুলি পন্থা আছে যেমন--- রাজতন্ত্র,সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, গণতন্ত্র, মিলিটারী শাসন ইত্যাদি তার মধ্যে গণতন্ত্র মন্দের ভাল, গণতন্ত্র হল জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, জনগণের শাসন, কিন্তু বাস্তবে কী সত্যিই তা হয়৷ প্রথমতঃ যাঁরা ভোট দিচ্ছেন তাঁদের কতজন রাজনীতি সচেতন কোন প্রার্থী যোগ্য, কোন প্রার্থী অযোগ্য তা বিচার করার ক্ষমতা কতজনেরই বা আছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভোটের আগে মদ-মাংস (ভুরিভোজ) ঘটিয়ে, অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে, মিথ্যা ভয় দেখিয়ে ভুল বুঝিয়ে অজ্ঞ জনসাধারণকে নিজ দলের অনুকুলে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়, সেজন্যই অনেক সমাজতত্ত্ববিদ বলে থাকেন--- ভোটাধিকার সবার জন্য নয়, একমাত্র শিক্ষিত বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন লোকেদেরই ভোটাধিকার থাকা উচিত৷ দ্বিতীয়তঃ ভোট কাকে দেওয়া হবে,যাকে বোট দেব তিনি অবশ্যই সাধারণ মানুষের থেকে বেশী গুণযুক্ত হবেন৷ তিনি হবেন শিক্ষিত, সেবাপরায়ণ, রাজনীতি সচেতন ও চারিত্রিক গুণসমৃদ্ধ৷ কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখি? যার অর্থ আছে, বাহুবল বা লোকবল আছে, সামাজিক প্রতিষ্ঠা আছে, সুবক্তা--- তাদেরই অগ্রাধিকার ভোটে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে৷ ক্রীড়াক্ষেত্রে অভিনয় জগতে বা অন্যত্র যিনি বহু মানুষের মন জয় করেছেন--- বেশী ভোট পাওয়ার আশায় চতুর রাজনীতিবিদরা এ ধরণের ব্যষ্টিকেই ভোটে প্রার্থী করেন, কোটি টাকার মালিক ও বাহুবল বা লোকবল আছে--- এরূপ ব্যষ্টিরাই টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে থাকেন৷

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে আমাদের মত কিছুটা সচেতন সাধারণ মানুষকে৷ বিভিন্ন দলের কিছু সমর্থক আছেন যাঁরা চোখ-কান বুঝিয়ে নিজ দলের প্রার্থীকেই ভোট দেন তাঁর যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক, দলের বা গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীরা যাঁকে ভোট দিতে বলবেন--- এঁরা অন্ধের মত তাঁকেই ভোট দেবেন৷ আমাদের মত সাধারণ মানুষ যাঁরা কোনো নির্দিষ্ট দলের সমর্থক নন, একটু সৎভাবে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন-যাপন ইচ্ছুক---এদের নিয়েই যত সমস্যা৷ এদের জন্যই কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, সমাজতত্ত্ববিদদের চিন্তা করার সময় এসেছে--- এত কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন করার প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি না? যাঁরা ভোট দেবেন তাঁদের যোগ্য ভোটার (রাজনীতি সচেতন) হতে হবে, অন্ধ অনুগামী হলে চলবে না, আবার যাকে ভোট দেওয়া হবে তিনিও যোগ্য ব্যক্তি কিনা বিচার করে দেখতে হবে অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার থেকে ভোটপ্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকাই অধিকতর শ্রেয়৷

নেতার উপর কোনো দেশের ভাল বা মন্দ অনেকখানি নির্ভর করে, সমাজের যাঁরা নেতৃস্থানীয় তাঁরা যেমন আচরণ করেন, জনসাধারণ তাঁদের অনুকরণ তথা অনুসরণ করেন শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন---

‘যদ্‌ যদাচরতি শ্রেষ্ঠঃ তত্ত্বদেতরো জনঃ৷

স যৎ প্রমানং কুরুতে লোকস্তুদনুবর্ততে৷৷’’

‘‘এই সমাজে আজ যে দুর্গতি তার প্রধান কারণ একটাই৷ আর তা হল নেতাদের দুর্গতি৷ নেতাদের বিচারশীলতা যতই কম হোক না কেন, জনসাধারণ তাদের কথা অন্ধভাবে মেনে নেয়, তাদের ভাষণ তথা অভিনয় লক্ষ লক্ষ মানুষকে সম্মোহিত করে রাখে৷ কোনো দেশের বা সমাজের দুঃখ-দরিদ্র দেখলে বুঝতে হবে তা ওই দেশ বা সমাজের নেতাদেরই পাপের ফল৷ তাই যিনি নেতা, তাঁকে সর্বদা সুবিবেচনা ও সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে৷ আমরা যারা ভোটার তাদেরকেও সদা সতর্ক থাকতে হবে, শুধু দল দেখে বা নেতা-নেত্রীদের কথাতে নয় স্বীয় বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে যোগ্য প্রার্থীর উদ্দেশ্যেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে৷ এতে নিজের কল্যাণ, সমাজেরও মঙ্গল৷