নম ঃ কোন শ্রেষ্ঠকে দেখে বা অনুভব করে শ্রেষ্ঠত্বের সামনে যে নতি স্বীকার করা হয় সেই নতি স্বীকারের রীতি-পদ্ধতিকে ৰলা হয় ‘নমঃমুদ্রা’৷ নমঃমুদ্রায় দুই হাত জোড় করা হয় অর্থাৎ দুই হাতের মধ্যমাঙ্গুলি ছুঁইয়ে দিতে হয় যাতে করে মনের একগ্রতা সূচ্যগ্র হয়ে লক্ষ্যের প্রতি যথাযথভাবে অভিব্যক্ত হতে পারে৷ এই নমঃ মুদ্রায় মানুষ শ্রেষ্ঠের সামনে নিজেকে অভিনিবিষ্ট করে নিজের ক্ষুদ্রতাকে সমর্পিত করে৷ এই বিনিময়ে শ্রেষ্ঠের শ্রেষ্ঠত্ব তার মানসিক জগৎকে পরামৃষ্ট করে৷ অর্থাৎ কাউকে নমঃমুদ্রার দ্বারা নতি বা প্রণতি জানালে যাঁকে প্রণতি জানানো হচ্ছে তার লাভ হয় না, লাভ হয় তার যে প্রণতি জানাচ্ছে৷ গুরুর নিকট নমো-মুদ্রা জানাবার বিধি হচ্ছে শরীরকে সরল রেখাকারে শুইয়ে দিয়ে দুই হাত দীর্ঘায়ত করে দু’হাতের মধ্যমাঙ্গুলি ছুঁইয়ে দেওয়া অর্থাৎ দীর্ঘ প্রণাম করা৷ এতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ (আয়ুর্বেদের মতে শরীরের মুখ্য আটটি অঙ্গ রয়েছে৷ সেজন্যে আয়ুর্বেদকে অষ্টাঙ্গ চিকিৎসাবিজ্ঞানও ৰলা হয়) একই সঙ্গে নমঃমুদ্রায় রত থাকে ৰলে এই প্রণামকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম (অষ্টাঙ্গেন সহ ইত্যর্থে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস) ৰলা হয়৷ এই অবস্থায় শরীরকে সরল রেখাকারে রাখা হয় এই জন্যে যাতে প্রণম্য ৰোঝেন যে প্রণামকারী অন্যান্য জাগতিক ব্যাপারে যদিও বা বক্রতাকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন তিনি এই প্রণম্যের কাছে কোন বক্রতাকে প্রশ্রয় দেন না৷ অর্থাৎ অষ্টাঙ্গ প্রণামে তিনি সম্পূর্ণতই সরল৷ এই অবস্থায় শরীর সরল রেখাকারে অর্থাৎ যষ্টির মত অবস্থায় থাকে ৰলে একে দণ্ডবৎ (লাঠির মত) প্রণাম ৰলা হয়৷ তা এই হ’ল নমঃমুদ্রা৷ নমঃমুদ্রা হ’ল শ্রেষ্ঠের সামনে নতি স্বীকার করে বিনিময়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত প্রয়াস৷ এই নমঃ ধবনি হচ্ছে তাই জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের বীজ৷
নব ঃ সংস্কৃত ‘নব’ শব্দের দু’টি অর্থ ---একটি মানে ‘নয়’ (৯), দ্বিতীয় মানে ‘নূতন’৷ ‘নয়’ (৯) শব্দের বিশেষণে ‘নবম’ (ninth)৷ ‘নূতন’ অর্থে comparative degree-তে ‘নবতর’ কিন্তু superlative degree তে ‘নবতম’ ও ‘নবতন’৷ যেখানে কারও সঙ্গে তুলনা না করে ৰলা হচ্ছে এটি সবচেয়ে নোতুন, সেখানে ‘নবতন’ আর যেখানে অনেকের সঙ্গে তুলনা করে ৰলা হচ্ছে এটি সৰচেয়ে নূতন সেখানে ‘নবতম’৷ ‘নবতন’ > নওতন > নওতুন > নোতুন৷ ভালভাবে মনে রাখা দরকার যে ‘নূতন’ ও ‘নোতুন’ এক নয়৷ ‘নূতন’ একটি তৎসম শব্দ যার ইংরেজী প্রতিশব্দ New’ আর ‘নোতুন’ একটি তদ্ভব শব্দ যার মানে যা সবচেয়ে নূতন৷ যেমন অনেকের সঙ্গে তুলনা করে যদি ৰলি যে এটি সবচেয়ে পুরোন তার জন্যে হবে ‘পুরাতন’ আর কারও সঙ্গে তুলনা না করেই যদি নিষ্কর্ষে পৌছোই যে এটি সবচেয়ে পুরোন তাহলে ‘পুরাতন’৷ এই ‘পুরাতন’ থেকে ৰাংলায় তদ্ভবে এসেছে ‘পুরোন’৷ এই ‘পুরান’ শব্দটিও তৎসম শব্দ হিসেৰে প্রাচীনকাল থেকেই সংস্কৃতে ছিল, তৰে তার ৰানান ‘পুরাণ’৷ তার মানে হচ্ছে যার আদি খুঁজে পাওয়া যায় না৷ পরমপুরুষকে অনেক জায়গায় ‘পুরাণপুরুষ’ বা ‘পুরুষপুরাণ’ ৰলা হয়েছে৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)