পুর/নগর

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বহুজনপদের নামকরণ করা হয়েছে ‘পুর’, ‘নগর’ ইত্যাদি শব্দ যোগ করে৷ ছোট শহরকে সংস্কৃতে বলা হ’ত ‘পুর’ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, ‘শহর’ শব্দটা কিন্তু ফার্সী), আর বড় বড় শহরকে বলা হত ‘নগর’৷ উভয়ের মধ্যে তফাৎ ছিল এই যে নগরের চারিদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকত, সংস্কৃতে যাকে বলা হ’ত ‘নগরবেষ্টনীঁ’৷ এই নগরবেষ্টনীর মধ্যে যাঁরা বাস করতেন তাঁদের বলা হ’ত ‘নাগরিক’৷ আজকাল ‘নাগরিক’ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে যে অর্থে ইংরেজী ‘সিটিজেন’ কথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তার সঙ্গে প্রাচীন ‘নাগরিক’ শব্দের কোন সম্পর্ক নেই কেননা ‘নাগরিক’ মানে নগরের বাসিন্দা, অন্যদিকে ‘সিটিজেন’ বলতে বোঝায় দেশের যে কোন অধিবাসী–তিনি নগরেই বাস করুন বা কোন অজ পাড়াগাঁয়েই বাস করুন৷ ‘সিটিজেন’ শব্দটার আসল মানে ওই ধরণের প্রাচীরবেষ্টিত নগর বা সিটি–র অধিবাসী৷ কোন দেশের খাস অধিবাসী বলতে যা বোঝায় বাংলা ‘নাগরিক’ বা ইংরেজী ‘সিটিজেন’ কোন শব্দটাতেই তা বোঝায় না৷ অর্থাৎ কি না আমরা বাংলায় ‘নাগরিক’ ও ইংরেজীতে ‘সিটিজেন’ শব্দটি ব্যবহার করি সেই অর্থেই যে অর্থে খাঁটি ইংরেজী শব্দ হচ্ছে ত্ব্প্সুত্রন্দ্রন্স্তুন্দ্ব নুড়্ত্রত্ব্ন্ব্ধ্ত্রুব্ধ৷ ফার্সীতে এর জন্যে শব্দ হচ্ছে ‘মূলকী’৷ এই যে প্রাচীরবেষ্টিত নগর উর্দ্দুতে তাকে বলা হ’ত ‘হাবেলী’–ভোজপুরীতে ‘হাবলী’৷ মুঙ্গের জেলায় হাবেলী খড়গপুর নামে একটি জায়গা আছে৷ সেকালের নিয়মানুযায়ী রাত ন’টার সময় নগর বা হাবেলীর প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হ’ত আর চাবিটা রাখা হ’ত নগরপিতা ন্তুন্ব্ধম্ভ–ন্দ্র্ত্রব্ধ বা শেরিফ্ সাহেবের কাছে৷

এছাড়া ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় পুর, নগর, উপনগর প্রভৃতি শব্দযোগে বহু জনপদের নামকরণ করা হ’ত৷ তবে এ বিষয়ে বহু শব্দ আমরা ফার্সী থেকেও নিয়েছি৷ যেমন মার্কেটিং সেণ্টার অর্থে উর্দ্দুতে বলে ‘মণ্ডী’, সংস্কৃতে বলে ‘বিপণন–কেন্দ্র’ বা ‘বিপণি’, অর্থাৎ যেখানে বিপণন বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পণ্য নিয়ে যাওয়া যায়৷ অনেকে কেনাকাটা বোঝাতে গিয়ে ভুল করে মার্কেটিং’ শব্দটা বলে থাকেন৷ আসলে ‘মার্কেটিং’ মানে বিপণন করা বা বিক্রয় করা৷ গ্রামের চাষীরা হাটে–বাজারে আসে তাদের উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রয় করতে অর্থাৎ তারা মার্কেটিং–য়ে আসে৷ আর আমরা বাজারে আলু–পটোল কিনতে যাই অর্থাৎ ‘শপিং’ ব্দড়প্সহ্মহ্মনুন্ধগ্ করতে যাই৷ মার্কেটিং সেণ্টার বা ‘মণ্ডী’–ণ খাঁটি বাংলা শব্দ হচ্ছে পোস্তা৷ কলকাতাতেও ‘পোস্তাবাজার’ রয়েছে৷ পড়েছ তো সুকুমার রায়ের সেই নামজাদা কবিতা৷

‘‘শুণতে পেলুম পোস্তা গিয়ে,

তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে৷’’

গঞ্জ ঃ যেখানে গ্রাম আছে, আর সেই সঙ্গে বেচাকেনার জন্যে জমজমাটী বাজারও আছে তাকে বলে ‘গঞ্জ’ (গন্জ্–)৷ ইংরেজরা এর বিকৃত উচ্চারণ করতেন ‘গন্জ্’ ন্ধ্ত্রুন্দন্দ্বগ্গ৷ এইভাবে বেলী সাহেবের নাম থেকে এসেছে বালীগঞ্জ, টলী সাহেবের নাম থেকে এসেছে টালীগঞ্জ৷ আসল উচ্চারণ এর হওয়া উচিত বালীগঞ্জ, টালীগঞ্জ৷ পূর্ব বাঙলার সাধারণ মানুষেরাও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ বলে থাকেন৷ তাঁরাই ঠিক উচ্চারণ করেন৷ কেউ যদি ভুল উচ্চারণ করে বসেন, আমরাও কি তাঁদের লেজুড় হয়ে বসবো নাকি, না তাঁদের ত্রুটিটাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দোব তোমরাই বল না!