রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষমতা দখলের ন্যক্কারজনক লড়াই

লেখক
প্রভাত খাঁ

দীর্ঘ ৭১ বছর হলো আমরা নাকি স্বাধীন হয়েছি৷ ছেলেবেলায় কবিতায় পড়েছি ‘‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা!’’ সত্যই কি আমাদের দেশে দরিদ্র জনসাধারণ বর্তমানে সবাই দুবেলা দু’মুঠো অন্ন পায়? সমীক্ষায় বলা হয় আজও এদেশে জনগণের জীবন জীবিকার মান অন্য দেশের চেয়ে অনেক নীচে পড়ে আছে! কিন্তু বেশ কিছু ধনী ও রাজনীতির ব্যবসাদারগণ অর্থাৎ দলীয় রাজনীতিকে যারা একধরণের কারবার হিসাবে গ্রহণ করেছে তারা এ দল সে দল করে, দল ভাঙ্গাভাঙ্গি করে নিজেদের ব্যষ্টিজীবনে ও দলীয় ভাবে ক্যাডাররা আখের গুছিয়ে নিচ্ছে৷ হতভাগ্য সাধারণ মানুষ যে তিমিরে সেই তিমিরে পড়ে আছে ! দেশে ১৭তম লোকসভা নির্বাচন এসে গেছে৷ রাজনৈতিক দলগুলো যে যার সে তার নিছক বোটে জিতে রাজশক্তি কব্জা করতে নানা ভাবে হুংকার ছাড়ছে৷ ভারত বিরাট দেশ ৷ এই দেশে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষজন বাস করে, সে দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু আছে৷

প্রত্যেক নাগরিক নিজ নিজ প্রার্থীকে গোপন বোটের মাধ্যমে সমর্থন জানাবে৷ কিন্তু যতদিন যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে দলগুলোর অধিকাংশ যারা প্রধানত শাসনে আছে, তারা সেগুলো এমন সব কাণ্ড করে চলেছে যার অধিকাংশই গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী৷ দল ভাঙ্গাভাঙ্গিটা বড্ড বেশী বেড়েছে তার সঙ্গে আছে খুন খারাপিটাও৷ দলীয় নেতা ও নেত্রীদের ভাষায় সংযমের দারুণ অভাব দেখা দিচ্ছে৷

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আমাদের পশ্চিম বাংলায় মোট আসন সংখ্যা মাত্র ৪২টি৷ এই ৪২টি আসনে নির্বাচন হবে৷ এরজন্যে আয়োজন সেই অতীতের রাজসূয় যজ্ঞের মত৷ কোটি কোটি টাকা খরচ৷ এই খরচটা আসছে সেই গরিব মানুষের দেওয়া কর থেকে৷ যাঁরা প্রার্থী হয়েছে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মোটা টাকা দিতে হয়৷ তাছাড়া প্রচারে অন্যান্য খরচটা ও নেহাত কম নয়৷

শাসক দলগুলির টাকার অভাব নেই৷ তারা জয়লাভের জন্য দেদার টাকা খরচ করে৷ এদিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচন কমিশনের প্রচুর খরচ হয়৷ যে টাকা সরকার খরচ করে থাকে তা আসে সেই জনসাধারণের রক্তজল করা কর থেকেই৷ ছোট ছোট অনেক দলও নির্বাচনের প্রার্থী হয়ে দাঁড়ান৷ অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার কথা এমন কোন নির্বাচন দেখা গেল না, যেখানে নির্বাচন প্রকৃত নির্বাচনের মতো শান্তিপূর্ণ হলো৷ শান্তিতে বোট দানটাই যেন অকল্পনীয়!

বোটারদের অনেকের প্রাণহানি ঘটেও থাকে নির্বাচনে! এটা বড়ই দুঃখের ও বেদনার ৷ বিশেষ করে চারটি মানবিকমূল্য---সহনশীলতা, উদারতা, সত্যবাদীতা, সংযম এসবের বড়ই অভাব রাজনৈতিক জগতের নেতা-নেত্রী ও ক্যাডারদের৷ তাদের যেন তেন প্রকারেণ গদি কব্জা করাটাই হলো তাদের সংকীর্ণ মানসিকতায় পুষ্ট দলতন্ত্রের নীতি৷

গণতন্ত্রের মূল কথা হলো, সমস্ত দল নিজেদের নীতি ও কার্যকলাপ জনগণের সামনে প্রকাশ করবে৷ এবার জনগণ স্বাধীনভাবে বিচার বিেেবচনা করে দেখবে কাকে তারা সমর্থন করবে৷ তারা তাদের আপন আপন বিচার-বিবেচনা অনুসারে তাদের পছন্দমত দল বা প্রার্থীকে বোট দেবে৷ তাদের ওপর কেউ জোর-জবরদস্তি করবে না৷ আর, তারা যাকে বা যাদের বোট দিয়ে দেশশাসনের দায়িত্ব দেবে--- সব দল তথা সব প্রার্থী উদারতার সঙ্গে মেনে নেবে৷ সরকার চলা কালেও শাসকদল ও বিরোধী দল লোকসভায় বা বিধান সভায় বিভিন্ন ইস্যুর ভাল-মন্দ সব দিকে আলোচনা করে জনগণের হিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন ও সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন৷

জনগণের সেবা করাটাই জনপ্রতিনিধিদের লক্ষ্য হওয়া উচিত৷ কিন্তু বর্তমানে গণতন্ত্রের এই আদর্শ ও নীতি একেবারেই চোখে পড়ছে না৷ সবাই মুখে তাদের গণতন্ত্র প্রীতির কথা বলে, কিন্তু আসলে তাঁরা চান, গণতন্ত্রের নাম করে জনগণকে কিভাবে ধোঁকা দেন৷ যেন-তেন-প্রকারে শাসনক্ষমতা কব্জা করার পর তাঁরা জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের, নিজ আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধব ও পৃষ্ঠপোষক পুঁজিপতিদের স্বার্থসিদ্ধি কী করে করা যায় সেদিকেই লক্ষ্য বেশী৷

এদেশে নির্বাচনটাই হ’ল রাজনৈতিক দলগুলির শাসন ক্ষমতা লাভের এক ন্যক্কারজনক লড়াই৷