স্নিগ্ধতা আনা ও বুদ্ধিবৃত্তির সহায়ক তেঁতুল

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

নোতুন তেঁতুলের চেয়ে পুরণো তেঁতুলের গুণ অনেক বেশী৷ যে সকল গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গ্রীষ্মকালে শরীর শুকিয়ে যায় সে সকল দেশে তেঁতুলের ব্যবহার বিশেষ মূল্যবহ৷ শুকনো দেশে বা টানের সময় তেঁতুল না খেলে শরীর দুর্বল হতে পারে৷ পোস্ত, ক্ষিরি কলায়ের ডাল ও তেঁতুল বিশুষ্ক্তা রোগের প্রতিষেধক৷ অতি গরমে নাক দিয়ে রক্ত পড়লে এই খাদ্যগুলি রোগ নিরাময় করে থাকে৷

তেঁতুল একটি সাত্ত্বিক ফল৷ মস্তিষ্ক্ রচনায় এর যথেষ্ট ভূমিকা আছে৷

তেঁতুল মানুষের ৰুদ্ধিবৃত্তির সহায়ক৷ ঙ্মপুরণো তেঁতুলের চাটনি পাকা কলা সহ অল্প পরিমাণে মাঝে মধ্যে খেলে এব্যাপারে ভাল ফল পাওয়া যায়৷ এই ওষুধ আমাশয় রোগেও ভাল ফল দেয়৷ স্মরণশক্তি বাড়াতেও পুরনো তেঁতুলের এই ব্যবহার সাহায্য করে৷ এটি সুপ্তিস্খলন রোগেও সুপথ্য৷ তেঁতুল ক্ষীজের শাঁস ও বাড়ির পুরণো তেঁতুল ঔষধ তৈরীতে ব্যবহূত হয়৷ তেঁতুলের সাহায্যে অচার, চাটনি ইত্যাদি তৈরী করা হয়৷

অম্লরোগে তেঁতুল ছাল

‘‘তেঁতুল ছাল পোড়ালে সেই ছাইয়ের যে শাদা অংশটা পাওয়া যায় তার এক আনা পরিমাণ নিয়ে শীতল জলের সঙ্গে পান করলে অম্লরোগে ভাল ফল পাওয়া যায়৷’’

তেঁতুল বেশী খাওয়া ভাল নয়

 নীতি অনুযায়ী তেঁতুল বেশী খাওয়া ভাল নয়৷ অতিরিক্ত তেঁতুল ভক্ষণে রক্তদুষ্টি হতে পারে৷ অতি মাত্রায় তেঁতুল খেলে গেঁটে বাত হতে পারে৷ যাঁরা অতি মাত্রায় তেঁতুল খেতে চান তাঁরা গেঁটে বাতের প্রতিষেধক হিসেবে কাঁচা লঙ্কা মোটামুটি রকমের খেতে পারেন৷

তেঁতুলের হাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়

শাস্ত্রে ৰলা হয় তেঁতুলের মূল থেকে পাতা পর্যন্ত, ফল থেকে আঁটি পর্যন্ত সবই মানুষের বন্ধু,বন্ধু নয় কেবল তেঁতুলের [গাছের] হাওয়া৷ তেঁতুলের হাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়, তাতে চর্মরোগ হতে পারে৷ বাড়ীর উঠোনে বা বাড়ীর জানালার গা ঘেঁসে তেঁতুল গাছ রাখতে নেই৷ অবশ্য পুকুর পাড়ে তেঁতুল গাছ লাগালে সেই পুকুরের জল বিশুদ্ধ থাকে৷

অন্যান্য রোগে তেঁতুল ঃ হাঁপানী রোগে পুরণো তেঁতুল ঔষধের কাজ করে৷ পুরণো তেঁতুল–ভেজানো জল অল্প পরিমাণেও অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ মত খেতে হয়৷

অনিদ্রা রোগ, রোগ প্রতিষেধক হিসেবে ও আলস ার রোগে খামালু

খামালুর পুষ্টিগত মূল্য যথেষ্ট ও সুস্বাদু৷ দুপুরে (রান্না করা তরকারী হিসেবে) খেলে অনিদ্রা রোগের ঔষধ৷ রোগভোগান্তে দুর্বল রোগীকে প্রত্যহ অল্পমাত্রায় খামালু খেতে দিলে তাড়াতাড়ি শক্তি ফিরে আসে৷ পুঁই পাতার সঙ্গে একত্রে খামালু সেদ্ধ করে খেলে তা রোগ প্রতিষেধকের কাজ করে৷ তবে যাদের অম্লশূল আছে তাদের পুঁই পাতা না খাওয়াই ভালো৷ পাকস্থলীর ক্ষতে ও বিভিন্ন ধরনের আলসার রোগে মানকচু ও খামালু দুইই উপকারী হলেও [এ ব্যাপারে] খামালুর গুণ আরও একটু বেশী৷

কেশ রোগে ভৃঙ্গরাজ তেল

ভৃঙ্গরাজবর্গীয় কেশ–ঔষধীয় গাছ হচ্ছে এই কেশরঞ্জন বা কেশরাজ৷ ৰাংলার শহরে–গ্রামে বর্ষার জল পেয়ে প্রচুর পরিমাণে কেশরঞ্জন গাছ জন্মায়৷ বর্দ্ধমানের গ্রামের ভাষায় ভৃঙ্গরাজকে ক্ষলে ‘ভীমরাজ’ ও কেশরঞ্জনকে ক্ষলে ‘কেশরাজ’৷ চব্বিশ পরগণার গ্রামাঞ্চলে আমি কেশরঞ্জনকে ‘কেশুত’ বলতে শুণেছি৷ বাজারে পাওয়া ভৃঙ্গরাজ তেল চুলের গোড়ার ও মস্তিষ্কের ঔষধ৷ তেলটি খুবই ঠাণ্ডা৷ তাই মাথা গরম ও বায়ু বিকারের ঔষধ হিসেবে এর ব্যবহার আছে৷ উন্মাদ রোগেও ভৃঙ্গরাজ (তেল) ব্যবহূত হয়৷ মাথা–ঠাণ্ডা সুস্থ মানুষ অধিক ভৃঙ্গরাজ ব্যবহার করলে অনেক সময় সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে যায়৷ ভৃঙ্গরাজ–জাত তেলকে সংক্ষেপে কেউ কেউ ‘ভৃঙ্গর’ বলে থাকেন৷

কেশরাজ/কেশরঞ্জন/কেশুত চুলের গোড়ার ঔষধ, চুলকে চকচকে করে রাখার ঔষধ৷ ঈষৎ শীতল আবহাওয়ায় কেশরাজ বা কেশুত তেল প্রস্তুত করে শুকনো স্থানে শিশিতে ভরে রাখলে তা কেশ–রোগের ভাল রকমের ঔষধের কাজ করে থাকে৷ ভৃঙ্গরাজের মত কেশরাজও ইন্দ্রপতন–এর (কেশঘ্ণরোগ বা টাকপড়া–baldness প্রাথমিক স্তরের ঔষধ৷ চুলপড়া ৰন্ধ করতে বজ্রাসন ও উৎকট বজ্রাসন কার্যকর যা আচার্য শেখাবেন৷

তিল তেলের উপকারিতা

প্রাচীন আর্যেরা তৈল বীজের মধ্যে তিলের সংস্পর্শে প্রথম এসেছিলেন৷ আর তৈল শব্দটিও তিল থেকেই এসেছে৷ তৈল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থই হল–যা তিলসঞ্জাত৷ ভারতীয় তিল সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে–শাদা তিল, লাল তিল ও কৃষ্ণ তিল৷ খাদ্য হিসেবে সবচেয়ে ভাল শ্বেততিল (তিলকুট, তিলুয়া, তিলখাজা, রেউড়ী)৷ রন্ধন তৈল হিসেবে লাল তিলই সবচেয়ে ভাল৷ তবে সব ধরনের তিলই সব কাজে লাগানো যেতে পারে৷

মাথার পক্ষে সবচেয়ে ভাল হচ্ছে কৃষ্ণতিল চ্প্ত্ত্রন্তুন্স ব্দন্দ্বব্দ্ত্রপ্পন্দ্ব– নুস্তুন্ন্তুব্ভপ্প ড্ডড্রগ্গ৷ কৃষ্ণতিলের তেল চুলের গোড়াকে মজবুত রাখে৷ তিল তৈলের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে তিলের তেল কোন গন্ধ বস্তুর সংস্পর্শে এলেই সেই গন্ধকে টেনে নিতে পারে ও দীর্ঘকাল ধরে সেই গন্ধকে নিজের মধ্যে আটকে রাখতে পারে৷ ভারতীয় পদ্ধতিতে, বিশেষ করে আয়ুর্বেদে যে সমস্ত কেশ তৈল প্রস্তুত করা হয় তাদের বেশীর ভাগই করা হয় তিল তৈল থেকে৷

চুলের যত্ন

চুল চামড়ার নীচ থেকে ঠেলে ওঠে ও সেই ভাবে ক্ষাড়ে৷ চুলের শেষাংশ ক্ষাড়ে না৷ কাঁচা হলুদ–ক্ষাটা মাথায় মেখে স্নান করে, মাথা মুছে নিয়ে, তারপর শুকনো গামছা মাথায় ১৫/২০ মিনিট চেপে ক্ষেঁধে রাখলে চুল মজবুত হয়, চুলপড়া বন্ধ হয় চুল একটু ঢেউ খেলানো বা কোঁকড়ানো হয়৷