বাংলায় তথা সমগ্র ভারতে বহু প্রাচীনকাল থেকে সূর্য নানা নামে নানা রীতিতে পূজিত হয়ে আসছে৷ ঋগ্বেদের অন্যতম প্রধান দেবতা সূর্য৷ বিভিন্ন সময় পৃথিবীর ওপর সূর্যের প্রভাবানুসারে তাঁর নানা নাম৷ যেমন পৃষা, বরুণ, বিষ্ণু, মাতরিশ্বা, মিত্র ইত্যাদি৷ মিত্র কেন? ‘‘ অহরভিমানী দেবঃ’’ সায়নাচার্য মিত্রকে দিনের দেবতা রূপে গণ্য করেছেন৷ ইতু পূজা হচ্ছে মিত্র পূজা৷ অগ্রহায়ণ মাসের সূর্য মিত্র তুল্য৷ হেমন্তে মাঠে মাঠে শস্য ফলিয়ে জীবকে অনাহার থেকে উদ্ধার করেন বলেই সূর্য এই সময় মিত্র কার্তিক সংক্রান্তি থেকে অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি ফসলী ঋতুর সময়কাল অবধি প্রতি রবিবার ইতু পূজা হয়৷ সূর্য ইতু---এই ধারণা থেকেই রবিবার পূজার প্রচলন হয়েছে৷ কৃষিকার্যে সূর্যকে দেবতা কল্পনা করা হয়েছে৷
কার্ত্তিক মাসের সংক্রান্তির দিন একটা নতুন সরাতে মাটি দিয়ে তার ওপর ঘট স্থাপন করে, চারদিকে ধান মানকচু হলুদ এইসব গাছ বসাতে হয়৷ সেইসব গাছের , পাশে মটর কলমি বট, সরষে, শসনীর ডাল বসিয়ে কলাই, পঞ্চশস্য (ধান মৃগ মাষকলাই যব এবং শ্বেত সরিষা) ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷ অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে সাধ দিয়ে ইতুকে বিসর্জন দেওয়া হয়৷
যেহেতু ইতু মেয়েলী ব্রত তাই পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না৷ পুজোর শেষে মেয়েরাই ইতুর ছড়া বলবে---
কাঠি মুঠি কুড়াতে গেলাম,
ইতুর কথা শুনে এলাম৷
এ কথা শুনলে কি হয়?
অপুত্রের পুত্র হয়,
অশরণের শরণ হয়,
নির্ধনের ধন হয়৷
আইবুড়োর বিয়ে হয়,
অন্ধের চক্ষু হয়
অন্তকালে স্বর্গে যায়৷
কোন কোন নৃতাত্ত্বিক ইতু পূজাকে সূর্র্যেপসনা বলে মানতে রাজি নন৷ তারা ইতুকে মাতৃদেবী রূপেই গণ্য করেন৷ তাঁদের মতে ঘটের গায়ে পুতলি আঁকা এবং ঘটের ভেতরে শস্য দানা ও তৃণগুচ্ছ রাখা মাতৃকা রূপকেই সূচিত করে৷ যাইহোক ব্রতের রীতি ও উপচার বিশ্লেষণ করে ইতুকে শস্য-উৎসব বলা যেতে পারে৷
- Log in to post comments