১০১তম শুভ আন্তর্জাতিক দিবসে পরমারাধ্য ৰাৰার সম্বন্ধে কিছু ঘটনাবলির স্মৃতিচারণ

লেখক
সেবাকাধম ফকির

‘পরমারাধ্য ৰাৰা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ওরফে মহান দার্শনিক  শ্রদ্ধেয় প্রভাতরঞ্জন সরকার ধরাধামে এসেছিলেন জগতের সকল মানুষ তথা জীবজন্তু গাছপালার সার্বিক কল্যাণের সাধনকল্পে বিগত শতাব্দীর ১৯২১ অব্দের ২১শে মে৷ তিনি তাঁর সংকল্প সাধন করে ইহলীলা সংবরণ করেন ১৯৯০ অব্দের ২১শে অক্টোবর৷

বর্ত্তমান ২০২২ সালের ২১শে মে তাঁর আবির্ভাব হল ১০১ বৎসর৷ তিনি লোচক্ষুর অন্তরালে থেকে নীরবে তাঁর মহান কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে গেছেন তাঁর গৃহী ও সর্বক্ষণের ভক্তবৃন্দকে নিয়ে৷

গত শতাব্দীর ১৯৫৫ সালের জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে বিহারের জামালপুর শহরের রেল কোয়ার্টারে বসে তৈরী করেন আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ৷ তিনি তখন রেলে কর্মরত৷ সেখান থেকেই আনন্দমার্গের যাত্রা শুরু৷ ১৯৬৫ সালে পুরুলিয়ার গড়জয়পুর ব্লকের বাগলতা মৌজায় রাজপরিবারের দান করা জমিতে তৈরী হয় আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় আশ্রম আনন্দনগর৷ পরবর্তীকালে কলিকাতায় ই.এম.বাইপাসের ধারে  ভিআইপি নগরে তৈরী হয় মার্গের ক্যাম্প অফিস৷

তিনি সংঘটনের প্রবর্তক হিসাবে তাঁর জনকল্যাণমূলক কর্মযজ্ঞ করে যান শেষ জীবন পর্যন্ত প্রত্যহ প্রায় রাতে দিনে ২২ ঘন্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করে৷ তাঁর মহান কর্মযজ্ঞের নিত্যসাথী---সর্বক্ষণের নিত্য পরমভক্ত অবধূত ও অবধূতিকাদের সঙ্গে নিয়ে৷ এই মহান ত্যাগ ও নিষ্ঠার কারণে  তাঁর জীবিতকালেই তিনি পৃথিবীর ১৮২টি দেশে আনন্দমার্গকে গড়ে তোলেন  আধ্যাত্মিক তথা বিশ্বৈকতাবাদে উদ্বুদ্ধ স্বেচ্ছাসেবী সংঘটন  হিসাবে৷ তাই তিনি জগৎগুরু হিসাবে খ্যাত হন৷ তিনি বিশেষতঃ পরম শ্রদ্ধেয় ‘‘ৰাৰা’’ হিসাবেই বেশী পরিচিত বিশ্বের সকল ভক্তদের কাছে৷

জগতে তিনি সদ্‌গুরু হিসাবেই খ্যাত৷ তাঁর দর্শনে সকল মানুষ জীবজন্তু গাছপালা সবাই হলো সেই পরমপুরুষের সন্তান৷ তাই সেই ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়৷ আর সকল সৃষ্ট প্রাণী ও জড় পদার্থও হলো তাঁর সৃষ্টি৷ তাই এই জগতের সবাই তাঁরই সন্তান৷ মানুষের সমাজে সেই কারণে কোন ভেদাভেদ নেই৷ মানুষ মানুষ ভাই ভাই এইটি হলো মূলমন্ত্র৷ তাই মানুষের সমাজ এক ও অভিন্ন৷ এক মানব সমাজের মধ্যে কোন সংকীর্ণতা কুসংস্কার, জাতপাত থাকতে  পারে না৷ এই সার্বিক শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার  সংকল্প নিয়েই সেই সদ্‌গুরু তারকব্রহ্ম হিসাবেই আবির্ভূত হন এ ধরার বুকে৷ যখনই এই ধরায় তিনি আবির্ভূত হয়েছেন তখনই পাপশক্তি তাঁকে আক্রমন করেছে ও তাঁর উপর আঘাত হেনেছে৷ যেমন সদাশিব ও শ্রীকৃষ্ণ এসেছিলেন তখন তাঁদের পাপশক্তিকে নির্মূল করতে সংগ্রাম করতে হয়েছে ও সৎনীতিবাদীদের রক্ষা করতে হয়েছে৷ ঠিক তেমনই পরমারাধ্য ৰাৰাকে ও তাঁর ভক্তবৃন্দ কে এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে পাপশক্তির  দ্বারা আক্রান্ত হতে হয়েছে৷ সংগ্রাম করে তাঁদের পরাস্ত করতে হয়েছে৷ খোদ ৰাৰাকে কারাগারে ওষুধের পরিবর্তে বিসপ্রয়োগ করা হয় তাকে হত্যার জন্য৷ তিনি সেই বিষ হজম করেন ও তারই প্রতিবাদে ৫ বছর ৪মাস ১ দিন উপবাসী থেকে প্রতিবাদ করেন৷ শেষে তিনি ও তাঁর কয়েকজন অনুগামী মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি লাভ করেন মহামান্যপাটনা কোর্ট থেকে সম্পূর্ণ নির্র্দেষ প্রমাণিত হয়ে৷ তিনি মুক্তি লাভ করে তীব্রগতিতে সংঘটনকে নিয়ে যান ব্যাপক প্রচার ও সেবার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে৷ মহান সুপ্রিম কোর্ট আনন্দমার্গকে আধ্যাত্মিক সংঘটন হিসাবে স্বীকৃতি দান করেন৷

ইতিহাস বলে এই মহামানবের সাগর তীরে অর্থাৎ ভারতবর্ষে মহাকৌল এসেছিলেন শিব ও কৃষ্ণ৷ গুরু হতে গেলে মহাকৌল হতে হয়৷ তাকে তিনটি স্তরে যথা স্থূল জগতের সর্বস্তরে মানসিক জগতের সর্বস্তরে  ও আধ্যাত্মিক জগতের সর্বস্তরে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অন্ধকার দূর করতে হবে ভক্তবৃন্দের৷ যদিও বলা হয় গুরু শব্দের মানে হচ্ছে যিনি অন্ধকার দূর করেন৷ যে কোন একটার অন্ধকার দূর করলে গুরু হওয়া যায় না৷ কারণ প্রকৃত গুরুকে  জাগতিক মানসিক ও আধ্যাত্মিক তিনস্তরের  অন্ধকারই দূর করতে হয়৷ সদগুরু হতেই হবে৷ তাই তাঁর মাথায় দায়িত্ব অনেক৷ তিনটি ক্ষেত্রের বিরাট বোঝা মাথায় নিয়ে এগুতে হবে সেই মহান সদ্‌গুরুকে৷ ভক্তের সব দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে৷ তাই ৰাৰা বলেন গুরু হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়৷

আর সেই সদ্‌গুরু পাওয়াও ভাগ্যের কথা৷ তাঁকে সর্বশাস্ত্রে জ্ঞান লাভ করতে হয়৷ সর্ব বিষয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হয়৷ আর তাঁকে আর্থিক তথা সামাজিক  দর্শন দিতে হয় ভক্তবৃন্দকে, যাঁরা সমাজের সকল মানুষকে আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শোষণের হাত থেকে বাঁচাতে ও প্রতিটি মানুষকে স্বনির্ভরশীল করতে আর্থিক দিক থেকে এক বিকেন্দ্রীক অর্থনীতির অর্থাৎ ব্যাপক সমবায় আন্দোলন করে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আর্থিক শোষণের হাত থেকে সমাজকে বাঁচাবে কারণ হলো--- সেই মহান ‘সংগচ্ছধবং’ মন্ত্রের বাস্তবায়ন করে৷ সেই কারণে আর্থিক ও সামাজিক শোষণের  হাত থেকে সমাজকে  বাঁচাতে মহান দার্শনিক প্রভাতরঞ্জন সরকার প্রাউট দর্শন দিয়েছেন৷ পরিবর্ত্তনশীল আপেক্ষিত জগতে এই দর্শন অধ্যাত্মবাদকে মুখ্য রেখে সামাজিক পরিবর্ত্তনের  সঙ্গে  সামঞ্জস্য ঘটিয়ে প্রাউট দর্শন এক সর্বাঙ্গ সুন্দর শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে বিশ্বের সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সেই আধ্যাত্মিক  জগতের পানে৷

তিনি প্রায়ই বলতেন একটি  কথা তা হলো---তোমরা কেউ স্বেচ্ছায় আসনি আমি তোমাদের  নিয়ে এসেছি৷ এই প্রতিবেদনের লেখক হিসাবে  ব্যষ্টিগত জীবনে দীক্ষা নিতে যেসব আধ্যাত্মিক গুরুদের  কাছে গেছে তাঁরা খুবই খ্যাতি সম্পন্ন হলেও কয়েকজন তাকে দীক্ষা দেননি কথাবার্তা শুনে৷ কয়েকজন সরাসরি তাকে বলেন---‘আই অ্যাম নট্‌ ইয়োর গুরু’’ আবার অনেকে বলেন ---‘‘আপকা গুরু সফেদ ,নাটাসা আদমি৷’’ আমি সেই গুরুকে অনেক খুঁজেছি পাইনি৷ শেষে আনন্দমার্গ দীক্ষা নিয়ে যখন ৰাৰার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো তখন তাঁকে দেখে মনে হলো  যে তিনিই সেই ব্যষ্টি৷  তাঁকেই খুঁজেছি বেশ কয়েক বছর৷ শেষে ব্যারাকপুরে গঙ্গার পূর্বতীরে এক হাইস্কুলে গত ১৯৬১ সালে দুর্গাপূজার সময় এসেছিলেন ৰাৰা৷ আমি সেখানে যাই আচার্য ধীরেন দার কথায় যিনি পরে আচার্য নির্মলানন্দ অবধূত হন৷ সেখানে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম৷ একজন ছুটতে ছুটতে এসে আমাকে ডেকে  নিয়ে গেল তাঁর ঘরে৷ আমি ঘরে ঢুকে তাঁকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে  তাঁর সামনে বসি৷ তিনি আমায় দেখে বলেন আমি কোথা থেকে  এসেছি আমার নাম৷ আর বলেন--- এতো   দেরী করে এলে কেন? আমি বল্লুম আমি দেরী করিনি আপনি আমাকে দেরী করেই ডেকেছেন৷ ৰাৰা কিছু কথা আমায় জিজ্ঞাসা করেন৷ তা হলো আনন্দমার্গে আমার কেমন লাগে৷ আমি বললুম এটি তো আনন্দমঠের মতো বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত আমাকে তিনি কোলে বসিয়ে আদর করেন৷ আমি বললুম---আপনার আদর্শের জন্য আমি যে জীবন দিতে পারি৷ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে  বললেন--- ঠিক আছে৷

আজ তাঁর সম্বন্ধে কিছু লেখার অনুরোধ আসে আমার কাছে৷ মহাকৌল ৰাৰা এমন বিরাট আর বিশাল৷ তাই কি  বলবো আর কি লিখবো ভাবতে হচ্ছে৷ তবে আমার পরমারাধ্য ৰাৰাকে আমি যেমনটি দেখেছি  আর যেমনটি বুঝেছি, তার সম্পর্কে  লিখতে  চেষ্টা করছি৷ তিনি বলতেন, ‘আমি রহস্যে আছি, রহস্যে ছিলাম, রহস্যে থাকবো৷ এটি আমি পদে পদে  অনুভব করি, উপলব্ধি করি তিনি সর্বদাই আমায় ঘিরে আছেন৷ পর পর বাঁচিয়েছেন৷ আর সারা শরীরে কারেন্টের মতো মহাশক্তি ঘিরে রয়েছে৷

এমন এক শক্তি  আমাকে রক্ষা  করে চলেছে৷

পয়সা নেই অজানা ব্যষ্টি এসে টাকা দিয়ে গেছেন৷  নির্দেশ এলো ১ দিনের  মধ্য স্কুল করতে হবে৷ আমি কি করবো ভাবতে পারছি না৷ তাঁর নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লুম৷ একজন মার্গী ভাইকে  বললুম দু’টো  ঘর দেখতে৷ সে চলে গেল ১ ঘন্টা পরে এসে  বলল মাস্টার ঘর পেয়েছি তবে ভাড়া খুব বেশী৷  জিজ্ঞাসা করলুম কতো বলছে? সে বলল ৯০ টাকা৷ সেদিন ৯০ টাকা  মাসে মাহিনা অনেকের৷ চারজন বন্ধু মিলে ৯০টাকা জোগাড় করে  ঘরের চেয়ার টেবিল দিয়ে আর নিজেদের জনা কয়েক পাঁচেক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে ভর্ত্তি করে আর একজন মাস্টার মশাই পাড়া থেকে নিয়ে স্কুল হয়ে গেল৷ একটা সাইন বোর্ড ও লেখা হলো৷

স্কুল হয়ে গেল৷ সংবাদ পাঠিয়েছিলুম৷ এটা গত শতাব্দীর  ১৯৬৭ সালের ঘটনা৷ এইভাবে ৰাৰা কাজ করাতো৷  তাঁর  কথাটাই ফাইনাল৷ তখন হবে না বলা যেত না৷

নির্দেশ এলো বিধানসভায় দাঁড়াতে হবে৷ গত ১৯৬৮ সালে আরামবাগে প্রফুল্ল সেন ও অজয় মুখার্জীর বিরুদ্ধে৷ একদিন মাত্র হাতে সময় নমিনেশন জমা দেবার৷ একজনকে  নিয়ে আরামবাগের উদ্দেশ্যে রবানা কোনদিন আরামবাগ যাইনি৷  হাতে একখানা কাগজে লেখাপত্র৷ হাজির হলুম ঠিক ১২ টার সময় একজনের  বাড়ি তিনি ঐ পত্রের অংশিদার৷ তাঁকে পত্র দিলাম৷ তিনি পত্র পড়ে  বলেন এই পত্র লেখককে তো আমি চিনি না৷ তিনি উকিল ছিলেন৷ তাঁর ঘরে গিয়ে দেখি বিরাট একটি বাঁধানো ছবি সেটি প্রফুল্ল সেনের৷ তিনি পত্র পড়ে বললেন যে উনি আমার নেতা আমি কি করে আপনাকে  সাহায্য করবো৷ তবে এসেছেন একমুঠো ভাত  খেয়ে যান৷ আমি বললুম ---দাদা নমস্কার! সময় নেই আসি৷ আরামবাগ সরকারি কার্যালয়ে এসে একটি চায়ের দোকানে বসে ভাবছি আর ৰাৰাকে ডাকছি৷ এমন সময়  আমি জেলে  যখন ছিলাম তখন আরামবাগের অনেক আসামী জেলে ছিল আমি ৭নং  ঘরে থাকতুম হুগলী জেলে৷ তাদের কথা ভাবছি৷  এমন সময় আমাকে  দেখে একজন পরিচয় দিল৷ আমি তাকে সব কথা  বললুম৷ সে ভয়ে কোর্টে যেতে চাইছে না তবু তাকে নিয়ে একটি নমিনেশন পত্র জমা দেওয়ার জন্য আমি সহি করে তাকে সহি করতে বলায়  কালির পেণে  সহি করতে গিয়ে  পত্র ফাঁসিয়ে দিল৷ আবার  একটা আবেদন  পত্র নিয়ে আস্তে আস্তে সহি করে দিতে বললুম সেবার নাম লিখলো সেখ ধনু আর তার পিতার  নাম সখবর৷ জমা দেওয়া হলো সে সময় ২৫০ টাকা লাগাতো৷ আর ছেঁড়া আবেদন পত্রটি তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিলুম পরে৷ এইভাবে  কাজ করা হয়েছে তাঁর নির্দেশে৷ তাই আজ তিনি নেই৷ দরকার প্রকৃত কর্মী তবে সংঘটন এগিয়ে যাবে৷  তাঁর সর্বতো মুখী কর্ম প্রচেষ্টা আর কর্মীদের আন্তরিকতাটা ছিল সংঘটনে গতি৷ আজ তিনি নেই যেন  শূন্য বলে মনে হয় ৷ তবে আজ তিনি সূক্ষ্মভাবে চারি  দিকে বিরাজ করছেন৷ সেই বিশ্বাস নিয়ে আমাদের  কর্মযজ্ঞে ঝাঁপাতে হবে৷ তখন বোঝা যাবে তিনি আছেন৷

এটা তিনি চান  আর সংঘটনের প্রয়োজন সুদূঢ় কাঠামো৷ কাঠামো ঠিক থাকলে একদিন বিরাট প্রাসাদ হবে৷ তাই কাঠামোকে কষ্ট করে গড়তে হবে৷ জয় সুনিশ্চিত৷

ৰাৰার উপর পাপশক্তির  এতো আক্রমন কেন? তাঁর ৩৬০ ডিগ্রি সম্পূর্ণ দর্শন  যেখানে কোন ফাঁক নেই৷ আর প্রাউট দর্শন যেটি কমিউনিষ্ট ও ক্যাপিটালিষ্টদের বড়ই আতঙ্কের কারণ৷ তারা জনগণকে  শোষণ করে শাসন করে কিন্তু প্রাউট  সার্বিক শোষণ মুক্তির ডাক দিচ্ছে তাই এতো শত্রুতা৷  কিন্তু তিনি প্রাউটের আদর্শের ভিত্তিতে পিবিআই দল ৷ তিনি  তাঁর দলে  যোগ  ইন্দিরা চরম শত্রুতা করে আনন্দমার্গকে ধবংস করতে ৰাৰাকে মিথ্যা মামলায়  জড়ায় ও আনন্দমার্গকে নিষিদ্ধ করেন অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থায়৷

সিবি আই ৰাৰাকে চাপ দেয় ইন্দিরার নির্দেশে প্রাউট দর্শন বন্ধন করতে৷ ৰাৰা অমত হন ও বলেন নালীর কীটেরা যা পারে  তাই করুক প্রাউট ছাড়বোনা৷

সারা ভারতে  মার্গের সমস্ত  কাজকর্ম ও সক্রিয় মার্গীভাই ও কর্মীদের দীর্ঘ ২৩ মাস জেলে মিশা ও ডি আই আর দিয়ে  আটক করে ৷ সবস্থানে অফিস কার্য্যালয়ে তালাবন্ধ করে দেয়৷

কমিউনিষ্ট মার্কসবাদীরা তদের শাসনে ইন্দিরার সঙ্গে  আঁতাত করে বাহির  থেকে কেন্দ্রে কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তভাবে আনন্দমার্গকে নির্মূল করতে ১৯৮২ সালের  ৩০শে এপ্রিল দিবালোকে কলকাতার  রাস্তায় নির্মমভাবে গাড়ি থামিয়ে অস্ত্র দিয়ে পেট্রোল কেরোসিন দিয়ে  জ্বালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ১৭জন দাদাদিদিদের৷ তার কোন বিচারই হয়নি৷ শতাব্দীর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড৷ এটাই এদেশের রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ নেতা ও নেত্রীদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা৷ পরমারাধ্য ৰাৰা দুদিন উপবাস ছিলেন ও ঘরের দরজা বন্ধ করে কাল কাটান গভীর  মর্মবেদনায়৷ ছেলে ধরা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এই হত্যাকান্ড টা ঘটানো হয়৷

পরমারাধ্য ৰাৰা বলতেন--- আমি এডাল  ও ডাল করবো৷ তোরা ধরে থাকিস আমায়৷ এই কথাটি হলো কার কতো ভক্তি ও আত্মবিশ্বাস আছে তারই  পরীক্ষা তাঁর৷ যাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করে ও তাঁর উপর বিশ্বাস হারায় তারা  সংঘটন ছেড়ে যায়৷ এতে ভয়ে পাবার কোন কারণ নেই  মহাতান্ত্রিক মহাকৌল সেই সদ্‌গুরু সর্বদাই পরীক্ষা করেন৷ যদি কেউ চলে যাবে, সেই স্থান নোতুন এসে পূরণ করবেই এটাই গতিশীলতার লক্ষণ৷ যেদিন চলে যাবেন সেদিন তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন  প্রায় ৬৪ জন দীক্ষা দিয়েছেন৷ পরে বিশ্রামে গেছেন৷ ৩-১৫মিঃ তিনি ইহলীলা সাঙ্গ করে পরালোক গমন করেন!

সেদিন ছিল রবিবার৷ ঐ সময় আমি কিছু লিখছিলুম আর আমার নীচ থেকে একটা তরঙ্গ বহে আসছিল, আমি কিছু অনুভব করলুম মনে ভয়ংকর আতঙ্ক হলো মনে হলো বহু আপন যেন চলে গেলেন৷ রাতে একমার্গী ভাই বাড়িতে এসে দুঃসংবাদ, দিলেন যে পরমারাধ্য বাবা আমাদের  ছেড়ে চলে গেছেন৷ ভোরে তিলজলার দিকে রবানা হই৷

এই ভয়ঙ্কর ঘটনা যে ঘটবে এর ১৫ দিন  আগে বাবা ভোরের দিকে আমার মাথার কাছে এসে যেন বলছেন--- দেখ  আমি চলে যাচ্ছি তুই  সব দেখছিস৷ আমি ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলুম কিন্তু  এই কথা কারোর বলতে পারিনি৷ শেষে তারকেশ্বরে এক সেমিনারে মার্গী ভাই বোনদের  কাছে প্রকাশ করি৷ অত্যন্ত  মর্মাহত হবে বাবা৷ আজ  প্রায় ৩২ বছর হয়ে গেল আমরা ৰাৰাকে  হারিয়েছি! বড়ই অসহায় হয়ে পড়েছি! কিন্তু আমি আমার ভাই বোনদের কাছে অনুরোধ করবো এই বলে যে তিনি আমাদের উপর বিশ্বাস করেই দেহত্যাগ করেছেন এই আশা করে যে তাঁর সকল ছেলেমেয়েরা যেন তাঁর স্থূল শরীরের আবর্ত্তমানে যেন দ্বিগুন উৎসাহে আনন্দমার্গের  পতাকা বহন করে ও  তাঁর ইচ্ছাপূরণ করে আনন্দমার্গের কাজকে বহুগুন বাড়িয়ে তুলে!

ভক্তকে অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে তিনি আমাদের  অন্তরে সদাজাগ্রত আছেন ও সূক্ষ্মভাবে তিনি সারা দিক দিগন্তে  ছড়িয়ে রয়েছেন সূক্ষ্মদেহে৷

কারণতো বলেছেন---‘‘আমি এই শরীর নই আর এ শরীরটাও আমি নয়৷ যদি আমাকে জানতে চাও তবে আমার আদর্শের জন্য খূব করে কাজ করো৷

কারণ নিজেকে আদর্শের সঙ্গে  সম্পূর্ণ একাত্ম করে  দিয়েছি৷’’ ভয় নেই কাজ করো সবাই তীব্রগতিতে সংঘটনকে এগিয়ে নিয়ে যাও৷

পরিশেষে আরো কিছু ঘটনা আমার জীবনে ৰাৰাকে  কেন্দ্র করে না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে৷ আমি কারাবন্দী হিসাবে ২৩ মাস হুগলী জেলে ছিলুম৷ কারণ ইন্দিরা গান্ধী আমাদের মিশা আইনে আটক করেন আনন্দমার্গকে নিষিদ্ধ করে৷ এই দীর্ঘ ২৩ মাস আমি কারাগারে খেতেই হয়  তাই দিনে যা ভাত দিতো তা আধপেটার মতো তাই খেলুম কিন্তু রাতে খেতুম না৷  আমাকে বাধ্য করা হয় দাড়ি চুল কাটতে না হলে আমায় ছাড়া হবে না৷  আমি বললুম সিকিউরিটি অফিসার কে যদি দাড়ি চুল না কাটি  তা হলে সারা জীবন আমি আটক থাকবো তবু দাড়ি চুল কাটবো না৷ এটা কি  এমন বিপদজনক  যার জন্য  এতো বাড়াবাড়ি! যাইহোক  মুক্তি পাওয়ার পর ৰাৰাকে দেখতে জেলে পাটনা যাই৷ আমি এম.পি কে চিঠি দিই তাঁর দর্শনের৷ জেলে গিয়ে  যা দেখলুম তাতে  আমার চোখের জল আটকাতে পারিনি৷ বাবার শরীর শুধু পাঁচখানা হাড় সাদা  চামড়া দিয়ে ঢাকা৷  আমি তাঁর শরীরে আমার হাত দিয়ে আলতোভাবে বার বার বোলাতে লাগলুম আর কাঁদতে থাকি৷ ৰাৰা বললেন আনন্দনগর কেমন আাছে? আমি বললুম তোমার শরীরের মতো জীর্ণ ভাঙ্গা চোরা৷  আমার অর্শের যন্ত্রনা হতো ও রক্ত পড়তো  তো তাই  ৰাৰা আমাকে হ্যাডেনসার একটা ফাইল দিলেন লাগাতে৷ সেটা জেল গেটে পাশ করানো হয়৷ আর বললেন কয়েকটি কথা বাহিরে দাদাদের বলতে৷ সে কথাগুলি তিনবার  আমাকে দিয়ে বলালেন৷ সেটি হলো--- প্রতিবাদ , প্রতিরোধ , প্রতিশোধ, এই কথা তিনটি বাহিরের দাদাদের বললুম৷ তাই আজীবন আনন্দমার্গী হিসাবে সংগ্রাম করে যেতেই হবে পাপশক্তির বিরুদ্ধে মানবতাকে, নিপীড়িত শোষিতদের রক্ষাকল্পে৷ তাই প্রয়োজন পত্রপত্রিকা  ও ব্যাপক জনসেবা ও শোষণ বিরোধী আন্দোলন মৃতপ্রায়  সমাজকে জাগিয়ে তুলতে৷ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও  তাদের নেতা ও নেত্রীরা মিথ্যাচারী  ও প্রবঞ্চক৷ তারা লোক ঠকায় নানা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে৷ তাই সৎনীতিবাদী বলে যাঁরা প্রচার করেন তাঁরা লোক ঠকায়  না  মিথ্যা প্রতিশ্রুতি  দিয়ে৷ তাই সৎনীতিবাদী বলে যাঁরা  প্রচার করেন তাঁদের বাস্তবের মাটিতে অবশ্যই সংগ্রাম করতেই হবে৷ ঘরে বসে তত্ত্ব আলোচনায় চিঁড়ে মুড়ি ভেজে না৷

পরমারাধ্য ৰাৰা জীবনের  সর্বস্ব দিয়ে, জগৎকল্যাণে লড়াই করেছেন৷  এই লড়াইকে বাঁচিয়ে রাখবে  তাঁরাই  কেবলমাত্র  যাঁরা বিক্ষুব্ধী শুদ্র৷ এঁরা হলো চির বঞ্চিত, শোষিত ঘরের ছেলে৷ এদের নিয়ে এগুতে হবে৷ আর স্মরণে যেন থাকে  সকলের যাঁরা আনন্দমার্গের পতাকা তলে এসে কাজ করছেন  তা হলো এই সমাজে ব্যতিক্রম৷ বাবা নোতুন মানব সমাজ গড়ার কাজে হাত লাগিয়ে জীবিত অবস্থায় কিছুটা কাঠামো তৈরী করে দিয়ে গেছেন মাত্র৷ এটিকে দাঁতে দাঁত দিয়ে লড়াই করে সফল করতে হবে৷ তারজন্য অনেকটা পথ এগুতে  হবে৷ মনে রাখতে হবে  তাঁর নির্দেশিত পথে এগুতে হবে ৷ তবে তিনি বলতেন---‘যা বলেছি  তাই করো’ বর্তমানে আনন্দমার্গের বিশাল কর্মযজ্ঞ সফল করতে দরকার নিরলস ত্যাগী ভক্ত সেবক৷ কথা নয় কাজ বেশী৷ আনন্দমার্গের সংঘটন হলো এক মহান বিরাট কর্মযজ্ঞ সারা বিশ্বের সার্বিক কল্যাণে৷ এই পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়, কন্টকাকীর্ণ৷ পাপশক্তি প্রবল৷ তাই কর্মীদের মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখতেই হবে--- ফলিস্যইতি সিদ্ধে প্রথম লক্ষনম্‌৷ আত্মবিশ্বাসটাই হবে কর্মীদের  প্রধান সম্পদ৷ আশাকরি  সবাই এই পথে এগুবেন৷  নান্য পন্থা বিদ্যতে অয় নয়৷

বলার অনেক ছিল কিন্তু বলা  হলো না কারণ লেখাটি অনেক বড়ো হয়ে যাবে৷ পরমারাধ্য ৰাৰা বার বার বলেছেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলো৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তিনি চলে যাবার পর কয়েক বছরের মধ্যে  অনেকে চলে গেছেন৷ তাঁর সমাধি যে স্থানে যে মাটিতে আছেন সেখানেই তিনি প্রবল ভাবে অবস্থান  করছেন৷ এ বিশ্বাস আমি মনে প্রাণে রাখি ও করি৷ তাই বিরোধীতা  নয় ঝগড়া নয়, যারা ভাঙ্গছে ও বিভাজনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে তারা বিপথগামী৷ তাদের স্থান সমাজে নয় আবর্জনায়৷