লক্ষণ ও কারণ ঃ পাচক রসের ত্রুটি নিবন্ধন মল কাঠিন্য প্রাপ্ত হলে তা যথাবিহিত ভাবে নিঃসারিত হতে চায় না৷ মলের সেই কাঠিন্যকে বলা হয় কোষ্ঠকাঠিন্য৷ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে কোষ্ঠকে পরিষ্কার করবার জন্যে প্রাকৃতিক নিয়মে উদরে এক প্রকার হড়হড়ে বস্তু (gelatinous substance) তৈরী হয়ে যায়৷ এই হড়হড়ে বস্তুকে সংস্কৃত ও বাংলায় ‘আম’ বলা হয়৷ হিন্দীতে ‘আঁব’ (আঁও) বলে৷ এই ‘আম’ একটি তৎসম শব্দ যার ভাবারূঢ়ার্থ হ’ল কাঁচা জিনিস৷ যেমন ‘আম–মাংস’ মানে কাঁচা মাংস৷ অতিরিক্ত কাঁচা ফল খেলে (কাঁচা মানে না–রাঁধা), অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্য আনতে পারে এমন জিনিস খেলে (যেমন চিঁড়ে, যবের মণ্ড, ঘি কম ব্যবহার করে আতপ চাল, অতি মাত্রায় পুঁই শাক), তাহলে সেগুলিকে নাড়ী থেকে নিষ্কাশন করবার জন্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই mucous বা আম তৈরী হয়৷ আমরা সেই অবস্থাকে বলি আমাশয়৷ যে রোগটি এই আমের আশয় বা আশ্রয় তাকে সংস্কৃতে বলে আমাশয়৷ এ হ’ল mucous dysentery (আম–জনিত আমাশয়)৷
যদি মল কাঠিন্যপ্রাপ্ত হয়ে নাড়ীতে আটকে থাকে, স্বাভাবিক অবস্থায় ‘আম’ বা mucous যখন তাকে ঠেলে বার করে দিতে অক্ষম হয়, তখন তাকে জোর করে’ ঠেলতে গেলে নাড়ীর গায়ে আটকে থাকা মল সরে যায়, কিন্তু নাড়ীর গায়ে রেখে’ যায় ক্ষত৷ সেই ক্ষত দিয়ে যখন রক্ত ঝরে তখন তাকে বলে রক্ত আমাশয় (Blood dysentery)৷
খাদ্য বা পথ্য ঃ ঙ্ম অর্শের অনুরূপ ৰ
ঔষধ ঃ (১) আমড়া গাছের ডাল কাটলে বা ছাল ছাড়ালে ঝর ঝর করে রস বেরিয়ে আসে৷ সেই রস দুরারোগ্য প্রাচীন আমাশয় ব্যাধির উত্তম ঔষধ৷ ঙ্মব্যবহার বিধি হ’লৰ এক বল্কা ঙ্ম একবার ওথলানো ৰ ছাগদুগ্ধের সঙ্গে ১/৪ পরিমিত এই আমড়ার রস মিশিয়ে পর পর তিন দিন প্রত্যুষে খালি পেটে খেলে তা মন্ত্রবৎ কাজ করে৷
অন্যান্য রোগে আমড়ার ছাল ঃ ‘‘এক তোলা দেশী আমড়ার ছালের রস চীনীর সঙ্গে পান করলে প্রস্রাবের ক্লেশ দূরীভূত হয়৷’’
‘‘ছাগদুগ্ধের সঙ্গে আমড়ার ছালের রস মিশিয়ে প্রত্যহ প্রত্যুষে পান করলে শ্বেতকুষ্ঠ বা ধবল রোগে সুন্দর ফল পাওয়া যায়৷’’
(২) দুগ্ধক্ষীরা (দুগ্ধিকা Euphorbia hirta Linn— এক ধরনের ভূমিশায়ী লতা জাতীয় গুল্ম–পাতা লম্বাটে মত, তা মিষ্টিও নয়, তেঁতোও নয়৷ স্বাদে একটু কষা৷ এর পাতা বা ডাল ছিঁড়লে শাদা দুধের মত রস বেরিয়ে আসে৷ সেই রস আমাশয় ও রক্ত–আমাশয় উভয়েরই ঔষধ৷ পাকা কলা (বেশী পাকা–বর্ধমান অঞ্চলে যাকে বলে মজা কলা) খোলা ছাড়িয়ে ঘিয়ে ভেজে খেলে তা আমাশয় রোগের ঔষধ৷ এই ঘিয়ে ভাজা গরম কলায় দুগ্ধক্ষীরার রস মাখিয়ে নিলে সোণায় সোহাগা৷ আমাশয়ের এটি একটি ভাল ঔষধ৷
অর্শরোগে দুগ্ধক্ষীরা ঃ ‘‘ভোরে খালি পেটে দু’ তোলা পরিমাণ দুগ্ধক্ষীরার রস পান করলে অর্শরোগে ভাল ফল পাওয়া যায়৷’’
(৩) আমাশয়ে থান্কুনি বা থুন্কুড়ি পাতা (রস) সবচেয়ে ভাল ঔষধ ঙ্ম এক বা দুই চামচ ভোরে খালি পেটে ৰ৷
(৪) (আমাশয়) ‘‘রোগের ৰাড়াৰাড়ি অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকলে প্রাতে ও সন্ধ্যায় দু’বেলাই রোগীকে অল্প পরিমাণ দুবর্বার রস বা কুকসিমা পাতার রস খাইয়ে দিলে বেশ সুফল পাওয়া যায়৷’’
(৫) বটের ঝুরি দিয়ে আমাশয়ের উত্তম ঔষধ তৈরী হয়৷ ‘‘আধ তোলা বটের ঝুরি (কচি অংশ) চাল ধোয়া জলের সঙ্গে বেটে খেলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ভাল ফল পাওয়া যায়৷’’