বাংলাভাষার উন্নতিকল্পে হুসেনশাহের অবদান স্মরণযোগ্য

লেখক
প্রণবকান্তি  দাশগুপ্ত

উদ্ধৃতি ঃ নোতুন পৃথিবী (আপ্তবাক্য)---‘‘বঙ্গদেশে সংস্কৃত পণ্ডিতেরা বাংলাভাষাকে অবদমন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু নবাব হুসেন শাহ বাংলাভাষার উন্নতিকল্পে সব রকমের সাহায্য ও উৎসাহ দিয়েছিলেন৷ তখন ও পর্যন্ত রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত সংস্কৃতেই লিখিত ছিল৷ পরবর্ত্তীকালে কবি কৃত্তিবাস, কবি মালাধর বসু (গুণরাজ খাঁ) যথাক্রমে রামায়ণ মহাভারত ও ভাগবত বাংলায় অনুবাদ করেন৷ সংস্কৃত পণ্ডিতেরা রটিয়ে দেন যে নবাব হুসেন শাহ্‌ নাকি হিন্দুধর্মকে ধবংস করার ষড়যন্ত্র করছেন কারণ হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলিকে সংস্কৃতে না রেখে বাংলায় অনুবাদ করানো হচ্ছে৷ তাঁরা কৃত্তিবাস  ওঝাকে সামাজিক বয়কট ও হিন্দুধর্ম থেকে বহিষ্কার করেছিলেন এটা আজ থেকে প্রায় ৪৫০ বৎসর আগে ঘটেছিল৷’’ ---শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার (কণিকায় প্রাউট ২১ খণ্ড)৷

উদ্ধৃত কথার মধ্যে পূর্ণমাত্রায় ঐতিহাসিক সত্যতা আছে৷ হুসেন শাহ ছিলেন মধ্যযুগের বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা৷ শিক্ষা ও  সংস্কৃতির যথেষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন৷ বাংলাভাষা আর  সাহিত্যের উন্নয়নের প্রতি তাঁর প্রচেষ্টা ছিল অপরিসীম৷ সেই সময়ে বাংলার সাহিত্যিকরা মালাধর বসু, বিপ্রদাস, বিজয় গুপ্ত, যশরাজ খাঁ প্রমুখ সুলতানের সাহায্য লাভ করেন৷ তাঁর উদারতায় মুগ্দ হয়ে হিন্দুরা হুসেন শাহ-কে নৃপতি-তিলক ও জগৎ-ভূষণ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন৷

হুসেনশাহী আমলেই বাংলার সাহিত্যের নবজাগরণ ঘটেছিল৷ এই জাগরণ ঘটেছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে৷ এর মূল কারণ ছিল জনগণের মহাকাব্য ও পৌরাণিক উপাখ্যানের প্রতি আকর্ষণ, বাংলাভাষা ও সাহ্যিত্যের প্রতি হুসেনশাহীদের পৃষ্ঠপোষকতা আর চৈতন্যবাদের অভ্যুত্থান৷ ভাবের আদানপ্রদানের  বাহন হয়ে ওঠে বাংলাভাষা৷ চৈতন্যদেবের জীবনচরিত বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে এক নতুন রূপান্তর ঘটায়৷

হুঁসেনশাহী সুলতান ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের মধ্যেও বাংলা সাহ্যিত্যের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়৷ চট্টগ্রামের শাসনকর্তা পরাগল খাঁ-র পৃষ্ঠপোষকতায় সর্বপ্রথম মহাভারত বাংলাভাষায় অনুবাদ করেন কবীন্দ্রপরমেশ্বর৷ এছাড়া বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস প্রমুখ কবিদের ‘মনসা-মঙ্গল’ কাব্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করায় হুসেন শাহ্‌ ও তাদের প্রশংসা করেন৷