বাঙালীস্তানই বাঙালীর বাঁচার একমাত্র রাস্তা

লেখক
এইচ এন মাহাত

বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (ক্যা) নামে বাঙালী জাতিকে নিয়ে নাগরিকত্ত্ব নির্ধারণের টেষ্টটিউবে ভরে গিনিপিগের মতো ব্যবহার করছে৷ ভারত ভূমি থেকে বিতাড়িত করতে  ষড়যন্ত্র করে চলেছে৷

অসম ও পশ্চিম বাঙলায় বিধানসভার নির্বাচনের দামামা বেজে গেছে৷ তাই বিজেপি এখন ষড়যন্ত্র করে বাঙালীকে হেনস্তা করতে নাগরিকত্ত্ব আইনের বিধি তৈরীর প্রক্রিয়াকে করোনা ভাইরাস ও ভোটের রাজনীতির নামে পিছিয়ে দিতে চাইছে৷ অতীতে যে বাঙালীর ভোটে বিজেপি কেন্দ্রে সরকার তৈরী করলো সেই বাঙালীকে এখন বলছে তাঁরা বিদেশী বহিরাগত৷ এই বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে বাঙালী জাতিকে বার বার অপমান করে চলেছে৷ এর থেকে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে ভোটের রাজনৈতিক  স্বার্থে বাঙালীকে নিয়ে পুতুল খেলা করছে বিজেপি৷

নাগরিকত্ব আইনের বিধি তৈরীর প্রক্রিয়াকে আবার পিছিয়ে দেওয়ার পিছনে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা৷

কিছু দিন আগে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন অসমে এসে বলেছেন--- গত নির্বাচনে যে সকল বাঙালী নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলো তাদের নাম  নাগরিকপঞ্জীতে না থাকলেও এবারের ভোটে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে৷ অথচ রাষ্ট্র বলছে ওরা নাগরিক নয়৷ আবার নির্বাচন কমিশনও বলছে উল্লেখিত বাঙালীরা ভোটাধিকার পাবে৷ এটা কী ধরণের রসিকতা বাঙালী জাতিসত্তার সঙ্গে! বিজেপির বক্তব্য অনুযায়ী বাঙালী ঘুচপেটিয়াদের ভোটের আগে প্রয়োজন আর ভোট পেরোলেই তারা হলেন  বিদেশী৷ দেশের সংবিধান অনুযায়ী নাগরিক ছাড়া ভোটার হতে পারে কী? পারে না৷ তাহলে কী চলছে বাঙালীকে নিয়ে? সুতরাং এটা যে বিজেপির একটা বাঙালী বিদ্বেষী দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কী?

‘‘আমরা বাঙালী’’ চায় প্রতিটি বাঙালীর শুধুমাত্র ভোটাধিকার নয়, নাগরিকত্বের সুনিশ্চিত করণ৷ এই ব্যবস্থা না হলে ভোটের পর এন.আর.সি বা ক্যা-র নামে বাঙালীকে দেশ ত্যাগ করতে হবে, অথবা ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে বাধ্য হবে৷

দেশভাগের সময় তৎকালীন ভারতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি ছিলো দেশভাগের বলি সকলের জন্য নাগরিকত্ব ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে৷ উদ্বাস্তু পঞ্জাবিদের ক্ষেত্রে তা হলেও বাঙালীকে দণ্ডকারন্য, মরিচঝাঁপি, কালাপানি ও কালাহান্ডির মতো ভয়ঙ্কর হিংস্র জন্তু জানোয়ারদের মুখে ঠেলে দিয়ে চূড়ান্ত বৈষম্যমূলক আচরণ তথা মানবতার চরম অবমাননা করা হয়েছে৷ শুধু তাই নয় পশ্চিম বাঙলার মরিচঝাঁপি, ত্রিপুরার মান্দাই সহ বিভিন্ন স্থানে একতরফা বাঙালী গণহত্যা, অসমে ৫০ সাল থেকে চলা বঙাল খেদার নামে গণহত্যার ভয়ঙ্কর দিনগুলো বাঙালীর কাছে আজও আতঙ্ক৷

বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের বাঙালীর প্রতি সমস্ত প্রতিশ্রুতি আজ ধাপ্পায় পরিণত হয়েছে৷ অসমে ডিটেনশন ক্যাম্প গুড়িয়ে দেবেন, পাঁচগ্রামের কাগজ কল খোলা ইত্যাদির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমস্ত প্রতিশ্রুতি  আজ ধাপ্পায় পরিণত হয়েছে৷ এই দলের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো হিন্দী হিন্দু হিন্দুস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷ কাজেই প্রমাণিত বাঙালীদের নাগরিকত্ত্ব সমস্যার সমাধান এদের দ্বারা সম্ভব নয়৷ এখন পর্যন্ত অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পে ৩০ জন লোকের মৃত্যু হয়েছে৷ নাগরিকত্ত্বের প্রশ্ণে প্রায় ৭০ জন আত্মহত্যা করেছেন, এরা সকলেই হিন্দু বাঙালী৷ আর বলছেন তারা নাকি হিন্দুদের সরকার৷  অসমে শেষ এন.আর.সির তালিকায় ১৯ লাখের মধ্যে ১২ লাখের বেশী হিন্দু বাঙালীকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ এ পর্যন্ত প্রমাণিত যে এই দলের হিন্দু প্রীতি বলে কিছু নেই, এদের একটাই লক্ষ্য ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে বাঙালী মুক্ত ভারত ভূমি তাদের চাই৷

এই অবস্থায় বাঙালীকে বাঁচতে হলে ভারতের সংবিধানে ৩নং ধারা অনুযায়ী বাঙালী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে শোষণমুক্ত সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল বাঙালীস্তান ঘটন ছাড়া অন্য কোন পথ নেই৷