পরিচয় ও প্রজাতি ঃ তৃণ বর্গের সবচেয়ে বৃহৎ প্রজাতি হচ্ছে বাঁশ৷ জাওল বাঁশ, মুঠি বাঁশ, মূলী বাঁশ, তলতা বাঁশ, পলকা বাঁশ–এরা সবাই অতি দীর্ঘকায় তৃণ ছাড়া আর কিছুই নয়৷ সেই সকল বৃহৎ তৃণকে বাঁশ বলি যাদের ফুল–বীজ হোক না হোক, পাশ থেকে কোঁড় বের হয়, ঝুড়ি তৈরী হয় ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভেতরটা থাকে ফাঁপা৷ সাধারণতঃ যে সকল বাঁশ বেশী দীর্ঘকায় হয় তারা বেশী ফাঁপা৷ যে সকল বাঁশেরা ছোট (এই ধরনের বাঁশ থেকেই লাঠি তৈরী হয়) তারা আকারে অতি ৰৃহৎ হয় না–ওজনে হয় ভারী৷ গাছগুলিও লোহার মত শক্ত৷
মূত্রস্তম্ভ ও মধুমেহ রোগে ঃ বাঁশের পাতা (দু’–আড়াই ছটাক) এক বালতি জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে (খালি পেটে) সেই জল ছেঁকে পান করলে ঙ্মএক কাপ থেকে এক গ্লাস–রোগের পরিস্থিতি অনুযায়ীৰ মূত্রস্তম্ভ ও মধুমেহ (diabetes) রোগের ভাল ঔষধ৷
ন্যাবা বা কমলা রোগে ঃ ন্যাবা বা কমলা রোগের (Jaundice) ৰাড়াৰাড়ি অবস্থাতেও ওই জল (যতটুকু সহ্য হয় ততটুকু) পান করলে সুফল পাওয়া যায়৷
যকৃত রোগ ও মূত্ররোগে ঃ কিছু পরিমাণ বাঁশ পাতা (এক ছটাক) যদি চার গুণ ওজনের জলে সেদ্ধ করা হয় ও সেই বাঁশ পাতা যে ওজনের ছিল সেই ওজন থাকতে থাকতে নাৰিয়ে তার পরে সেই জল ছেঁকে নিয়ে, সেই জলের সঙ্গে সম–পরিমাণ তাজা খেজুরের রস অথবা অর্ধেক পরিমাণ তাজা আখের রস মিশিয়ে ভোরে খালি পেটে পান করা হয়, তাহলে তা যকৃত রোগে ও মূত্র রোগে ঔষধের কাজ করে৷ বাঁশ পাতার মত শিশু পাতাও মূত্রস্তম্ভ, মূত্রাশ্মরী ও মধুমেহ রোগের ঔষধ (ব্যবহার বিধি মূত্রস্তম্ভ ও মধুমেহ রোগের মত)৷
হাঁপানি রোগে ঃ হাঁপানির প্রথম অবস্থায় ওই জল ব্যবহার করলে হাঁপানি সেরে যায়৷ ৰাড়াৰাড়ি অবস্থায় ব্যবহার করলে রোগ প্রশমিত হয় ও পুরো একটি শীত ঋতু ব্যবহার করলে ঋতু শেষে সম্পূর্ণ সেরে যায়৷
অন্যান্য ব্যবহার ঃ গোরুর মৃতবৎসা রোগে বাঁশ পাতা সেদ্ধ করে’ নিয়মিত খাওয়ালেও গোরুর ওই রোগ দূর হয়৷ মানুষের ক্ষেত্রেও এটা ওই রোগের ঔষধ৷
বাঁশের কোঁড় ঃ কলাগাছের পাশ দিয়ে যেমন তেউড় বের হয়, বাঁশ গাছের পাশ দিয়েও তেমনি কোঁড় বের হয়৷ প্রাচীন বাংলার মানুষ অনেক সময় কোঁড়ের মাথায় হাঁড়ি চাপা দিয়ে রাখত৷ কচি কোঁড় হাঁড়ির ভেতর ঘুরপাক খেতে খেতে ৰাড়তে থাকত৷ হাঁড়িটা যখন সেই কোঁড়ে ভরে’ যেত তখন কোঁড়ের মাথা কেটে কোঁড়–ভর্ত্তি হাঁড়িটা নিয়ে আসা হত৷ হাঁড়িটাকে ফাটিয়ে তার ভেতরের গোলাকার প্রাপ্ত কোঁড়কে বাঁধা কপির মত কুচিয়ে তরকারি রান্না করা হত৷ এটি হত বেশ একটি সুস্বাদু খাদ্য৷
‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে