স্নানবিধি
স্নানকে প্রধানতঃ তিনটি স্তরে ভাগ করা (হয়) ঃ– ১) ছেদ্য ধারা, ২) অচ্ছেদ্য ধারা, ৩) অবগাহন৷
১) ছেদ্য ধারা ঃ ছেদ্যধারা হচ্ছে বালতিতে ঘটি ডুবোলুম, ঘটির জল মাথায় ঢাললুম৷ এতে করে স্নান একটানা হচ্ছে না৷ একবার ঘটির জল মাথায় ঢালবার পরে কিছুটা সময় বাদ যাচ্ছে যখন ঘটিটা বালতিতে ডুবোচ্ছি৷ স্নানের মধ্যে এটা অধম স্নান৷ (কূয়োর জলে স্নান করাও এই অধম স্নানের মধ্যেই পড়ে)৷ কূয়োর জলে স্নান করলে স্নানের সময় শরীরের সর্বাংশ এক সঙ্গে ভেজে না৷ মাথায় জল কখনও পড়ছে .....কখনও পড়ছে না৷ শ্বাস–প্রশ্বাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে না৷ সেই জন্যে বয়স একটু বাড়লে অর্থাৎ রক্তের জোর একটু কমলেই হাঁপানীতে আক্রান্ত হয়৷ কূয়োর জলে স্নান করলে শরীরের ঊর্ধ্বাংশ যতটা ভেজে নাভির নিম্নাংশ ততটা ভেজে না৷ যার ফলে হাইড্রোসিল রোগের প্রবণতা দেখা যায়৷
২) অচ্ছেদ্য ধারা – দ্বিতীয়োক্ত স্নানে মাথায় জল পড়ছে, তার ধারায় ছেদ নেই৷ যেমন কলতলায় বসে স্নান করছি ঙ্মমাথাটা নলের তলায় দিয়ে আর নলের জল অবিরত পড়ে চলেছেক্ষ, অথবা ফোয়ারায় স্নান করছি, ঝরণায় স্নান করছি–এরা সবাই অচ্ছেদ্য ধারা৷ এটা মধ্যম শ্রেণীর স্নান৷
৩) অবগাহন–উত্তম শ্রেণীর স্নান হচ্ছে অবগাহন৷ বাথটবে, খাল–বিল–পুকুর–ন যে স্নান যাতে মাথা ডুবিয়ে স্নান করা হয় তাকে বলে অবগাহন৷ অব–গাহ্ ল্যুট ঞ্চ অবগাহন৷
তোমরা যখনই সুযোগ পাবে অবগাহন স্নান করে নেবে৷ আর অবগাহনের সুযোগ না পেলে অচ্ছেদ্যধারায় স্নান করবে, তারও সুযোগ না পেলে তবেই এই ছেদ্য ধারায় স্নান কোরো৷ কারণ ছেদ্য ধারায় স্নানের অনেক গুণই পাওয়া যায় না৷
সবচেয়ে ভাল স্নান বিধি হ’লক্ষ প্রথমে নাভিতে জল দেবে৷ তারপর নাভির নিম্নস্থ জায়গাগুলি সামনের দিক থেকে ভিজিয়ে দেবে৷ তারপর নাভির পেছনে জল দেবে৷ অতঃপর ব্রহ্মরন্ধ্রে (ব্রহ্মতালুতে) এমন ভাবে জল ঢালবে যেন সেই জল পেছনের শিরদাঁড়া দিয়ে নীচের দিকে পড়ে৷ পূর্ণ স্নান করতে গেলে প্রথমে কোমরে, নাভিমূলে ও তন্নিম্ন স্নানে উপরি–উক্ত উপায়ে জল দেবে ও পরে ডুব দিয়ে স্নান করবে৷
যে রোগীর শৈত্য ভাব আছে, সে উষ্ণ জলে ও ঘেরা জায়গায় স্নান করবে৷ রৌদ্রপক্ব জলও ভাল৷ অতিরিক্ত শীতপ্রধান আবহাওয়ায় উষ্ণ জল ব্যবহার করবে৷ যারা অবগাহন স্নান করে না তাদের বসে স্নান করা উচিত, দণ্ডায়মান অবস্থায় স্নান না করাই ভাল৷
মধ্যরাত্রে স্নান নিষেধ৷ কোন মানুষই মধ্যরাত্রের সন্ধ্যায় স্নান করবে না৷ বাকী তিনটা সন্ধ্যার (প্রথম সন্ধ্যা, দ্বিপ্রহর সন্ধ্যা ও সায়ং সন্ধ্যা) মধ্যে যে কোন একটিতে সকলকেই স্নান করতে হবে৷ অবশিষ্ট দু’টির মধ্যে নিজের শারীরিক অবস্থা ও আক্ষহাওয়ার অবস্থা বুঝে যে কোন একটিতে বা দু’টিতে স্নান করতে পারবে৷
মধুমালঞ্চ, ২৬ জুন ১৯৮৮, কলিকাতা মধুকোরক, ২৪ সেপ্ঢেম্বর ১৯৮৯, কলিকাতা আনন্দমার্গের চর্যাচর্য, ৩ খণ্ড
গাত্রোৎসাদন ঃ গাত্র উৎ–সদ্ নিচ্ ল্যুট৷ শব্দটির অর্থ হ’ল গা–মাজা৷ ওপর ওপর সাবান মাখলে তা চামড়ার গভীরে প্রবেশ করে না৷ রোমকূপের ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায়৷ তাই প্রথমে সাধারণ জলে একবার স্নান করে, তারপর সাবান মেখে, তারপর গরম জল দিয়ে মাথা থেকে পা অবধি ভালভাবে ঘষে নিয়ে, তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে সাধারণ জলে স্নান করাই চর্মের পক্ষে সবচেয়ে ভাল৷ যারা তৈল মর্দন করে, তাদের তৈল মর্দন করা উচিত স্নানের শেষে৷ স্নানের পক্ষে (পান করার পক্ষেও) সবচেয়ে হিতকর হচ্ছে গাত্রতাপের সমান তাপযুক্ত জল (water of body temperature)৷ ঙ্মগা মাজার জন্যে গ্রাম বাংলায় অতি সহজে উপলব্ধ ধুঁধুলের ছোবা বা গাত্র–মার্জনী ব্যবহার করা উচিতক্ষ৷
আতপ স্নান বিধি
নিম্নলিখিত প্রক্রিয়া কেবল বিশেষ রোগাবস্থায় করণীয়৷ তাই প্রক্রিয়াটি করতে হলে আচার্যের পরামর্শ নেবে৷ (অবশ্য যে কেউ সর্বাঙ্গে আতপ স্নান করতে পারে–বেশী শীতের দেশের লোকেরা বসন্ত–গ্রীষ্মে তা করেও৷)
আতপস্নান ঃ আতপস্নানের অর্থ রোদ পোহানো৷ সূর্যের তেজ সকল দেশে ও সকল ঋতুতে সমান নয়৷ তবে বর্তমান কালে বিহারের সমতল ভূমিতে গ্রীষ্মকালে সকাল দশটা পর্যন্ত ও শীতকালে দুপুর দু’টো পর্যন্ত আতপস্নান করা যেতে পারে৷
স্নানকালে রোগগ্রস্ত অঙ্গটি রোদে রেখে শরীরের অবশিষ্টাঙ্গ ছায়ায় রাখা উচিত৷ একটানা ১৫/২০ মিনিট রোদে রাখার পরে রোগগ্রস্ত অংশটি উত্তপ্ত হ’য়ে উঠলে সেটিকে ছায়ায় আনা উচিত ও নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত৷
(ক) রোগগ্রস্ত অঙ্গ বাত রোগযুক্ত হ’লে তাতে পরামর্শ মত তৈল ৪/৫ মিনিট উত্তম রূপে মর্দন করে’–
(খ) রোগগ্রস্ত অঙ্গ চর্মরোগগ্রস্ত হ’লে তা’তে নিম তেল ৪/৫ মিনিট মর্দন করে’–
(গ) রোগগ্রস্ত অঙ্গ অন্য কোন ব্যাধিগ্রস্ত হলে তা’তে ভিজে (ঠাণ্ডা) গামছা বা তোয়ালে নিঙড়ে তার দ্বারা মুছে নিয়ে ওই অঙ্গটির উত্তাপ স্বাভাবিক হয়ে যাবার পরে সেটিকে পুনরায় রোদে দেওয়া যেতে পারে ও ওই ভাবে ১৫/২০ মিনিট রোদে রেখে পুনরায় পূর্বলিখিত বিধি অনুযায়ী তেল বা গামছা দ্বারা মর্দন করে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে৷ এইভাবে বার বার রোগ লাগানো ও মর্দন ক্রিয়া করে নেওয়া যেতে পারে৷ মর্দনের শেষ বারটি কিন্তু তৈলাদি কোন কিছু মালিশ না করে চর্মরোগ বাদে সকল রোগের ক্ষেত্রেই ভিজে গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছে নেওয়া বাঞ্ছনীয়৷
সুস্থ ব্যাষ্টি বা রোগী ইচ্ছা করলে সর্বাঙ্গে আতপস্নান করতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে আতপস্নানের পর সমগ্র শরীরটাই ভিজে গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলতে হবে৷
সমগ্র দেহে আতপস্নান করতে হ’লে বিনা বস্ত্রে বা যৎসামান্য বস্ত্র পরিধান করে সূর্যের দিকে পিঠ করে রোদ লাগাতে হবে৷ রোদ যদি শরীরের সামনের দিকে অর্থাৎ মুখ, বুক, পেট প্রভৃতি কোন স্থানে হয় সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশটুকু অনাবৃত রেখে বাকী শরীর আবৃত রাখতে হবে৷ মনে রাখা উচিত, আগুন খাবে পেটে, রৌদ্র খাবে পিঠে–অর্থাৎ প্রয়োজন বোধে যদি কখনও আগুন পোহাও তখন আগুনকে পেটের দিকে রাখতে হবে, পিঠের দিকে নয়৷
বেশী শীতের সময় উত্তর ভারতের মানুষেরা (কশ্মীর) পেটের কাছে একটি পাত্রে জ্বলন্ত কাঠ কয়লা বহন করে থাকেন৷ তাতে শরীর উত্তপ্ত থাকে৷ এই অগ্ণিপাত্রকে ‘বরসী’ বলা হয়৷ মনে রাখা দরকার এই বরসী পেটের দিকে রাখা হয়–পিঠের দিকে নয়৷ কারণ পিঠের দিকে অগ্ণি সেবন করলে তাতে স্নায়বিক বিকার দেখা দিতে পারে৷ আর রোদ পোয়াতে হয় সূর্যকে পিঠের দিকে রেখে৷ (কলিকাতা, ২৯/৬/৮৭)
(আনন্দ মার্গ চর্যাচর্য–৩ খণ্ড)
মৃত্তিকা প্রলেপ ঃ
মৃত্তিকার মধ্যেও অপরিসীম রোগ–নিবারণী শক্তি আছে৷ কাটা, খোঁচা ঘা, ফোঁড়া প্রভৃতিতে যথাযথ ভাবে মৃত্তিকা–প্রলেপ দিতে পারলে রোগ–নিরাময় তথা বিষ–নিষ্কাশনে বিশেষ সাহায্য পাওয়া যায়৷ মৃত্তিকা প্রলেপ দেবার পর চড়চড় বোধ করতে থাকলে মৃত্তিকা শুকিয়ে যাবার ঘণ্ঢা তিনেক পরে অথবা মৃত্তিকা বাসি হয়ে গেলে তা’ ফেলে দিয়ে উত্তম রূপে যে কোন বিষনিরোধক বস্তুর সাহায্যে ক্ষতস্থান ধুয়ে ও ক্ষতস্থানে আতপস্নান করিয়ে পুনরায় নূতন মৃত্তিকা ব্যবহার করতে হবে৷
সুস্থ ব্যষ্টি বা চর্মরোগী স্নানের পূর্বে সর্বাঙ্গে হরিদ্রাবর্ণের মৃত্তিকা প্রলেপ দিয়ে ও তৎপরে মর্দন করে নদী বা পুষ্করিণীতে অবগাহন স্নান করলে অবশ্যই উত্তম ফল পেয়ে থাকে৷ স্নানকালে মধ্যে মধ্যে এই ভাবে মৃত্তিকা মর্দন করা প্রত্যেকের পক্ষে বাঞ্ছনীয়৷ কুষ্ঠ, গরল প্রভৃতি দূষিত ক্ষত রোগে যাঁরা ভুগছেন তাঁদের পক্ষে এই ভাবে মৃত্তিকা মর্দন করণান্তে স্নান প্রত্যহ অবশ্য করণীয়৷
(যৌগিক–চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ)
জলপান বিধি ঃ
‘আপশ্চ বিশ্বভেষজী’ অর্থাৎ জল সর্ব রোগের ওষধ৷ বাস্তবিক পক্ষে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে পারলে এক জলের সাহায্যেই সকল রোগ দূর হতে পারে৷ মনুষ্য দেহের আভ্যন্তরীণ কার্যধারা অব্যাহত রাখবার জন্যে তথা তরলতা রক্ষার জন্যে প্রত্যেকেরই প্রত্যহ যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করা উচিত৷ সুস্থ মানুষ প্রত্যহ ৩/৪ সের, অসুস্থ মানুষ ৪/৫ সের ও চর্ম রোগগ্রস্ত ব্যষ্টি ৫/৬ সের জল পান করতে পারে৷ এই জল রোগ নিবারণে খুব বেশী সাহায্য করে থাকে৷
জলের সঙ্গে অল্প নেবুর রস ও তৎসহ সামান্য পরিমাণে লবণ ব্যবহার করলে আরও ভাল হয়৷ জল পান করা ভাল, কিন্তু এক সঙ্গে অনেকটা জল পান করা ক্ষতিকর, বিশেষ করে হৃদ্রোগীর পক্ষে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর৷
(যৌগিক চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ)
বায়ুসেবন বিধি
বিশুদ্ধ বায়ুর মধ্যেও রোগ দূরীকরণের শক্তি রয়েছে৷ বায়ু সেবন কালে যত দূর সম্ভব পূর্ণভাবে শ্বাস গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়, কারণ তাতে করে ব্যাপকভাবে বায়ু ফুসফুসের মধ্যে প্রবিষ্ট হবার সুযোগ পায় (ভ্রমণ–প্রাণায়াম)৷ বাযুসেবন গাড়ীতে চড়ে না করে পায়ে হেঁটে করা উচিত৷ শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ঘর্ম নির্গত না হলে বুঝতে হবে বায়ুসেবন যথাযথভাবে হয়নি৷
(আনন্দ মার্গ চর্যাচর্য–৩ খণ্ড)
ঠাণ্ডা–গরম সেঁকের পদ্ধতি
চিৎ হয়ে শুয়ে রোগগ্রস্ত স্থানের ওপর বরফের অথবা খুব শীতল জলের সেঁক একটানা ১৫/২০ মিনিট ধরে দিতে হবে৷ স্থানটির চামড়া অত্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পরে ২/১ মিনিট ওই স্থানে ঈষৎ গরম ফ্লানেলের সেঁক দিয়ে স্থানটির চামড়া আবার কিছুটা গরম করে নিতে হবে৷ পুনরায় ১৫/২০ মিনিট ঠাণ্ডা সেঁক দিয়ে আবার অল্প সময়ের জন্যে গরম সেঁক দিতে হবে৷ রাত্রে শয়নের পূর্বেও এইভাবে কয়েকবার ঠাণ্ডা–গরম সেঁক দিতে হবে৷ শেষের বার ঠাণ্ডা সেঁকের পর আর গরম সেঁক দিতে নেই অর্থাৎ যখনই সেঁক বন্ধ করা হবে তখন যেন রোগগ্রস্ত স্থান ঠাণ্ডা থাকে৷
(যৌগিক চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ)
আহারবিধি
আহারের পূর্বে শীতল জলে বা অতি শীতে ঈষৎ উষ্ণ জলে ভাল ভাবে ব্যাপক শৌচক্রিয়া করে নেবে৷ নিয়মটা হ’ল হাত, মুখ, পা, ঘাড় ও উপস্থ ধুয়ে নেওয়া ও চোখ খোলা রেখে এক মুখ জল নিয়ে চক্ষুদ্বয়ের ওপর কম পক্ষে বার (১২) বার জলের ঝাপটা দেওয়া৷
আহারে বসার আগে তোমার আশেপাশে যাঁরা আছেন তাঁদেরও অন্নের ভাগ দেবে৷ তাঁরা আহার করতে না চাইলে খোঁজ নেবে, তাঁদের সঙ্গে উপযুক্ত পরিমাণে আহার্য আছে কি না৷
আহার কালে নিজের সুবিধামত আসনে বসবে৷ একক ভাবে ভোজন করার চেয়ে মিলিতভাবে ভোজন অধিকতর বাঞ্ছনীয়৷ ক্রুদ্ধ বা হীন প্রবৃত্তিগ্রস্ত অবস্থায় আহারে বসবে না৷
অনেকে মিলে একই পাত্রে আহার্য গ্রহণ করার সময় অসুস্থ ব্যষ্টিরা যেন তাতে অংশ গ্রহণ না করে, কারণ তাতে সুস্থ দেহে রোগ বিস্তার হতে পারে৷ সংক্রামক ব্যাধি যাদের মধ্যে নেই তারা এক পাত্রে আহার্য গ্রহণ করলে কোন দোষ নেই৷ বরং তা ভালই দেখায়৷
খাদ্যগ্রহণ দাক্ষিণা নাসা প্রবাহকালে করলে ভাল হয় ও আহারের পরেও কিছুক্ষণ দক্ষিণা নাসা প্রবাহিত হ’তে থাকলে ভাল, কারণ ওই সময় পচনক্রিয়ার সহায়ক গ্রন্থিগুলি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ রস নির্গত হ’তে থাকে৷
অক্ষুধায়, অল্প ক্ষুধায় আহার করা, দিনের দিন গুরুপাক খাদ্য গ্রহণ, সুস্বাদু খাদ্যবস্তু পেয়ে লোভের বশে মাত্রাধিক খাওয়া, আহারের পর বিশ্রাম না নিয়েই কার্যালয়ের দিকে ছোটা, সম্পূর্ণ উদর পূর্ণ করে খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর৷ অর্ধাংশ খাদ্য, একের চার অংশ জল ও একের চার অংশ বায়ু গমনাগমনের জন্যে খালি রাখা উচিত৷
রাত্রিবেলায় আহারান্তে অল্পক্ষণ ভ্রমণ বিশেষ হিতকর৷
ভোজনের পূর্বে জলপান ঃ মানুষ যখন খেতে বসে তখন অনেক সময় তার কণ্ঠ শুষ্ক্ থাকে৷ মুখে সব সময় যথেষ্ট পরিমাণ লালা বা saliva থাকে না৷ এতে শুধু যে পরিপাকেরই অসুবিধা হয় তাই–ই নয়, গলা শুকনো থাকায় অনেক সময় শুকনো খাদ্য গলায় আটকে গিয়ে বিপর্যয় আনতে পারে৷ সেইজন্যে প্রাচীনকালে মানুষ এক হাতে যতটা জল আঁটে ততটা জল মুখে টেনে বা শুষে নিতেন৷ তাই একহাতে যতটা জল আঁটে ততটাকে বলা হয় এক ‘গণ্ডুষ’৷ এতে মুখ ও কণ্ঠনালী ভিজে হয়ে যেত৷ ফলে খাদ্য–বিশেষ করে শুকনো খাদ্য আটকানোর সম্ভাবনা থাকত না৷
এখনও অনেকে খাওয়ার পূর্বে এক ঢোঁক দু’ঢোঁক জল খাওয়ার অভ্যাস বজায় রেখেছেন৷ এটা স্বাস্থ্য সম্মত৷ এটা করলে কোন ক্ষতি তো নেই–ই, লাভই আছে৷ এর সঙ্গে ধর্মাচরণের কোন সম্পর্ক নেই৷ ভোজন চলাকালীন অনেকের অভ্যাস থাকে বার বার জল খাওয়া৷ শুকনো খাবার মুখে আটকে গেলে তা করা যেতে পারে৷ কিন্তু বারে বারে জল খেলে পেটের ভেতরে বিভিন্ন পাচক রস পাতলা হয়ে যায়৷ তাই খাবার অন্ততঃ আধ ঘণ্ঢা পরে তবে পুরো জল পান করা উচিত ক্ষ৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য থেকে গৃহীত)