ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনের মূলতঃ সূত্রপাত হয়েছিল সিপাই বিদ্রোহ থেকে৷ এছাড়াও ছোটোখাটো ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তার আগে হলেও সাংঘাতিকভাবে জনমানসে তা দানা বাঁধেনি৷ তাই তাকে স্বাধীনতার আন্দোলন বলে ধরা হোতো না, যেমন চুয়ার বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, রানী রাসমণির নদীর মাছ ধরা নিয়ে জল কর বিদ্রোহ ইত্যাদি৷ ১৮৫৭ সালে সিপাই বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছিলো কলকাতার ব্যারাকপুর সেনা ছাউনি থেকে লাহোর সেনা ছাউনি পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ভারতের ব্রিটিশ সেনা ছাউনিতে৷ ভারতীয় ব্রিটিশ বিরোধী সেনাদল ব্রিটিশ সেনাদের উপর একই সময়ে গুলি বর্ষনের মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করে৷ এর ফল স্বরূপ পক্ষে বিপক্ষে প্রচুর সেনা হতাহত হয়৷ এর মূল প্রেরণা ছিলেন একজন অর্দ্ধ শিক্ষিত কিন্তু স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী মঙ্গল পাণ্ডে৷ যার নিখুঁত নেতৃত্বে আন্দোলনটি সংঘটিত হয়ে ছিলো৷ ব্রিটিশ আদালতে পাণ্ডের কী ধরণের দণ্ড হয়ে ছিলো মঙ্গল পাণ্ডের ঘটনা তার সাক্ষী৷ অথচ বিজেপি সরকারের গুজরাটি নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজী ভারতের স্বাধীনতার মূল্যায়ণ করতে গিয়ে বলেছেন সিপাই বিদ্রোহে মঙ্গল পান্ডে ও ব্যারাকপুর সেনা ছাউনির কোন সঠিক ইতিহাস নেই৷ ভারতের ইতিহাস নাকি ভুলে ভরা. এটাকে সঠিকভাবে লেখা দরকার৷ ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনে গুজরাটি কত জন ভাইয়ের আত্মত্যাগ আছে তাহা সেই সময়কার ঐতিহাসিকরা ভালো মতো জানেন৷ একটি বৃহৎ আকারে গুজরাটে লবন আন্দোলন হলেও সেই আন্দোলনে গান্ধীজীর ডাকে সাড়া দিয়ে সমাবেশে যুক্ত হয়ে যারা শহিদ হয়েছিল তাদের বেশিরভাগই ছিল মধ্য ও পূর্ব ভারতের জনগণ৷ স্থানীয় গুজরাটি ভাইরা সেই সময় কেন, এখনো শোষণের ধান্দায় অন্যরাজ্যে বেশী ব্যস্ত ছিলেন ও এখনো থাকেন৷ ইতিহাস বলে স্বাধীনতার আন্দোলনে একজনও গুজরাটিকে ব্রিটিশের রোশানলে ফাঁসিতে লটকানো হয়নি৷ শুধু তাই নয়, ভারতের স্বাধীনতার পর ভারতের সঙ্গে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে যে কয়টি যুদ্ধ হয়েছে সেগুলোতে একজন গুজরাটি ভাই শহিদ হয়নি৷ পাশাপাশি দেখুন সেই গুজরাটি ভাইরা আজ ভারতের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বিচারব্যবস্থার থেকে সকল কিছুর দণ্ডমুণ্ডের অধিকর্তা৷ ভারতের স্বাধীনতায় যে জাতিটির নূ্যনতম আত্মত্যাগ নেই ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর তারাই ঠিক করবে কারা কারা ভারতের নাগরিকত্ব পাবে৷ ভারতের তথাকথিত স্বাধীনতা এসেছিল বাঙলা ভাগ করে পূর্ব পাকিস্তান ও পশিচম পাকিস্তান ভাগের মাধ্যমে৷ অথচ এখনো কেউ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে ভারতে প্রবেশ করলে তারা তৎক্ষণাৎ নাগরিক যারা৷ পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাঙলা থেকে এসেছে তাঁদেরকে এখনো ভারতের সরকার নাগরিক হয়ে যায়৷ স্বীকার করতে অপারগ৷ কিন্তু কেন? তার উত্তর স্বাধীনতার যারা মূল্য দেয়নি তারাই বলতে পারবে?
ভারতের স্বাধীনতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে অনেক স্বদেশী ও বিদেশি সাংবাদিক ও ঐতিহাসিকরা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন সিপাই বিদ্রোহ আন্দোলন সংঘটিত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হলেও ব্রিটেনের অধীশ্বরের গদীকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো বাঙলার দামাল ছেলে ক্ষুদিরাম বোস ও প্রফুল্ল চাকির আত্মত্যাগ৷ এরপরের ইতিহাস বাঙলার রক্তক্ষয়ী আন্দোলন৷ তখনো ভারতের অন্যরাজ্যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন মাতৃগর্ভে হলেও বাঙলার ঘরে ঘরে মায়েরা হয়ে উঠেছিল রত্নগর্র্ভ৷ বাঙলার মায়েরা অকাতরে তাদের ছেলে মেয়েদের ব্রিটিশের অস্ত্রের ও ফাঁসি দড়ির সামনে উৎসর্গ করেছিলেন৷ ঠিক সেই মুহূর্তে মহানায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের আহ্বানে কতো বঙ্গ সন্তান স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বলেই ব্রিটিশের হৃদকম্পণ উঠেছিলো৷ আগে পরে তৈরী হয়েছিলো চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ছোট্ট টেগরা, মাষ্টারদা সূর্য সেনের সেনানী প্রীতিলতা, বিনয় বাদল দিনেশ থেকে উড়িষ্যার বুড়িবালামের তীরে বাঘা যতীন সহ আরো কয়েক হাজার দামাল ছেলে মেয়েরা বাঙলার আনাচে কানাচে ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারে ও গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন৷ যাদের আত্মত্যাগে ভারত আজ আংশিকভাবে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও স্বাধিকার লাভ করলেও এখনো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সাত দশক পরেও লাভ করতে পারেনি৷
স্বাধীনতা মানেই অন্ধ ভোটাধিকার নয়, স্বাধীনতা মানে ব্যষ্টিগত ও সমষ্টিগত স্বাধিকার, ভাষা ও সংস্কৃতির পূর্ণ মূল্যায়ন, নূ্যনতম অর্থনৈতিক অধিকার যেমন অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে কর্ম সংস্থানের অধিকার৷
মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বর্তমান সামাজিক আর্থিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে মানব ও সমাজকে সর্বাঙ্গীন উন্নত করতে দিলেন সামাজিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দর্শন যার নাম ‘‘প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব’’ বা ‘‘প্রাউট’’৷ প্রাউটে বলা হয়েছে গ্রাম শহরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুসন্তুলন না থাকলে গ্রাম্য অর্থনীতি যেমন ভেঙ্গে পড়বে তেমনি শহরে জনগণের চাপ বৃদ্ধি পেলে শহরের অর্থনীতিও ভেঙ্গে পড়বে৷ এর থেকে মুক্তি পেতে হলে শ্রী সরকার তার দর্শণের চিন্তাধারায় বলেছেন কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা দিয়ে কৃষি সম্পদকে কুটির শিল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সাবলম্বী করলে বিশ্বের অর্থনীতি ভয়ানক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে৷
তাই তিনি সমগ্র বিশ্বকে শোষণমুক্ত ও ক্ষেত্রে স্বয়ংম্ভর করে গড়ে তুলতে ভারতবর্ষকে ৪৪টি ও বিশ্বকে প্রায় ২৫০টি সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভাগ করেছেন৷ লক্ষ্য আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠা তথা এক সর্বপ্রকার শোষণমুক্ত অবিভক্ত ও আদর্শ মানব সমাজ ঘটন৷
- Log in to post comments