বিশ্বাসঘাতকতা ভারতের ইতিহাসকে বারবার কলঙ্কিত করেছে---
৩২৭ খ্রীঃ পূঃ- ম্যাসিডন রাজ আলেকজান্ডার এর ভারত অভিযানে তক্ষশীলার রাজা অস্তি কেবল বশ্যতা স্বীকারই করেননি, গ্রীক বাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসেন, আর সেনা ও পরামর্শ দিয়ে গ্রীক বাহিনীকে নানাভাবে ভারতীয় ভূখন্ড দখলে সাহায্য করেন৷ বর্র্ণবতীর রাজা শশী গুপ্ত প্রমুখ অনেক রাজাই আলেকজান্ডারকে নানাভাবে সাহায্য করে বশ্যতা স্বীকার করে৷’’ ভারতের ইতিহাসে দেশদ্রোহির এটাই ছিল প্রথম উদাহরণ৷’’ ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার৷
l আরবীয়দের ভারত অভিযান ঃ- আরবদের ভারত অভিযানকালে ইরাক অধিপতি হজ্জাক এর সেনাপতি মহম্মদ -বিন-কাশিম কর্তৃক সিন্ধু-সুলতান-দেবলাদি অঞ্চল দমনকালে স্থানীয় প্রভাবশালী সামন্ত ও তার পরিবার বর্গ কাশিম কে নানাভাবে সাহায্য করে৷ ব্রহ্মনাবাদ আলোর অভিযানে মন্ত্রীদের বিশ্বাসঘাতকতায় রাজা জয়সিংহ পরাজিত হন৷ ফলে পশ্চিমে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আরবদের দখলে আসে৷ বিদেশীদের ভারত অভিযানে এও এক উল্লেখযোগ্য নজীর৷
l ১৫২৬ সালের প্রথম পানিপথের যুদ্ধে বাবরের জয়ের পিছনে দেশীয় রাজা ও আফগান সর্দারদের বিশ্বাসঘাতকতা বড় ভূমিকা নিয়েছিল৷
l ১৭৫৭ সাল ঃ বাঙলা তথা ভারতের বুকে এক ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতার কাল ৷ বাঙলা-বিহার--উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ্দোল্লার সেনাপতি মিরজাফর এর সঙ্গে জগৎশেঠ৷ রায়দুর্লভ৷ উমিচাঁদ, ইয়ার খাঁ লতিফ প্রমুখদের বিশ্বাসঘাতকতায় বণিক ইংরেজ ভারতের বুকে ইংরেজ অপ্রতিহত সাম্রাজ্যবাদী রাজ শক্তিরূপে উঠে আসে৷
এই পর্র্যয়ে ১৭৬৩-৬৪ সালে কাটোয়া, গিরিজা, উদয়নালা, বক্সার যুদ্ধে নবাব মিরকাশেমের পরাজয়ের পিছনেও সেই বিশ্বাসঘাতকতা৷ ব্রিটিশের সামরিক শক্তির দক্ষতা খুব একটা ছিল না৷
l ১৯৪৩ এর মার্চেঃ- নেতাজী ও আজাদহিন্দ ফৌজের সংগ্রাম এ বিজয় না আসার পিছনে অন্যান্য করণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাও একটা কারণ৷
l আধুনিক কালে মিরজাফর-ব্যষ্টির জায়গা নিয়েছে রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শ৷ সর্দার,গোষ্ঠীপতি,রাজা-রাজন্যর জায়গা নিল নেতা-মন্ত্রী৷ ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ তথা বাঙলা ভাগের পিছনে আছে বাঙালী তথা ভারতবাসীর প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা৷ ভারতের ধনী গোষ্ঠীর মদত ও সাহায্যপুষ্ট উকিল-ব্যারিষ্টারদের আখড়া কংগ্রেস গোদি-মন্ত্রীত্বের লোভে খন্ডিত স্বাধীনতাই মেনে নিল৷ কমিউনিষ্টসহ অন্য দল গুলো তাতেই শীলমোহর দিল৷
l স্বাধীনোত্তরকালে বেইমানির চমর মূল্য দিতে হয়েছে বাঙালীকে৷ নানাভাবে বেইমানি আজও চলছে৷ বেইমানি তো এমন একটা শিল্প পর্র্যয়ে পৌঁছে গিয়েছে৷ ১৯৫৫-৫৬ ও তার পরবর্তী কালে অঙ্গরাজ্যগুলি পুনর্গঠিত হলেও বাঙলাকে বাঙলার সাবেক অঞ্চল ফিরিয়ে দেয়া হয়নি কংগ্রেস ও অন্যান্য দলের বঙ্গব্রিগেড এই বেইমানিকে ভারতের অখণ্ডতা জাতীয় স্বার্থবলে ডুগডুগি বাজিয়ে চলেছে৷ পদ, অর্থ, খ্যাত, উপাধি’র লোভে ব্যষ্টিস্বার্থে বাঙলা বাঙালীর সামজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক--- সকল আস্তিত্বিক স্বার্থকে ভারতীয়ত্বের চাপাকলে বিসর্জন দিয়েছে৷ এটা নাকি সর্বভারতীয় অখন্ডতার প্রতীক ! ভারতের জাতীয় কল্যাণ!
l স্বাধীনতা লাভের কিছুকাল পরে শহীদ ক্ষুদিরাম বসু’র প্রস্তরমূর্তি উন্মোচন সভার আমন্ত্রণ অস্বীকার করেছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী৷ এমন নজীর অসংখ্য৷ গান্ধীবাদী নপুংসক কংগ্রেস কোনদিনই মহানায়ক রাসবিহারী বসু,৷ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী ‘মানবেন্দ্র রায়, পৌরুষের বজ্রকৌস্তব আদর্শ মহানায়ক এর মূর্তপ্রতীক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে কোনদিন যোগ্য সম্মান মর্র্যদা দেয়নি, অবদান বা কৃতিত্বকে স্বীকার করেনি৷ আর যাদের সাধনাই ছিল ‘জীবনমৃত্যু পায়ের ভৃত্য’,লক্ষ্য ভারতমাতার শৃঙ্খলমোচন, মানবতার মুক্তি, মানুষের কল্যাণ সেই বিনয় বাদল দীনেশ, প্রফুল্লচাকী, গোপীনাথ, ভকত সিং, পিংলে, কর্র্তর সিং, রাজগুরু, উধম সিং, বাবুরাম, মৌলভি হাফিজ, আবদুল্লা, মহেন্দ্র চৌধুরী, কুশল কানোয়ার, বাঘাযতীন , পাভাকর, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রমুখ সহস্র সহস্র আত্মাহৃত ভারত মাতার বীর সন্তানদের স্মরণ করেনি ওরা৷ কণামাত্র শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেনি ব্রিটিশের ওই উচ্ছিষ্টভোজী দালালেরা৷
এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়, রাজনৈতিক আদর্শ বা দল হিসাবে কমিউনিষ্টদের ‘জন্মই বিশ্বাসঘাতকতা দিয়ে, এদের বিশ্বাস ঘাতকতা মানবতার প্রতি দেশের প্রতি৷ মানুষের স্বার্থ, দেশের স্বার্থ ওদের কাছে বড় নয়, বড় পার্টির স্বার্থ৷ পার্টির ওদের কাছে ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ৷ পার্টি স্বার্থে অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টি কংগ্রেসের বাঁয়া হয়ে কাটিয়ে দিল৷ মুসলিম লীগের মতো ঘোর সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে জোট ও ঘোট করতে ওদের বাধেনি৷ ওই দেশদ্রোহী কমিউনিষ্টরা মাস্টারদা৷ ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ প্রমুখ৷ বিপ্লবীদেরে দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগকে মর্র্যদা দেয়নি ৷ তাঁদের বীর বিপ্লবীদের সম্মানও দেখায়নি৷ যেহেতু তাঁরা কমরেড -কমিউনিষ্ট ছিলেন তাই তারা ওদের চোখে বিপ্লবী নয়, বুর্র্জেয়াদের দালাল৷ সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র গরিবপ্রেম৷
l ১৯৪৭ এর ১৫ই আগষ্টে স্বাধীনতা লাভের প্রথম রাতে শাসনভার গ্রহনের প্রথম জরুরী বিশেষ সভায় জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল---সবকটিই ছিল বাঙলা-বাঙালীর তথা ও ভারতবাসীর সার্বিক স্বার্থের বিরুদ্ধে৷ সিদ্ধান্তগুলি হলঃ (১) পাট শিল্পের বৈদেশিক মুদ্রার লভাংশ বাঙলাকে দেয়া হবে না৷ (২) সুভাষচন্দ্র বসু দেশদ্রোহী, ট্রাইবুনালে তার বিচার হবে৷ (৩) আজাদ হিন্দ সরকারের গচ্ছিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে৷ (৪) নেতাজী সম্পর্কে কোন তথ্য প্রচার করা যাবে না৷ এমন মির্র্জফরী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খন্ডিত বঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের তথা কথিত রূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের কংগ্রেস ও তার সুগ্রীব দোসর কমিউনিষ্টরা ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোন উচ্চবাচ্য করেনি৷ ওই কালো সিদ্ধান্তগুলিকে তখন বাঙলার মানুষকে জানতেও দেয়নি৷ বেমালুম চেপে গিয়েছে৷
l ২০১৭,১৩ই অক্টোবর ঃ- লুকআউট নোটিশের অন্তর্ভুক্ত আসামী-দেশদ্রোহী-বিদেশী, মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং গোপন ডেরার খোঁজে যেতেই বিমলদের পোষা জঙ্গীদের গুলিতে প্রাণ হারাণ তরুণ এস.আই. অভিতাভ মালিক৷ অশান্ত দার্জিলিং এর এমন এক সংকটময় পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত!--- দার্জিলিং থেকে ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের নির্দেশ৷ সংবাদ পেয়ে রাজ্য বিজেপির উদ্বাহু হয়ে কেন্দ্রকে সাধুবাদ জ্ঞাপন৷ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলিপ ঘোষ এক কদম এগিয়ে বলে কিনা প.বাঙলা থেকে সব কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা হোক৷ একে বাঙলার মানুষের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কী কিছু বলা যায়?
ভারতীয় বা বাঙালী হিসাবে এ বড় লজ্জার বিষয় ! ভারতবর্ষ তথা বাঙলার ইতিহাসে ক্রমশ কলঙ্কজনক অধ্যায় বার বার ঘুরে ফিরে আসছে পৃথিবীতে খুব কম দেশেই এমনটা দেখা যায়৷ ইউরোপীয়দের, জাপানীদের দেশপ্রেমও তো অবাক হওয়ার দৃষ্টান্তযোগ্য কথা৷ ভারতীয় বা বাঙালীদের মধ্যে স্বজাতিপ্রীতি পূর্ণমাত্রায় নেই কেন?
এর প্রথম ও প্রধান কারণ বোধ হয়, ভারতীয় প্রাণধর্ম থেকে বিচ্যুতি৷ কী এই প্রাণধর্ম? একই ভৌগোলিক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক আবেষ্টনীর মধ্যে জন্ম, লালন পালন তথা বেড়ে ওঠা জনগোষ্ঠীর অর্জিত গোষ্ঠীগত স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আত্ম প্রকাশ করে৷ জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে গড়ে ওঠা ওই স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোনই হ’ল কোন জাতির প্রাণধর্ম৷ সেই প্রাণধর্ম থেকে সরে আসলেই যত বিপত্তি ৷ বাঙলা তথা ভারতের প্রাণধর্ম হল আত্মভিমুখী ভাবনা, বহুর মধ্যে একের সন্ধান জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে ভারত অবশ্যই অন্তর্মুখী৷ প্রতিটি কাজ ও চিন্তাকে ভারতীয়রা আধ্যাত্মিক সাধনার অঙ্গ মনে করে৷ এই অন্তর্মুখী জীবনধারাই হল ভারতের প্রাণধর্ম৷ বৈয়ষ্টিক তথা সামূহিক জীবনে ওই প্রাণধর্মের অভাবেই নীচ আত্মপ্রবণতা মিরজাফরী মানসিকতা ভারতের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে৷
ভারতবর্ষ বহুজনগোষ্ঠী (এথনিক গ্রুপ) ৷ বহুভাষাভাষী, বহু ধর্মমতের দেশ৷ খাদ্য-পোশাক-আচার-বিচারে কতই না বৈচিত্র্য এদেশে৷ অখন্ড ভারতের মত অখন্ড বাঙলাও একইভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ৷ অখন্ড ভারতে যেমন প্রায় অর্ধশত জনগোষ্ঠী আছে তেমনি সাবেক বাঙলার জাত বাঙালী ও জনজাতি সংখ্যাও বিস্ময় উদ্রেক করে৷ ফলে ইয়ূরোপীয় দেশ বা জাতিগুলোর মত কতিপয় ক্ষেত্র বাদ দিলে আবেগ সমগ্র জনগোষ্ঠীকে একসূত্রে গাঁথতে পারে নি৷ আর্য-অনার্য সংঘাতের যুগে বৌদ্ধ-ব্রাহ্মণ্য সংঘাতের যুগে মুল-ইসলাম-হিন্দুত্বের সংঘাতের যুগে একটা সংহত ভাবনা কাজ করেছিল৷ কিন্তু সংঘাত থেকে যখনই সমন্বয়ের পথে চলতে চলতে শুরু করেছে, তখনই বিরুদ্ধ ভাবাবেগ স্তিমিত হওয়ার ঐক্যসূত্র হারিয়ে গেছে৷ ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী ভাবাবেগে (এন্টিসেন্টিমেন্টে) ভারতীয় জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে৷ সমগ্র ভারতে ইংরাজী ভাষা, এক ব্রিটিশ শাসক ও শোষণ ভারতীয়দের সমস্ত বিভেদ আড়াল করে এক ছাতার তলার দাঁড় করিয়ে দেয়৷--- যা কিছুটা মৌর্যযুগ, গুপ্তযুগ, সুলতানি-মোঘল যুগ গড়া অন্য সময় দেখা যায়নি৷ আর বাঙলায় গৌড়েশ্বর শশাঙ্কের আমল, পাল যুগ সেনযুগ ও হুসেন শাহের আমল ছাড়া অখণ্ড বাঙলার চেতনা দেখা যায় নি৷ ইংরেজ আমলে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নোতুন করে বাঙালী জাগরণ ঘটলেও ব্রিটিশের বিভেদ নীতিতে তা পূর্ণ মাত্রা পায়নি৷ ঐক্যবদ্ধ সংহত বাঙালী চেতনার অভাব যেমন বাঙালী লুপ্তপ্রায় যে গোষ্ঠীতে পরিণত হতে চলেছে৷ তেমনি সামগ্রিক ভাবে ভারতবর্ষের দৃঢ় জাতীয় সংহতি গড়ে ওঠেনি৷ এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় যে মানুষের মনের ভাবাবেগ (সেন্টিমেন্ট) এমন একটা বিষয়--- যা মানুষকে উদ্বেলিত-উচ্ছ্বাসিত-উত্তেজিত-উন্মত্ত করে আবার সংহত ঐক্যবদ্ধ ও করে শক্তিশালী বিরোধী ভাবাবেগ (এন্টি সেন্টিমেন্ট) একটি জনগোষ্ঠীকে জাতিতে পরিণত করে৷ দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়৷ আবার ওই সেন্টিমেন্টরই অভাবে ওই জনগোষ্ঠী জাতি থাকে না, নানাভাবে ছিন্ন--বিচ্ছিন্ন হয়ে যার৷ ‘‘ন্যাশন ইজ’’ নাথিং বাট্ এ সেন্টিমেন্ট৷ ‘দেশপ্রেমিকের প্রতি---শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন৷ ভারতবর্ষে অখন্ড ভারতীয় জাতিসত্তার অন্তরে চুয়াল্লিশটি ভারতীয় খণ্ড জাতিসত্তা আছে৷ চুয়াল্লিশটা জনগোষ্ঠী বা খন্ডজাতি এথনিক গ্রুপ)৷ ব্রিটিশ ভারত ছাড়ার পর দৃঢ় এন্টি--সেন্টিমেন্টের অভাবে ভারতীয় জাতীয় সংহতি যেমন বিপন্ন, তেমনি বাঙালী-জাতিসত্তা সংহত রূপ পায় নি৷ কোনভাবেই যাতে অখন্ড বাঙালী জাতিসত্তার আবেগ দানা না বাঁধে-তারজন্য ধূর্ত সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ কখনও চেষ্টা করেনি৷ স্বাধীনতোত্তর কালে দিল্লী ব্রিটিশেরই পদাঙ্ক অনুসরণ তার শূণ্যস্থান পূর্ণ করেছে৷ অর্থাৎ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জায়গায় এসেছে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ আর্থ সমাজ ভাষা-সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে এন্টি-হিন্দিসাম্রাজ্যবাদ৷ সেন্টিমেন্টই জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে আপামর বাঙলাকে দৃঢ় ঐক্যসূত্রে বাঁধতে পারে৷ অখণ্ড বাঙালী জাতীয় চেতনা গড়ে উঠতে পারে৷ তবে কেবল বাঙলা-বাঙালীর ক্ষেত্রেই নয়, কথাটা ভারতের চুয়াল্লিশটা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেই প্রয়োজ্য৷ অখন্ড ভারতীয় জাতীয়তাবাদে ও ভারতীয় জনগোষ্ঠীর গুলির ক্ষেত্রে শক্তিশালী এন্টিসেন্টিমেন্টের অভাবে অনৈক্যেরকথাগুলিতে ইতিহাসের কলঙ্কময় অধ্যায়ের বারবার ঘুরে ফিরে আসছে৷
একাত্মবোধটা মজবুত থাকলে বেইমানি বা আত্মপরতার জন্ম হল হয়না৷ একাত্মবোধ বা সংহত ভাবনার অনেক পথের কথা বলা হলেও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ভাবনার কোন তুলনা হয় না৷ এটার তাৎপর্যগত দিক হল প্রতিটি সত্তার (ইউনিটের ), গোষ্ঠীর , ব্যষ্টির বা জাতির সমান মান্যতা-গুরুত্ব-মর্যাদা দেওয়া৷ এরই দার্শনিক বা তাত্ত্বিক অভিপ্রকাশ হল ‘‘ আঞ্চলিকতার পথ ধরে বিশ্বের আঙিনায় ‘Regional in approch, অর্থ arsal in out look’’ প্রধানজাতি বা খন্ডজাতির ঐক্যবদ্ধতায় অবশ্যই এটা তত্ত্বে ও প্রয়োগে অবশ্য পালনীয়৷ তবে আধ্যাত্মিক জীবনবোধ না থাকলে এটা গড়ে ওঠে না৷ এজন্য ব্যষ্টি ও সমষ্টিগত জীবনে আধ্যাত্মিকতার ব্যাপক প্রচার প্রসার ও অনুশীলনের দরকার৷ তবে বাক সর্বস্বতায় তো কোন কাজ হবে না৷ এর জন্য চাই সর্বানুস্যুত পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শণ ও তার ব্যবহারিক প্রয়োগ৷ আবার এও তো জীবন সত্য খালি পেটে ধর্ম হয় না৷ শোষণ, বঞ্চনা, নিরাপত্তা জনিত আতঙ্ক থাকলে তো মানুষ সাম্য জীবনপথ থেকে বিচ্যুত হতেই পারে৷ সামাজিক-ভাষা-সাংস্কৃতিক -অর্থনৈতিক শোষণ দমন অবদমন প্রদর্শন থাকলে আদর্শের বুলি কাণে ঢুকবে না৷ তাই একটা শোষণমুক্ত পরিবেশে জীবনের নিশ্চয় নিরাপত্তা তো চাই৷ সেই পরিবেশে অধ্যাত্ম জীবনবাদই মানুষকে সম্মান দেবে কলঙ্কমুক্ত আলোকজ্বল মহিমাময় জাতীয় জীবনের৷ কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? কলঙ্ক মোচনের দায় কার? এ দায় তোমার, আমার, একাল-ভাবীকাল সকলের৷
- Log in to post comments