ভারতের সমাজগুলিকে  রক্ষার দায় যৌথভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির

লেখক
প্রভাত খাঁ

আজ কেন্দ্রে যে দল শাসনে আছে তাদের হিসাবে ৯টি রাজ্যে বর্তমানে হিন্দুরা নাকি সংখ্যা লঘু হয়ে পড়েছে৷ তাই তাদের উন্নয়নের জন্য সংখ্যা লঘু তকমা দিয়ে বিশেষ সাহায্য  দেবার প্রয়োজন৷ কিন্তু শাসকদের  স্মরণে রাখতে হবে একটি  কথা সংখ্যা লঘু হলেই যে তারা অনগ্রসর হয়ে গেল তা তো নয়৷ আর সংখ্যা গরিষ্ঠ হলেও যে তারা সব দিক থেকে উন্নত ও অগ্রসর হয়ে গেল সেটাও বিচারে ঠিক নয়৷ তাই নিরপেক্ষভাবে সরকারকে বিবেচনা করতেই হবে৷ সরকারের মতে পঞ্জাব, অরুণাচল প্রদেশস মিজোরাম, মেঘালয়,নাগাল্যাণ্ড, লাক্ষাদ্বীপ, জন্মুকশ্মীর,ল্যাদাক ও মনিপুর৷ অত্যন্ত লজ্জার কথা তা হলো অখণ্ড ভারতবর্ষকে যখন দ্বিজাতিতত্ত্বে ভাগ করা হয় তখন কিন্তু তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী নেতারা একবারও ভাবেননি এই ভেবে দেশকে টুকরো টুকরো  করলে কি  অসুবিধা হবে৷ দেশভাগের পর দেশী সরকার আইন করলো এদেশের জন্য লোকসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে হিন্দুরা বহু বিবাহ করতে পারবে না বিশেষ করে ব্যাপক অর্থে অমুসলমানগণ৷ অন্যদিকে এদেশের মুসলমানগণ সরিয়তী মতে  বহু বিবাহ করতে পারে৷ এতে হলো কি  না তাদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে গেল৷ কিন্তু এদেশের সরকার কিন্তু দেশের লোকসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সকল নাগরিকগদের যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইন মানতে হবে  সেটা করলো না৷ কারণ সেটা সেই একটা বোটে তাদের টানতে৷ ফলে দেশের যে কতোবড়ো বিপদ হলো সেদিকে নজর দেওয়াই হলো না৷ অন্যদিকে পাকিস্তান করে মুসলমান শাসকগণ নির্বিচারে হিন্দু ও অমুসলমানদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে লোকসংখ্যা কমাতে দেশ থেকে তাদের তাড়িয়ে সব কিছু কেড়ে নিয়ে নিজেরা কব্জায় করলো৷

এই অবিবেচিত সিদ্ধান্তটাই হলো এই দেশের বড়ো অভিশাপ! শুধু তাই নয় কেন্দ্রের হাতে অদ্যাবধি কোন সরাসরি আইন্‌ নেই এটা ঠিক করার৷ তবে সংখ্যা লঘু অধিকার রক্ষা কমিশন আইনে এই সংক্রান্ত বিধান আছে৷ মূলতঃ সংখ্যা লঘু ঘোষণা কোন আইন নেই৷

এ দিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ববর্মা নয়টি জেলাকে মুসলীম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছেন৷ আর ঐ নয়টি জেলায় হিন্দুরা সংখ্যা লঘিষ্ঠ৷ এবার ভাবতে হবে প্রকৃত আর্থিক দিক থেকে  দুর্বল যারা তাদের কথা৷ সেখানে কে হিন্দু আর কে মুসলমান বা অন্যধর্মমতের  সেটা মুখ্য নয়৷ স্মরণে রাখতে হবে শাসকদের মানবতাবাদী হিসাবে সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে কারা কারা দুর্বল৷

এবার কিছু  আলোচনা করবো এই বহুভাষাভাষী ভারতে স্মরণাতীত কাল থেকে যে সমাজগুলিতে ভারতীয়রা বাস করে আসছে তাদের অবস্থাটা কেমন৷ মনে রাখতে হবে ধর্মমতের চেয়ে সমাজ ঘটনে মাতৃদুগ্দ সম মাতৃভাষার, কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রভাবটি বেশী পড়ে৷ ধর্মমত আলাদা হলেও ঐগুলি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বাঙালী সমাজে ধর্মমত আলাদা হলেও হিন্দুবাঙালীও মুসলমান বাঙালী সেই একই সমাজ, বাঙালী সমাজে তারা পরমাত্মীয়ের মতই৷ পোষাক পরিচ্ছদ, সামাজিক উৎসব এক হয়তো ধর্মমতের ক্ষেত্রে আহারের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন, তবে কেউই বিরোধিতা করে না সে ব্যাপারে৷

সমাজ সম্বন্ধে মহান দার্শনিক শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন মানুষের সার্বিক কল্যাণের দিকটার৷ নানা কারণে সমাজগুলি আজ নড়বড়ে৷ তিনি এই ভারতের বুকে ৪৪টি সমাজের সার্বিক কল্যাণের দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন ও সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে নব্যমানবতাবাদীদের্ নির্দেশ দিয়ে গেছেন৷ সমাজগুলির মধ্যে বাঙালী সমাজ বর্তমানে স্বার্থন্বেষী শাসকদের ষড়যন্ত্রে একেবারে টুকরো টুকরো হয়ে প্রায় ধবংস প্রাপ্ত হয়েছে৷ একে রক্ষা করাটা হিন্দু মুসলমান বাঙালী নির্বিশেষে সকলেরই পবিত্র দায়িত্ব ও কর্ত্তব্য তাঁর মতে৷ খোদ ইউ.এন.ও বাংলাভাষাকে বিশ্বের মধুরতম ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন৷ কিছু আলোচনায় আমি দক্ষিণ ভারতের এরোভের মালায়ালি বা মালয়োলাম উপজাতি সম্প্রদায় এর সম্বন্ধে৷

মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় এমকে স্টালিনের কাছে হাজির হন তিরুপুর সাংসদ কে সুববারায়ান মালায়ালি বা মালয়ালাম সমাজের এরোভ জেলার উপজাতি সম্প্রদায়কে তপশিলী  উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত করার জন্য৷ সাংসদ বলেন এরোভ জেলার পার্বত্য এলাকায় প্রায় ২৫০০০ মানুষ মালায়ালাম উপজাতির মানুস বাস করে৷ এরা আদার কাস্ট হিসাবে আছে৷ কিন্তু ধর্মাপুরী, ভেল্লোর, তিরুভান্নামালাই, পুদুকাট্টি সালেম, নামকুলে, তিল্লপুরম,কুড্ডালোর, তিরুচি ও পেরামবলুরে এই সম্প্রদায় এর৷ তারা  রাজ্যের উপজাতি হিসাবে তালিকাভুক্ত৷ কিন্তু এরোড জেলার মালায়ালাম বা মালায়ালিরা নয়৷ তারা নীলগিরি ট্রাইবাল রিসার্চ সেন্টার এদের উপজাতি হিসাবে ঘোষণা করার সুপারিশ করে৷

উপজাতি তালিকায় ২৫ নম্বরে এই উপজাতির নাম আছে৷ এরোও জেলার উপজাতিরা বাদ পড়েছে৷ সাংসদকে সুববারায়ন সংসদে এটি আলোচনা করেন৷ উপজাতি বিভাগের মন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডা ও সম্মতি দেন৷ কিন্তু কিছু হয়নি৷